শুল্কমুক্ত সুবিধা আদৌ চীনে রফতানি বাড়াবে কি?
:: আপডেট: ২০২০-০৭-১২ ২০:১২:২০
চীন ১৬ জুন নিজেদের ট্যারিফ লাইনের ৯৭ শতাংশ পণ্যে বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সে সংক্রান্ত প্রেসনোট জারির পরপরই দেশের প্রায় সব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সেসব প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, চীন বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ৫,১৬১টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে যাচ্ছে এবং এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা আপটা চুক্তির আওতায় বিদ্যমান শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ ৮,২৫৬টি পণ্যে বাংলাদেশ রফতানি সুবিধা পাবে; যা ১ জুলাই ২০২০ থেকে কার্যকর হবে।
প্রতিবেদনগুলোর বার্তায় এমন ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- ঘোষিত শুল্ক সুবিধার প্রভাবে চীনে আমাদের রফতানি অচিরেই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। বিপুল জনগোষ্ঠী এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে রফতানি বৃদ্ধি এ দেশের সব মানুষের চাওয়া। তবে সে প্রত্যাশা বাস্তবতার নিরিখেই পর্যালোচনা করা সঙ্গত।
শুল্কমুক্ত সুবিধা সম্প্রসারণের ফলে চীনে বাংলাদেশের রফতানি আদৌ বাড়বে কি না, সেটাই আগে ভেবে দেখা দরকার। তারপর সেখানে রফতানি বাড়াতে কী রকম পলিসির ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত, তা বিবেচনা করাই হবে সঠিক কৌশল।
১৯৯৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তার সব সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে (এলডিসি) কোটামুক্ত ও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা প্রদানের তাগিদ দেয়া হয়। ২০০৫ সালে ডব্লিউটিওর হংকং সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত দেশ ইতোমধ্যে সব স্বল্পোন্নত দেশকে অধিকাংশ পণ্যে কোটামুক্ত ও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র; যারা গার্মেন্টস ও লেদার প্রডাক্টস বাদে অন্যান্য পণ্যে সে সুবিধা দিয়েছে।
ডব্লিউটিওর বিভিন্ন সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও স্পিরিটের আলোকে অগ্রসরমান উন্নয়নশীল দেশগুলো যেমন: ভারত, চীন, কোরিয়া, চিলি, থাইল্যান্ডসহ নানা দেশ এ সুবিধা কার্যকর করেছে। এ সুবিধা একতরফা অর্থাৎ এ সুবিধার বিনিময়ে শুল্ক সুবিধা গ্রহণকারী স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে কোনো ছাড় দেয়ার আবশ্যকতা নেই। চীন পর্যায়ক্রমে সে সুবিধা বাস্তবায়ন করে।
প্রথমে ২০১০ সালে দেশটি যে প্যাকেজ ঘোষণা করে, তাতে মোট ট্যারিফ লাইনের আনুমানিক ৬১ শতাংশের মতো পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ তখন সে সুবিধা গ্রহণ করে। এ সুবিধার ভিত্তিতে বাংলাদেশের ৫,০৫৪টি পণ্য ১ জুলাই ২০১০ থেকে চীনে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা ভোগ করে আসছে। তবে এরূপ সুবিধার আওতায় চীনে রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে, বাংলাদেশের এমন সব পণ্য আওতাভুক্ত হয়নি।
যাহোক, পরবর্তী সময়ে চীন ২০১৩ সালে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য পূর্বঘোষিত প্যাকেজে পণ্যের কাভারেজ ৬১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯৭ শতাংশ করে। তবে সেখানে একটা শর্ত জুড়ে দেয়া হয়- সুবিধা গ্রহণকারী দেশকে Letter of Exchange স্বাক্ষর করতে হবে। যেসব স্বল্পোন্নত দেশ তা স্বাক্ষর করে, তাদের ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা দেয়া হয়। বাংলাদেশ Letter of Exchange স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকে।
কারণ, সেটি স্বাক্ষর করার মানে হল, সুবিধা গ্রহণকারী দেশ যদি আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ইতোমধ্যে চীন থেকে কোনো শুল্ক সুবিধা পেয়ে থাকে, তবে তা সারেন্ডার করতে হবে। অর্থাৎ চীন কর্তৃক একতরফাভাবে প্রাপ্ত সুবিধা এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় প্রাপ্ত সুবিধা দুটির মধ্য থেকে যে কোনো একটিকে গ্রহণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, চীন ও বাংলাদেশ উভয় দেশই আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের (আপটা) সদস্য এবং আপটার আওতায় বিভিন্ন পণ্য রফতানিতে একে অপরকে কিছুটা শুল্কছাড় দিয়ে থাকে।
২০০৬ সালে শুরু হওয়া আপটা নেগোশিয়েশনের ৪র্থ রাউন্ড আলোচনা ২০১৭ সালে সম্পন্ন হয় এবং সেখানে প্রতিটি সদস্য দেশ পূর্বের তুলনায় বেশি পণ্যে শুল্কছাড় দেয়। উল্লেখ্য, আপটা একটি প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেডিং অ্যারেঞ্জমেন্ট (পিটিএ) যেখানে সদস্য দেশগুলো অন্যদের জন্য ট্যারিফ লাইনের কোনো নির্ধারিত শতাংশের পণ্যে ৫ শতাংশ থেকে শতভাগ পর্যন্ত শুল্কছাড় ঘোষণা করে থাকে।
আপটার ৪র্থ রাউন্ডে চীন General Concessions-এর আওতায় সব সদস্য দেশের জন্য ৮ ডিজিট লেভেলে ২,১৯১টি পণ্যে এবং স্বল্পোন্নত দেশদ্বয়ের (বাংলাদেশ ও লাওস) জন্য Special Concessions-এর আওতায় মোট ১৮১টি পণ্যে শুল্কছাড় দেয়, যা কার্যকর হয়েছে ১ জুলাই ২০১৮ থেকে। লক্ষণীয়, Special Concessions-এর আওতায় দেয়া শুল্কছাড়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ পণ্যে শতভাগ ছাড় দেয়া হয়েছে; যেখানে General Concessions-এর আওতায় দেয়া অধিকাংশ পণ্যে শুল্কছাড় ৩৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
তাছাড়া, লেদার এবং গার্মেন্টস সেক্টরের বেশকিছু পণ্য Special Concession-এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আপটার আওতায় ৪র্থ রাউন্ড নেগোসিয়েশনে চীনের দেয়া উভয় ধরনের Concessions ভোগ করে থাকে।
বাংলাদেশ থেকে চীনে যেসব পণ্য রফতানি হয়ে থাকে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পণ্যাদি হল- পাট ও পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, তৈলবীজ, কাঁকড়া ও ইলফিশ এবং কটন ওয়েস্ট (Cotton Waste)। এসব পণ্যের অধিকাংশ চীনের দেয়া শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে ২০১০ সাল থেকে। আবার বেশকিছু পণ্যে হ্রাসকৃত শুল্ক সুবিধা আপটার ৩য় রাউন্ড নেগোশিয়েশনের ফলে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা পেয়ে আসছেন।
সর্বশেষ আপটার ৪র্থ রাউন্ডের মাধ্যমে ১ জুলাই ২০১৮ সাল থেকে মোট ২,৩৭২টি পণ্যে চীনের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে শুল্কছাড়ের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। তারপরও লক্ষণীয়- চীনে বাংলাদেশের রফতানি তেমন বাড়ছে না বললেই চলে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭৯১ মিলিয়ন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮০৮ মিলিয়ন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯৪৯ মিলিয়ন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৯৫ মিলিয়ন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮৩১ মিলিয়ন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মাত্র ৫৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য বাংলাদেশ চীনে রফতানি করতে সক্ষম হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি ধসের তা-ও একটা ব্যাখ্যা দেয়া যায়।
যেহেতু করোনার কারণে বেশ কয়েক মাস চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ ছিল। অন্য বছরগুলোয় রফতানি প্রবৃদ্ধির ধীরগতি বা অধোগতির কোনো ব্যাখ্যা সহজে মিলে না। অথচ একই সময়ে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে আমাদের রফতানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সহজেই অনুমান করা যায়, রফতানির জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার ভূমিকা থাকলেও তা মুখ্য নয়; বরং প্রতিযোগিতার সক্ষমতাসহ অন্যান্য উপাদানই মূল উপজীব্য।
চীনে বাংলাদেশের রফতানি ধারা পর্যালোচনায় সহজেই স্পষ্ট হয়, সেখানে অধিকাংশ পণ্যের রফতানির পরিমাণ খুব বেশি ওঠানামা করে। চীনের বাজারে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রায় সব পণ্যের রফতানি কমেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা অনুমেয়; কিন্তু বর্তমান বছর বাদ দিলেও বিগত বছরগুলোয় লক্ষ করা যায়, সেখানে রফতানির কোনো সুনির্দিষ্ট ধারা বা ট্রেন্ড খুঁজে পাওয়া যায় না।
কোনো পণ্য হয়তো এক বছর ভালো রফতানি হল; পরের বছরই দেখা গেল সে পণ্যের রফতানি অনেক কমে গেছে কিংবা আদৌ রফতানি হয়নি। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে তৈরি পোশাক; যার রফতানি ধীরে হলেও ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।
এটি সত্য, ১ জুলাই ২০২০-এর পূর্বে চীনে বাংলাদেশের সব পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা ছিল না। ২০১৩ সালে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ট্যারিফ লাইনের ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত পণ্যে শুল্কমুক্ত যে সুবিধা প্রদান করে, তাতে লেটার অব এক্সচেঞ্জ স্বাক্ষরের শর্ত থাকা এবং আপটার সুবিধা প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশ সম্মত না হওয়ার কারণে আমাদের সব সম্ভাবনাময় পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ছিল না। সে কারণে বাংলাদেশ বিশেষ ব্যবস্থায় ১৭টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে চীনকে অনুরোধ করে।
৬ ডিজিট লেভেলে সে ১৭টি পণ্যের মধ্যে ছিল সিল্ক ও ম্যানমেড ফাইবারের তৈরি পুরুষ ও মহিলাদের আন্ডারপ্যান্টস ও ব্রিফ (এইচএস কোড ৬১০৭১২, ৬১০৮২৯), সুইমওয়্যার ও ট্র্যাকসুইটস (৬১১২৪১, ৬২১১১১), কেমিক্যাল ফাইবার্স (৬১০৭১২), প্যাকিং ম্যাটেরিয়াল হিসেবে পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের তৈরি বস্তা ও ব্যাগ (৬৩০৫৩৩), ডাস্টার কাপড় (৬৩০৭১০), রাবার, কাপড় ও প্লাস্টিকের তৈরি জুতার সোল সংক্রান্ত পণ্যাদি (৬৪০২৯১, ৬৪০৪১৯, ৬৪০৪২০, ৬৪০৬১০), লিড এসিড ব্যাটারি (৮৫০৭১০, ৮৫০৭২০), চামড়ার তৈরি ক্লদিং এক্সেসরিজ পণ্য (৪২০৩২৯), প্যাকিং কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিকস (৩৯২৩২১), তামাক শলাকা (২৪০১২০) এবং ভুট্টার সেরিয়াল (১০০৫৯০)।
প্রত্যুত্তরে চীন জানায়, প্রস্তাবিত ১৭টি পণ্যের মধ্যে ১টি (ভুট্টা) স্বল্পোন্নত দেশের জন্য দেয়া প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত নয়। বাকি ১৬টি পণ্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দেয়া শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। ফলে চীনের সাম্প্রতিক ঘোষণার ফলে বাংলাদেশের চাওয়া সেই ১৭টি পণ্যের মধ্যে ১৬টি পণ্য এখন থেকে শুল্কমুক্তভাবে সে দেশে রফতানি করা যাবে। আসলে ওই প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত যে কোনো পণ্য বাংলাদেশ থেকে চীনে রফতানিতে আর শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের কাছে যে ১৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল, তার রফতানি অবস্থান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- বিগত ৩ বছরে অন্তত ৫টি পণ্যে (চামড়ার তৈরি ক্লদিং এক্সেসরিজ, প্যাকিং কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক, তামাক শলাকা, ভুট্টার সেরিয়াল, ব্যাটারি) কোনো ধরনের রফতানি হয়নি। বাকি পণ্যে কোনো কোনো বছরে সামান্য রফতানি হয়েছে।
বর্তমানে যেসব পণ্যের কোনো রফতানি নেই বা থাকলেও তা একেবারেই অনুল্লেখ্য, তাতে শুল্ক সুবিধা পাওয়ার পরে রফতানি হঠাৎ বেড়ে যাবে- এমন ধারণা কল্পনাপ্রসূত ছাড়া আর কিছু নয়। তাই নিঃসন্দেহে এ ধারণা করা যায়, চীনের সম্প্রতি ঘোষিত শুল্ক সুবিধার ফলে বাংলাদেশের রফতানি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যদি বাড়ে, তবে তা অন্য কারণে বাড়বে।
আমরা সবাই জানি, চীনকে সারা বিশ্বের ফ্যাক্টরি বলা হয়ে থাকে। চীনের উৎপাদিত পণ্যের মানের বিচারে দাম অতুলনীয়ভাবে কম; যার ফলে সেখানে উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য অনেক পণ্যই চীনে উৎপাদিত হয়। চীন ফুটওয়্যার ও তৈরি পোশাকসহ অজস্র পণ্যের শীর্ষস্থানীয় রফতানিকারক দেশ।
বাংলাদেশের অনেক রফতানি পণ্য অদ্যাবধি চীন তৈরি করে থাকে। তাই যতক্ষণ না সেসব পণ্য তৈরিতে চীনের বিদ্যমান প্রাইস কম্পিটিটিভনেস বহাল থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে চীনের বাজারে সুবিধা করা কঠিন। আশার কথা হচ্ছে, চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে কম খরচে পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা কমছে। যে কারণে তাদের অনেক ফ্যাক্টরি ক্রমেই অন্যান্য দেশে স্থানান্তর (রিলোকেট) হচ্ছে, যেখানে সস্তা শ্রম ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।
সেই বাস্তবতা উপলব্ধি করে তার আলোকে আমাদের পলিসি ঠিক করতে হবে। চীন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আনয়ন করা হতে পারে সে পলিসির কেন্দ্রবিন্দু। চীনের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে তারা একদিকে যেমন সস্তায় শ্রমিক পাবে, তেমনি উৎপাদিত পণ্য আবার বিনা শুল্কে চীনে আমদানি করতে পারবে। তার মাধ্যমে দেশে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে আমাদের রফতানি বাড়বে এবং একইসঙ্গে প্রযুক্তি হস্তান্তর ঘটবে।
চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণে উপযুক্ত ভৌত ও অভৌত অবকাঠামো গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। ইপিজেড এবং বিশেষ ইকোনমিক জোনের বাইরেও যাতে চীনের উদ্যোক্তারা তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপন করতে পারেন, সে বিষয়ে সরকার এবং বিজিএমইএ-র পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা যেতে পারে। যদি সে কাজটা সুষ্ঠুভাবে করা যায়, তবেই আশা করা যায়- স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ঘোষিত শুল্ক সুবিধা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে আগামীতে চীনে বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
শফিকুল ইসলাম : অতিরিক্ত সচিব (পিআরএল)