বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভইরাসের প্রকোপের মধ্যে স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। আগেই বিশ্ববাজারে সর্বোচ্চ দামের ইতিহাস সৃষ্টি করা স্বর্ণের দাম নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম দুই হাজার ডলার স্পর্শ করেছে।
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে স্বর্ণের দাম। তবে গত জুলাই মাসের শেষার্ধে এসে যেন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে শুরু করে মূল্যবান ধাতুটি। এতেই ২৭ জুলাই অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ দামের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে স্বর্ণ।
তবে এখানেই স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা থেমে থাকেনি। গত কয়েকদিন ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫ ডলারের মধ্যে ঘুরতে থাকা প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো দুই হাজার ডলারে উঠে যায়। পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ২০৩১ ডলারে ওঠে।
বুধবার আন্তর্জাতিক বাজারে লেনদেনের শুরুতে স্বর্ণের দাম কিছুটা কমলেও এখনও দুই হাজার ডলারের ওপরে রয়েছে। বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টার দিকে প্রতি আউন্স স্বর্ণ ২০১২ ডলারে লেনদেন হয়। এরপরও সপ্তাহের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে গত ২৪ জুলাই থেকে বাংলাদেশেও দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৯১৬ টাকা বাড়িয়ে ৭২ হাজার ৭৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬৯ হাজার ৬৩৪ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬০ হাজার ৮৮৬ টাকা। সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের দাম ৫০ হাজার ৫৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে স্বর্ণের দাম আগে কখনো এতো ছিল না।
এদিকে বাজুস যখন দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৮৮৯ ডলার। অর্থাৎ বাজুসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার পর ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১২৩ ডলার বেড়ে গেছে।
ভেনাস জুয়েলার্সের কর্ণধার ও স্বর্ণশিল্পী সমিতির সভাপতি গঙ্গা চরণ মালাকার বলেন, বিশ্ববাজারে যে হারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে তাতে দাম বেড়ে কোথায় গিয়ে থামবে তা কেউ বলতে পারছে না। আর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়াতে হবে।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, স্বর্ণের দাম বাড়লেও আমাদের বিক্রি নেই। আমাদের দেশে স্বর্ণের অলংকার বেশি ব্যবহার করেন মধ্যবিত্তরা। করোনার কারণে এই মধ্যবিত্ত এখন বড় সমস্যায় পড়েছেন। এতে আমাদের বিক্রি শূন্যের কোঠায় নেমেছে। অনেকে সেলসম্যানের বেতন পরিশোধ করতে পারছে না। শুধু আমাদের দেশে না বহির্বিশ্বেও স্বর্ণের অলংকার বিক্রিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। বাইরে আমার যেসব বন্ধু আছে তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাচ্ছি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারির কারণে কোনো কোনো মধ্যবিত্ত পরিবার আর্থিক সমস্যায় পড়ে স্বর্ণ বিক্রি করে বাসা ভাড়া পরিশোধ করছেন। আমাদের কাছে কেউ কেউ এসে বলছেন এখনই টাকা দরকার, বাসা ভাড়া দিতে না পারলে বাড়ির মালিক মালামাল আটকে দিচ্ছে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে ডলার ও তেলের মূল্য পতন হয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ স্বর্ণ কিনে মজুদ করছেন। কারণ স্বর্ণ নষ্ট হবে না। বড়জোর কিছু দাম কমে যেতে পারে। এ কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে তারা স্বর্ণ কিনে রাখছেন।