প্রাণের স্পন্দন, মঙ্গল নয় বৃহস্পতিই বেশি সম্ভাবনাময়

আপডেট: ২০১৫-০৯-৩০ ১৪:০৮:১৪


Picture101443597477প্রাণের স্পন্দন বৃহস্পতির দুই চাঁদেও। বরং এখানে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ‘মঙ্গল’ থেকেও সম্ভাবনাময়। এ ক্ষেত্রে মঙ্গলকে হারিয়ে দিতে পারে ‘বৃহস্পতি’! দৌড়ের ‘ফার্স্ট ল্যাপ’-তাই বলছে! আমাদের এই গ্রহ ছাড়া এই ব্রহ্মান্ডের আর কোথাও প্রাণ রয়েছে কি না, সেই কৌতূহল সম্ভবত, আগে মেটাতে পারে এই সৌরমন্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির দুই চাঁদ- ‘ইউরোপা’ আর ‘গ্যানিমিদ’।

এক জায়গায় পানি তরল অবস্থায় রয়েছে বলে সদ্যই জানা গেল। আর, অন্য এক ‘ডেস্টিনেশন’-এ অতলান্ত পানির সন্ধান তো মিলেছেই, সেই সঙ্গে পানির তলায় অন্তত, তিনশো কোটি অণুজীব থাকার সম্ভাবনাও রীতিমতো জোরালো হয়েছে। খবর আনন্দবাজার অনলাইনের।

নাসা-র যে গবেষকদলটি মঙ্গলে নোনা জলের অস্তিত্বের কথা ঘোষণা করেছে, তার অন্যতম সদস্য, বাঙালি মহাকাশবিজ্ঞানী হিল্লোল গুপ্ত মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন।

আমেরিকার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউএমবিসি সেন্টারের কম্পিউটার ও মহাকাশবিজ্ঞানী হিল্লোল জানান, ‘প্রাণের জন্য জলকে তরল অবস্থায় থাকতেই হবে আর সেই জলকে পর্যাপ্ত হতে হবে, এটা যেমন ঠিক, তেমনই তরল অবস্থায় জলের হদিস মিললেই যে প্রাণের সৃষ্টি হবে, তা কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রাণের জন্মের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনেরও প্রয়োজন। আর সেই অক্সিজেনকে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাসীয় অবস্থাতেই থাকতে হবে। এখনও পর্যন্ত যে সব তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে মঙ্গলের তুলনায় অক্সিজেন গ্যাস অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে বৃহস্পতির দুই চাঁদ ‘ইউরোপা’ আর ‘গ্যানিমিদ’-এ। তাই, মঙ্গলে তরল জল মিললেও প্রাণের হদিস মিলবে কতটা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্য দিকে, এত বেশি পরিমাণে অক্সিজেন গ্যাস রয়েছে ‘ইউরোপা’ আর ‘গ্যানিমিদ’-এ যে, বৃহস্পতির ওই দুই চাঁদে অণুজীব না-থাকলে, সেটাই হবে বিস্ময়ের।’

এই মাসেই পোয়ের্তো রিকোয়, ‘আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’র ‘ডিভিশন ফর প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস’-এর ৪১তম বৈঠকে একটি চাঞ্চল্যকর গবেষণাপত্র পেশ করেছেন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিশিষ্ট অধ্যাপক রিচার্ড গ্রিনবার্গ। ওই গবেষণাপত্রটি তৈরি করার ক্ষেত্রে হিল্লোল ছিলেন গ্রিনবার্গের সহকারী।

হিল্লোল জানান, বৃহস্পতির ওই দু’টি চাঁদে রয়েছে প্রচুর অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন গ্যাস। অভাব নেই কার্বন, নাইট্রোজেন, সালফার ও ফসফরাসের মতো প্রচুর রাসায়নিক মৌলেরও। অন্তত, কার্বন আর নাইট্রোজেনের পরিমাণ তো মঙ্গলের থেকে অনেকটাই বেশি। বৃহস্পতির দুই চাঁদের বায়ুমন্ডলে প্রচুর অক্সিজেন থাকায় কার্বন, নাইট্রোজেন, সালফার ও ফসফরাস-ঘটিত যৌগেরও অভাব নেই সেখানে। যে মহাসাগর রয়েছে বৃহস্পতির দুই চাঁদে, সেগুলোর গভীরতা আটলান্টিক বা প্রশান্ত মহাসাগরের তুলনায় প্রায় দশ থেকে পনেরো গুণ।

হিল্লোল জানান, বৃহস্পতির চাঁদের মহাসাগরগুলো তার পিঠের শক্ত বরফ চাদরের খুব একটা নীচে নেই। বরফ চাদরের মাত্র ৯৫ থেকে ১১৫ মাইল নীচেই রয়েছে তরল পানির ওই সুবিশাল মহাসাগরগুলো। সেই জলও নোনা। পৃথিবীর মতোই।

অধ্যাপক গ্রিনবার্গের গবেষণাপত্রে একেবারে হিসেব কষে দেখানো হয়েছে, বৃহস্পতির দুই চাঁদে ওই পরিবেশে এখনও কম করে ৩০০ কোটি অণুজীব বেঁচে থাকতে পারে। সেই অণুজীব হতে পারে ‘মাইক্রো-ফ্লোরা’ বা অণু-উদ্ভিদ, আবার তা ‘মাইক্রো-ফনা’ বা অণু-প্রাণীও হতে পারে। তা যে প্রাণী বা উদ্ভিদই হোক, সেগুলো এককোষী বা ‘ইউনি-সেলুলার’ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সূর্য থেকে অত দূরে, তা-ও আবার অতটা পুরু বরফ চাদরের তলায় ‘লুকিয়ে থাকা’ মহাসাগরের ৯০ থেকে ১৫০ মাইল নীচে বহুকোষী প্রাণী বা উদ্ভিদের হদিস মেলাটা কার্যত অসম্ভবই।

অধ্যাপক গ্রিনবার্গের ওই গবেষণাপত্রে প্রাণের হদিস মেলার সম্ভাবনার দৌড়ে মঙ্গলের চেয়ে বৃহস্পতির দু’টি চাঁদকে এগিয়ে রাখা হয়েছে আরও একটি কারণে। তা হল, মঙ্গলে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড গ্যাস কতটা রয়েছে বা আদৌ রয়েছে কি না, তা নিয়ে যথেষ্টই সংশয় রয়েছে। কিন্তু এই গ্যাস প্রচুর পরিমাণে রয়েছে বৃহস্পতির ওই দুই চাঁদে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, সেই হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড গ্যাস দু’টি চাঁদের বরফ চাদর ফুঁড়ে তার নীচে লুকিয়ে থাকা মহাসাগরের তরল পানিতে মিশেছে। এখনও মিশছে। এটাই ‘প্রাণ’ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির ভান্ডারের জন্ম দিয়েছে বৃহস্পতির দুই চাঁদে। এই প্রক্রিয়াটা মঙ্গলেও চালু রয়েছে, এমন তথ্য এখনও পর্যন্ত মেলেনি।

হিল্লোল জানান, বৃহস্পতির চাঁদ দু’টিতে তরল পানি যে প্রায় প্রতি মুহূর্তেই ফুটে চলেছে, তারও প্রমাণ মিলেছে। পানি ফুটছে বলেই দুই চাঁদের দুই মেরু থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে। হাব্ল স্পেস টেলিস্কোপে সেই ছবি ধরাও পড়েছে। জোরালো অভিকর্ষ বল আর মহাসাগরগুলোর নীচে থাকা ‘জীবন্ত’ আগ্নেয়গিরিই বৃহস্পতির দুই চাঁদে তরল পানিকে ফুটিয়ে প্রচুর জলীয় বাষ্পের জন্ম দিচ্ছে। এই ঘটনাও বৃহস্পতির চাঁদ দু’টিতে প্রাণের হদিস মেলার সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সানবিডি/ঢাকা/রাআ