কক্সবাজার জেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পয়েন্টগুলো যুগযুগ ধরে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই অরক্ষিত সীমান্তের পয়েন্টগুলো দিয়ে প্রতিনিয়ত ডুকছে রোহিঙ্গা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও মাদক বন্ধ করতে সরকারের পদক্ষেপও কাজে আসছে না। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কাঁটাতারের বেড়া না থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে বিজিবির দাবী, দু‘দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মাঝে যেমন সম্পর্ক উষ্ণ রয়েছে, তেমনি বাড়ছে, নিরাপত্তা তদারকি। অমীমাংসিত ৩৬ কিলোমিটার সীমান্তের যৌথ জরিপের পাশাপাশি অরক্ষিত স্থানে বসেছে, চৌকি। মাদক ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। এতে মাদক চোরাচালান ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অনেক কমেছে বলে দাবী করেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
সূত্র মতে,সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দেদারছে ইয়াবা সহ মাদকদ্রব্য ডুকে পড়ায় এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে পর্যটন জেলা কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটছে। বাড়ছে খুন-খারাবি, বেদখল হয়ে যাচ্ছে সরকারী খাস জমি ও বনজসম্পদ। জেলা এমন কোন স্থান নেই যেখানে রোহিঙ্গাদের বসতি গড়ে উঠেনি।
গেল বছর গুলিতে একজন বিজিবি সদস্যের মৃত্যু এবং চলতি বছর সীমান্তে পরপর বেশকিছু অপ্রীতিকর ঘটনা এক প্রকার উত্তপ্ত করে তুলেছিল বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি। তবে ধীরে ধীরে তার কিছুটা হলেও বদলে যায়। বিশেষ করে, কক্সবাজার এলাকায় ৩৬ কিলোমিটার বিরোধপূর্ণ সীমান্তে গত মে মাসে যৌথ জরিপ শেষ হওয়ায় খুলে গেছে দীর্ঘদিনের সংকট সমাধানের সুযোগ। কারণ, দুদেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে নানা সময়ে বিরোধের উৎসও ছিল এই এলাকা।
মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে ২৭২ কিলোমিটার। যার মধ্যে ১৪৪ কিলোমিটার পড়েছে কক্সবাজারে। এখন অরক্ষিত পয়েন্ট চিহ্নিত করে সেখানে চৌকি স্থাপন করছে, বিজিবি। যা চোরাচালান ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মত এই বিজিবি কর্মকর্তার।
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশ করে প্রাকৃতিক সম্পদ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। গত ৮ ডিসেম্বর মিয়ানমারের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের পর পালিয়ে যাওয়ার সময় নৌ-বাহিনীর হাতে আটক হন মিয়ানমারের ১২ ফিশিং ট্রলারসহ ৯২ জন জেলে।
স্থানীয় লোকজন মনে করেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমানা নির্ধারণ করে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হলে মাদক পাচার, অনুপ্রবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ লুট হ্রাস পাবে।
টেকনাফ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আবু জার আল জাহিদ জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মাদক পাচারসহ রোহিঙ্গা কর্তৃক অপরাধ ঠেকাতে বিজিবির সদস্যরা দিনরাত নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমানাকে সুরক্ষিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫‘শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যা অতিশীঘ্রই বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরো জানান, সীমান্তে চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হলে স্থানীয়দের মাঝে জনসচেতনতা দরকার। সীমান্তের জনগণকে এব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করা দরকার বলেও মনে করেন।
সানবিডি/ঢাকা/রাআ