ব্যর্থ আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করতে হবে
বিশ্বজুড়ে মেয়াদি ঋণ দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান:আইডিএলসি এমডি
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২০-০৭-১৫ ০৯:৩৪:৩১
আইডিএলসি ফাইন্যান্সের এমডি আরিফ খান বলেছেন,বিশ্বজুড়ে মেয়াদি ঋণ দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান।আর আমাদের দেশে দেয় ব্যাংক। অন্যদিকে ব্যর্থ আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন চান খাত সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিরা। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ) এর আয়োজন করে।
তারা বলেন,পুরো আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের অবস্থা খারাপ নয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারণে পুরো খাতের বদনাম হচ্ছে। তারা খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং তারা আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। এ খাত থেকে ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের একটি অংশ টাকা তুলে নিচ্ছে। এ অবস্থায় এসব ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের মাধ্যমে পুরো খাতের ভাবমূর্তি উন্নয়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান ও আইপিডিসি ফাইন্যান্সের এমডি মমিনুল ইসলাম বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৮৭ হাজার কোটি টাকার সম্পদ এবং ৬৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ ও লিজ রয়েছে। এই ঋণের সাড়ে ৯ শতাংশ খেলাপি। খারাপ অবস্থায় থাকা ৫টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বাদ দিলে হার দাঁড়াবে ৫ শতাংশের নিচে। ব্যাংকগুলোর যেখানে ১০ লাখ কোটি টাকা ঋণের ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ খেলাপি রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের মূলধন রয়েছে ঝুঁকিভিত্তিক ১৭ শতাংশের মতো। ব্যাংকে যেখানে ১২ শতাংশের কম। মূলধন ও বিনিয়োগের বিপরীতে এ খাতের আয়ও ব্যাংকের চেয়ে বেশি। তবে বড় সমস্যা এ খাতের তহবিলের ৩৭ শতাংশের মতো এখনও ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল।
তিনি বলেন, গত এপ্রিল ও মে মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের মতো। এসব কারণে পুরো খাতে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। যে কারণে স্বল্প মেয়াদে তারল্য সংকট মেটানোর জন্য তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল চেয়েছেন।
মমিনুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ভাবমূর্তির একটা সংকট রয়েছে। বিশেষ করে পিপলস লিজিং অবসনায়ন এবং অপর একটি প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত না দেওয়ায় আমানতকারীরা আদালতে যাওয়ার পর ভাবমূর্তি সংকট দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে খুব খারাপ অবস্থায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের মাধ্যমে অন্তত আমানতকারীদের মূল টাকা কীভাবে ফেরতে দেওয়া যায় তা নিয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করছে বিএলএফসি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এই প্রস্তাব দেওয়া হবে।
আইডিএলসি ফাইন্যান্সের এমডি আরিফ খান বলেন, বিশ্বের অন্য দেশে মেয়াদি ঋণ দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয় ব্যাংক। তবে আমাদের এখানে ব্যাংক থেকে সব ধরনের অর্থায়ন করা হয়। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত সেভাবে বড় হচ্ছে না। আবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাব নেই। যে কারণে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি হয়। এতে ব্যাংকের চেয়ে ঋণের সুদহারও একটু বেশি থাকে। অন্য দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিলের বড় অংশই বন্ড মার্কেট থেকে আসে। আমাদের এ ক্ষেত্রে বাধা আছে। বিশেষ করে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি বন্ডে অনেকে বিনিয়োগ করতে চান না। আবার বন্ড ছাড়ার আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার কারণে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়। এতে অনেক সময় বিনিয়োগকারী হাতছাড়া হয়ে যায়।
আইআইডিএফসির এমডি গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খারাপ অবস্থার দায় পুরো খাতের ওপর আসতে পারে না। খারাপ অবস্থায় পড়া প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন কর্মীদের মান ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে।
ইসলামিক ফাইন্যান্সের এমডি আবু জাফর মো. সালেহ বলেন, ৩০ বছরেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের মতো সমান মাঠ পায়নি। যে কারণে এখনও তহবিল সংগ্রহে ব্যাংকের ওপর নির্ভর করতে হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খারাপ অবস্থার কারণে পুরো খাত যেন বদনামে না পড়ে সে জন্য কাজ করতে হবে। উত্তরা ফাইন্যান্সের এমডি এসএম শামসুল আরেফিন বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লিজিং, নন-ব্যাংকিং এসব আর ব্যবহার না করে শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত হতে পারলে এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে।