মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্বের কোনোটিরই তোয়াক্কা করছে না কুষ্টিয়ার গণপরিবহনগুলো। সকল বাসগুলোর নজর ১০০ শতাংশ যাত্রী বসিয়ে অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ ভাড়া আদায়ের দিকে। বিভিন্ন জেলার বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
বুধবার বাস টার্মিনালগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, পাশাপাশি দুই সিটে একজন বসার নিয়ম থাকলেও সব বাসেই পাশাপাশি সিটে বসছেন দুইজন। বাসে জীবাণুনাশক স্প্রে দেয়াসহ আনুষাঙ্গিক কোনো নিয়মই মানছে না পরিবহনগুলো। এসব নিয়ে পরিবহন চালক ও যাত্রীদের মধ্যে পাল্টপাল্টি অভিযোগেরও শেষ নেই।
বুধবার দুপুরে বাইপাস পয়েন্টে রংপুরগামী আগমনী পরিবহন নামের একটি বাসে উঁকি মারতেই দেখা গেল, বাসে কোনো সিট খালি নেই। চালকের সহকারীকে (হেলপার) জিজ্ঞাসা করলে উত্তর এলো, ভাই সিট খালি নেই। পরের গাড়িতে যেতে পারবেন।
ওই পরিবহনের হেলপার জানান, কোরবানির ঈদের আগ থেকেই তাদের পরিবহন সবগুলো সিট ভর্তি করে যাত্রী নিয়ে রংপুর রুটে চলাচল করছে।
ওই বাসের যাত্রী আশরাফ উদ্দিন জানান, বাসে স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব কোনোটাই মানা হচ্ছে না। তারপরও নেয়া হচ্ছে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া। পরিবহনগুলো সরকার নির্দেশিত বর্ধিত ভাড়ার বিষয়টি মানলেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।
কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া গড়াই পরিবহনের যাত্রী শিক্ষার্থী রুহুল আমিন জানান, ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া দিয়ে বাসে উঠলেও কিছুদূর আসার পর এক যাত্রীকে তার পাশের সিটে বসায় কন্ডাকটর।
পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসনের নানা প্রচারণার পরও অনেক পরিবহন সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মানছে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তারা জানায়, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলে তাদের লোকসান হচ্ছে। তারপরও আমরা বসে নেই। করোনা সংক্রমণরোধের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে কুষ্টিয়ায় বাস-মিনিবাসের পাশাপাশি সিএনজি, অটোরিকশাসহ গণ-পরিবহনে সামাজিক দূরত্ব আর মানা হচ্ছে না।
করোনা পরিস্থিতির আগে গণপরিবহনের (বাস) ভাড়া ছিল প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪২ পয়সা হারে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে এই ভাড়া ৬০ ভাগ বৃদ্ধি করে যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়ার উপর দিয়ে দূরপাল্লার যেসব পরিবহন চলছে তার অধিকাংশেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। বিশেষ করে কুষ্টিয়া থেকে খুলনা, দিনাজপুর, রাজশাহী, বরিশাল,ময়মনসিংহ এসব রুটে অধিকাংশ পরিবহনই সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই চলাচল করছে। আবার জেলার এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলাতে চলাচলকারী লোকাল বাসের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখা গেছে। তবে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী এসবি, হানিফসহ অন্যান্য পরিবহনগুলোকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাচল করতে দেখা গেছে।
কুষ্টিয়া বাস-মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন লাবলু দাবি করেন, কুষ্টিয়া জেলায় অধিকাংশ পরিবহনই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করছে। তাছাড়া প্রশাসনের নিয়মিত কঠোর নজরদারি রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরী জানান, এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। সামাজিক দূরত্ব লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।