প্রতি বারের মতো এই ঈদেও বিগ বাজেটের জনপ্রিয় শিল্পীদের সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এবারের ঈদে রাজা বাবু, আশিকী এবং প্রার্থনা শিরোনামের তিনটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে দেশিয় সিনেমা রাজা বাবু এবং যৌথ প্রযোজনার সিনেমা আশিকী । সিনেমা দুটি মুক্তি পেয়েছে দেশের আড়াই শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে।
বদিউল আলম খোকন পরিচালিত সিনেমা রাজা বাবু । এ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও ববি হক। রাজা বাবু সিনেমাটি ১৬১টি হলে মুক্তি পেয়ে দেশের সিনেমার ইতিহাসে সর্বাধিক হলে মুক্তি পাওয়া সিনেমার নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। সঙ্গতঃ কারণেই প্রেক্ষাগৃহগুলোতে শাকিব ভক্তদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কষ্টের টাকায় টিকিট কিনে শাকিব খান অভিনীত সিনেমা দেখতে যাচ্ছেন দর্শকরা।
প্রিয় নায়ক, প্রিয় নায়িকা ও প্রিয় নির্মাতার সিনেমার দেখার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত অধীর আগ্রহে থাকেন দর্শকরা। তবে তারা সিনেমা দেখার আগে একটি বারও ভাবেনি কষ্টের টাকা দিয়ে টিকিট কেটে তেলেগু সিনেমা দেখবেন!
বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে তামিল, তেলেগু, হিন্দি সিনেমার নকল করে সিনেমা নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া চলচ্চিত্র অঙ্গনসহ দর্শকদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সিনেমার পরিচালক, শিল্পীসহ কলাকুশলীদের। কিন্তু এ নিয়ে পরিচালক, প্রযোজক ও শিল্পীদের যেন কোনো মাথা ব্যথা নেই। তারা নিয়মিত নকল সিনেমা নির্মাণ করে দর্শকদের ধোকা দিয়ে যাচ্ছেন। এ তালিকায় রয়েছেন দেশের র্শীষে থাকা পরিচাক ও নায়ক।
নকল সিনেমার তালিকায় রয়েছে এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমা রাজা বাবু। দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা থেকে নকল করা হয়েছে এটি । এ নিয়ে সিনেমাটির মুক্তি আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘নকলের গোলক ধাঁধাঁয় শাকিব খান’ শিরোনামের খবর প্রকাশ করা হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সিনেমাটি সারা দেশে মুক্তি পেলে তা সত্যি বলে প্রমাণিত হয়। সিনেমাটি দেখার পর যেসব দর্শক শাকিব খানের নাম বলতে পাগল তাদেরও হা-হুতাশ করতে দেখা গেছে।
২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া তামিল সিনেমা ডাম্মু থেকে নকল করা হয়েছে সিনেমাটির গল্প। মূল সিনেমায় জুনিয়র এনটিআর এর বিপরীতে অভিনয় করেছেন তৃষা কৃষ্ণা ও কার্তিকা নায়ের। রাজা বাবু সিনেমার দৃশ্য-গল্পের পাশাপাশি পোস্টারও নকলের অভিযোগ উঠে। এ ছাড়া ডাম্মু সিনেমার কিছু দৃশ্য কেটে এনে বসানোর মত গুরুতর অভিযোগও উঠেছে বর্ষিয়ান পরিচালক খোকনের বিরুদ্ধে।
এ দিকে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা আশিকী ১০৫ টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন নবাগত নুসরাত ফারিয়া। এটি ফারিয়ার অভিনীত প্রথম সিনেমা। এ সিনেমাটিও তেলেগু ভাষার চলচ্চিত্র ইশক-এর নকল। এর আগেও ঢাকায় ইশক সিনেমার নকল করে লাভ স্টেশন শিরোনামের একটি সিনেমা নির্মাণ করা হয়।
এই বিশেষত্ব বলতে যা রয়েছে তা হচ্ছে ঝকঝকে প্রিন্ট আর বৈদেশিক চাকচিক্যে ভরা দৃশ্য। বলা হচ্ছে সিনেমাটি দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি কোনো দেশি সিনেমা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, দেশের বাজারে অন্য ভাষার সিনেমা মুক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠন স্বোচ্চার হলেও এবারে দেশিয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভিনদেশি পরিচালককে দিয়ে বিদেশি সিনেমা নির্মাণ করিয়েছেন।
সিনেমাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের আবদুল আজিজ ও কলকাতার অশোক পাতি। এতে নুসরাত ফারিয়ার বিপরীতে আছেন কলকাতার অঙ্কুশ। বিশেষ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের মৌসুমীকে।
সিনেমাটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ভারতের এস কে মুভিজ। এ সিনেমাটির নাম প্রথমে প্রেমী ও প্রেমী রাখা হয়। পরে অবশ্য তা পরিবর্তন করে আশিকী রাখা হয়।
সব মিলিয়ে বড় বাজেটের খ্যাতিমান প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বাণিজ্যিক ধারার যে দুটি সিনেমা এই ঈদে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তার একটি নকল আর অন্যটি ভিনদেশি সিনেমা হিসেবে অভিহিত করছেন দর্শকরা। যা দেশের চলচ্চিত্র সংকটকে আরো জটিল করে তুলবে বলেই চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের ধারণা। তাছাড়া এই নকলের মতো ভয়াল থাবা থেকে দেশির চলচ্চিত্রের মুক্তি না মিললে ঢাকাই সিনেমার বাজারে বড় ধরণের ধ্বসের আশংখা করছেন অনেকেই।
সানবিডি/ঢাকা/রাআ