চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কারনে চলতি বছর এশিয়ার বাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদায় পতন ঘটে। কমতে শুরু করে জ্বালানি পণ্যটির দাম। সম্প্রতি এলএনজির দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে। মূলত জাপানসহ দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোয় চাহিদা বৃদ্ধির জের ধরে এশিয়ার বাজারে এলএনজির দাম বাড়ছে। আর এর পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে এসব দেশের ক্রম উষ্ণ আবহাওয়া। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া পরিস্থিতি আরো উষ্ণ হয়ে উঠলে এলএনজির চাহিদা বাড়তির দিকে থাকবে। ফলে শিগগিরই জ্বালানি পণ্যটির দাম মহামারী-পূর্ব অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
রয়টার্সের দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, এলএনজির বাজার এরই মধ্যে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। চলতি সপ্তাহে এশিয়ার স্পটমার্কেটে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (২৭ দশমিক শূন্য ৯৬ ঘনমিটার) এলএনজির দাম দাঁড়িয়েছে ৩ ডলার ৭০ সেন্টে। চলতি সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার উডসাইড পেট্রোলিয়াম সেপ্টেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজি সর্বোচ্চ ৩ ডলার ৯০ সেন্টে বিক্রি করেছে। দীর্ঘদিনের মন্দা ভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জ্বালানি পণ্যটির দাম। গত জানুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) করোনাসংক্রান্ত বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণার পর এটাই এশিয়ার বাজারে এলএনজির সর্বোচ্চ দাম।
বৈশ্বিক এলএনজি আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে জাপান। তালিকায় এরপর যথাক্রমে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান। স্বাভাবিকভাবে এসব দেশে চাহিদায় উত্থান-পতন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির মূল্য নির্ধারণে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ সময় লকডাউনে থাকলেও চলতি বছর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন খুব একটা কমেনি। এসব দেশে বাড়তি গরম পড়তে শুরু করেছে। আবহাওয়া রয়েছে উষ্ণ। এ পরিস্থিতি দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোয় এলএনজির চাহিদা বাড়িয়েছে। ফলে বাড়তে শুরু করেছে জ্বালানি পণ্যটির দামও। চাহিদা প্রবৃদ্ধির জের ধরে মহামারী-পূর্ব দামে ফিরে যেতে পারে এলএনজি।
আগস্টের শেষের দিকে ও সেপ্টেম্বরে রাজধানী টোকিওসহ জাপানের কয়েকটি শহরে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। বয়ে যেতে পারে তাপপ্রবাহ। এমনটাই জানিয়েছে জাপানের আবহাওয়া দপ্তর। ফলে এসব শহরে ঘর শীতল রাখার কাজে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে, যার বেশির ভাগই সরবরাহ করা হবে আমদানি করা এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে।
টোকিওভিত্তিক জ্বালানিপণ্য আমদানিকারকদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, জাপানে টানা ছুটির মৌসুম শেষের দিকে। এরপর জাপানবাসী কাজে ফিরবে। তখন বিদ্যুতের চাহিদা এমনিতেই বাড়বে। তার ওপর আবহাওয়া উষ্ণ থাকলে চাহিদা রেকর্ড ছুঁতে পারে। ফলে আগামী দিনগুলোয় জাপানের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় এলএনজির চাহিদা বাড়তির দিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
অনেকটা একই চিত্র দক্ষিণ কোরিয়াতেও। আগামী দুই সপ্তাহে রাজধানী সিউলসহ দেশটির বিভিন্ন শহরের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে পারে বলে রেফিনিটিভ ইকনের এক নোটে বলা হয়েছে। এতে দক্ষিণ কোরিয়াতেও বাড়তে থাকবে এলএনজির চাহিদা।
ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে আগামী দিনগুলোয় এশিয়ার বাজারে এলএনজি সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে। বহুজাতিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠান শেভরনের হাতে থাকা অস্ট্রেলিয়ার জরগন এলএনজি প্লান্টের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। চলতি মাসেই প্লান্টটির পুরোদমে উৎপাদনে আসার কথা ছিল। তবে এ কাজের মেয়াদ আরো বাড়িয়েছে শেভরন। এর জের ধরে প্লান্টটি থেকে পুরোদমে এলএনজি সরবরাহ শুরু হতে আরো সময় লাগতে পারে। ফলে আগামী দিনগুলোয় দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এলএনজির বাড়তি চাহিদার চাপ সামাল দেয়া কঠিন হতে পারে, যা জ্বালানি পণ্যটির মূল্য নির্ধারণে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এশিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারেও এলএনজির দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম আট মাসের সর্বোচ্চে উঠেছিল। এর প্রভাব পড়তে পারে এশিয়ার বাজারেও। চাহিদা বৃদ্ধির জের ধরে শিগগিরই এলএনজির দাম মহামারী-পূর্ব অবস্থায় উন্নীত হতে পারে।