গতবছর রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন করেছে বাংলাদেশ। চলতি বছর উৎপাদন অব্যাহত থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রভাবে কমে গেছে চায়ের বিক্রি। এতে করে গতবছরের তুলনায় চায়ের দাম কমেছে ৪৭ ভাগ। তাই ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং চলতি মূলধন জোগানে চা শিল্প কঠিন বাধার মুখে পড়েছ। এ সংকট থেকে উত্তরণে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সাড়ে চার শতাংশ সুদে এ শিল্পকেও চলতি মূলধন ঋণ দেয়ার সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের চা শিল্পের ওপর কোভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দেশের হোটেল, রেস্তোরাঁ, চায়ের স্টল, দোকানপাট ও যানবাহনে জনগণের চলাচল সীমিত হওয়ায় চায়ের অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে নিলামে চায়ের বাজার মূল্য নিম্নমুখী হওয়ায় বিগত নিলামসমূহে বিক্রয়ের জন্য উঠানো অনেক চা অবিক্রিত রয়ে গেছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রামের সাপ্তাহিক চা নিলাম কেন্দ্রে এপ্রিলের ৪৬তম ও ৪৭তম সেল বন্ধ ছিল। এতে অনেক চা অবিক্রিত থেকে যাওয়ায় চায়ের মূল্য বিগত বছরের তুলনায় ৪৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে মর্মে বাংলাদেশ চা বোর্ড জানিয়েছে।
এদিকে চায়ের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং চলতি মূলধন জোগানে চা শিল্প বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থায় চা শিল্পে স্বল্প সুদে চলতি মূলধন ও উন্নয়নমূলক ঋণ সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মতামত ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ চা বোর্ড।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিতকরণ, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা দিতে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকার এ ঋণ দেবে স্বল্প সুদে। গ্রাহক পর্যায়ে সহনীয় সুদহার কার্যকর করতে বর্তমানে চলমান সুদের ৯ শতাংশের বিপরীতে ৪.৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসেবে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ অবস্থায় দেশীয় চা সংসদ এবং বাংলাদেশ চা বোর্ডের সুপারিশ পর্যালোচনায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চা শিল্পের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সৃষ্ট আর্থিক সমস্যা নিরসনে অন্যান্য শিল্পের ন্যায় চা শিল্পে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ ভর্তুকি প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চা বোর্ড জানায়, চলতি বছর দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাত কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার কেজি। গত পাঁচ মাসে (মে পর্যন্ত) উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ২৮ লাখ ৪৬ হাজার কেজি। গতবছর প্রথম পাঁচ মাসে উৎপাদন ছিল এক কোটি ৬২ লাখ ৮১ হাজার কেজি। চলতি বছর আবহাওয়ার জন্য উৎপাদন কিছুটা কমলেও উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ২০১৯ সালে চা শিল্পে ১৬৫ বছরের ইতিহাসের রেকর্ড ভেঙে দেশে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়। গতবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ মিলিয়ন বা আট কোটি কেজি। তবে বছর শেষে উৎপাদন হয় ৯৬ দশমিক ০৭ মিলিয়ন কেজি বা ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি।
সানবিডি/আরএম/