সারা দেশে নির্বাচন নিয়ে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। এরই মধ্যে আসন্ন পৌর নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছে বিএনপি। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি, পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে চাইলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে তার স্থান ও সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিধান এবং সারাদেশে তাদের দশজন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়ার প্রেক্ষাপটে তাদের ভেতর হতাশা ভর করেছে। যেসব পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন তার অধিকাংশ স্থানে দলের বিকল্প প্রার্থী নেই। জামায়াতেরও প্রার্থী নেই। কাকে সমর্থন দিবে তা বুঝে উঠতে পারছেন না। এছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কয়েক স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মেয়র করার প্রক্রিয়ায় বিএনপির ভেতর ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।
গত রবিবার দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, “২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন যেমন হয়েছে ঠিক তেমনই পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা নির্বাচন নিয়ে গভীর সংশয়ে আছি। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের যে বিধি দিয়েছে তাতে নিরপেক্ষতার চিহ্নমাত্র নেই। গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিএনপি পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের আচার-আচরণ অতীতের মতোই একচোখা। তিনি বলেন, ইসির পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি।”
হাফিজ উদ্দিন বলেন, “ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার পর সরকারের সাহস বেড়ে গেছে। তাই সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেমন হয়েছে ঠিক তেমনি পৌর নির্বাচনও করতে যাচ্ছে।”
অন্যদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, “নির্বাচন কমিশন যে পরিস্থিতি তৈরি করছে তাতে তাদের নিরপেক্ষতা শেষ হয়ে গেছে। এখন সামনে নির্বাচনে যা করার তা পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা করবে। আর পুলিশ যদি না করে তাহলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) করবে।”
অপরদিকে বিএনপির নির্বাচন সমন্বয়ক ও প্রার্থী প্রত্যায়নকারী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “নির্বাচন কমিশন এখন তাদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। তারা সরকারি দলের হয়ে কাজ করছে। আমাদের কোনো কথাই তারা রাখেনি। বিএনপির অনেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। নানা অজুহাতে রিটার্নিং অফিসাররা তাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেননি। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করেনি নির্বাচন কমিশন।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, “বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। যারা নির্বাচন করবেন, তারা প্রকাশ্যে বের হতে পারছেন না। অনেক স্থানে মনোনয়নপত্র জমা দিতেও বাধা দেয়া হয়।”
দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “বিরোধী দলের প্রার্থীদের ঘায়েল করার জন্য পৌরসভা নির্বাচনে প্রচারণার ক্ষেত্রে নতুন শর্ত দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে চাইলে প্রস্তাবিত সভার কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে তার স্থান ও সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে, যাতে ওই স্থানে চলাচল ও আইন-শৃংখলা রক্ষার জন্য পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।’ নতুন এ শর্তে পুলিশকে আরও ক্ষমতাবান করা হয়েছে। পুলিশকে আগেভাগে জানানোর ফলে তাদের হয়রানি করতে সুবিধা হবে। এছাড়া ওই সভাগুলোতে নিরাপত্তার নামে পুলিশ সদস্যরা হাজির থাকলে বিএনপি-জামায়াতের যেসব নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নামে মামলা রয়েছে তারা গ্রেফতারের ভয়ে অংশ নেবেন না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইউসুফ আলি বলেন, “তারা যদি পথ সভা –সমাবেশে যদি কোন ধরনের নাশকতা না করে তাহলে তাদের ভয় পাওয়া বা হতাশ হবেটা কেন । মূল কথা হচ্ছে তারা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সবসময় থাকে। তারা শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে নির্বাচন বয়কট করবে বলে মনে হচ্ছে।”
সানবিডি/ঢাকা/রাআ