দীর্ঘ মন্দার পর সু-বাতাস বইছে দেশের পুঁজিবাজারে। বাড়ছে লেনদেন ও সূচক। বাজারে ফিরতে শুরু করেছে সাইট লাইনে থাকা বিনিয়োগকারীরা। নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজারের এই পরিবর্তন স্বাভাবিক বলেই মনে করেন পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রাইম ইসলামী লাইফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এম নূরুল আলম, এফসিএস, সিজিআইএ। বর্তমানে তিনি প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজের পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন সানবিডির সাথে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সানবিডির প্রধান প্রতিবেদক গিয়াস উদ্দিন ও নিজস্ব প্রতিবেদক শাহ মো. সাইফুল।
এম নূরুল আলম, এফসিএস,সিসিইপি-সিজিআইএ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। এর পর নিয়েছেন তিনটি প্রফেশনাল ডিগ্রি। কাজ করেছেন বহুজাতিক কোম্পানি গ্লাসকোর ইন্টারনাল অডিটের হেড হিসেবে। এর পর দেশের অন্যতম শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেডের চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার হিসেবে। তিনি বর্তমানে সিসিইপি-আই ইন্টারনাল অডিটরদের সংগঠন দি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারনাল অডিটরস, বাংলাদেশ (আইআইএবি) এর সেক্রেটারি জেনারেলেরও দায়িত্ব পালন করছেন।
এম নূরুল আলম বলেন, একটি দেশের পুঁজিবাজার চলে আস্থা ও বিশ্বাসের উপর। বিনিয়োগকারীরা একটি ভালো পরিবেশ চায়। সেটি যদি সরকার দিতে পারে তাহলে বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হয়। পুনর্গঠিত কমিশনের দক্ষ নের্তৃত্বে সেই কাজটি হচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। বাজারামুখী হচ্চে তারা।
তার মতে, পুঁজিবাজারের এ পরিস্থিতি অনেক আগে থেকেই দরকার ছিলো। বাজারের বর্তমান অবস্থা স্বাভাবিক। এখানে ভয়ের কোন কারণ নেই। এই বাজার এতোদিন অবমূল্যায়িত ছিলো। একটি দেশের পুঁজিবাজার চলে আস্থা ও বিশ্বাসের উপর। বিনিয়োগকারীদেরকে সেই আস্থার জায়গায় নিতে পেরেছে নতুন কমিশন। ফলে বাজার তার স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
পুঁজিবাজারের সব কিছু নির্ভর করে একটা বিশ্বাসের উপর। বাজারে যারা বিনিয়োগ করবে সাধারণ বিনিয়োগকারী বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। কিন্তু তারা একটা বিশ্বাসের জায়গা খোঁজে। কারণ তারা নিজের কষ্টার্জিত টাকাটা এখানে বিনিয়োগ করবে। বিশ্বাসের জায়গাটা যখন মানুষ পায় না তখন সে তার বিনিয়োগটা এখানে আনতে চায় না। বিনিয়োগের পরে যখন সে দেখে যে তার টাকাটা লস হয়ে যাচ্ছে তখন সে জায়গায় তার বিশ্বাসের অবনতি ঘঠে।
বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা এটা স্বাভাবিক। কারণ আমাদের শেয়ার মার্কেটে যে স্বাভাবিকতা সেটা ছিলো না। সত্যিকার অর্থে এটা একটা অস্বাভাবিক বাজার ছিলো।
বর্তমান বাজারের যে অবস্থা সেটা হচ্ছে মানুষ তার আত্মবিশ্বাসটা ফিরে পেতে চাচ্ছে। সে কারণে বাজারের এ অবস্থা। গত তিন চার দিন ধরে আমি যেটা দেখছি সেটা হচ্ছছে বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এটা অস্বাভাবিক কোন জায়গায় পোঁছে নাই । এটা এখনো স্বাভাবিক জায়গাতেই আছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থাটা আরো বেড়ে যাচ্ছে।এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থাটা ধরে রাখার জন্য রেগুলেটরির যে করণীয় সেটাই এখন বিরাজ করছে।
কমিশনের পরিবর্তনে রেগুলেটরিতে কিছু মেধাবী বিচক্ষণ লোক এসেছে। উনাদের অ্যাকশানের কারণে বাজার পজেটিভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শেয়ার বাজারে মানুষ বিনিয়োগ করে প্রফিট করার জন্য।
বাজারের এই অবস্থার কারণ: বাজার স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে। কারণ ব্যাংকে ইন্টারেস্টের হার কমিয়ে ৯ শতাংশ করা করা হয়েছে।। এর ফলে ডিপোজিটর ইন্টারেস্ট পাবে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ। সে কারণে মানুষের পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে সঞ্চয় পত্র। যারা অবসরপ্রাপ্ত। যা ব্যবসা করার মতো কোন ক্যাপাসিটি নাই বয়ষ্ক ইত্যাদি। তারা তাদের পেনশানের টাকা সেখানে রাখার জন্য অত্যন্ত ভালো একটা জায়গা। বিনিয়োগের ভালো রিটার্ন থাকার ফলে সব মানুষ সে দিকে ঝুঁকে পড়েছিলো। আসলে এই জায়গাটি সবার জন্য নয়। এই জন্য সরকার সেটিকে নিশ্চিত করার জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছে। এখন আর সবাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারে না।
তাহলে প্রশ্ন হলো বিনিয়োগ যাবে কোথায়? এই প্রশ্নের উতর খুঁজতে এখন বিনিয়োগকারীরা আসছে পুঁজিবাজারের দিকে। অন্যদিকে নতুন কমিশনের পুঁজিবাজান বান্ধব সিদ্ধান্তে তারা আরো আস্থা পাচ্ছে। তারা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ নিরাপদ মনে করছে।
পুঁজিবাজারকে ঠিক করার জন্য সরকার ব্যাংকগুলোকে রেপোর মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দিয়েছে। অন্যদিকে বিএসইসি শুধুমাত্র ইক্যুইটি নির্ভর বাজার না করে বন্ডের দিকে ঝুঁকছে। সেটিও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা দিবে। দেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বন্ড ইস্যুর প্রতিও জোর দিচ্ছে কমিশন। আমি যতটুকু জানি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বন্ড ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশন চিন্তা করছে এটি কত দ্রুত দেওয়া যায়।
কমিশনের মূল কথা হলো সবাইকে আইন মেনে কাজ করতে হবে। তাবে তারা পুলিশি কায়দায় নয়; বুঝানোর মাধ্যমে চেষ্টা করছে। কমিশন যদি এই স্প্রিড ধরে রাখতে পারে তাহলে অবশ্যই বাজার ভালো হবে। সব মিলিয়ে কমিশন যেভাবে কাজ করছে তাতে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ছে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ: বিনিয়োগকারীদের আমি বলবো বাজারে দর বৃদ্ধির কারণে হঠাৎ না জেনে না বুঝে আজে-বাজে শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন না। বিনিয়োগের আগের কোম্পানির মৌলভিত্তি দেখে বিনিয়োগ করেন। যে কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন ভালো, দক্ষ ম্যানেজমেন্ট, আয় ভালো, ভল্যাংশ দেওয়ার ইতিহাস ভালো, নিয়িমত এজিএম করে এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। বাজার খারাপ হলেও তাদের পুঁজি হারানোর ভয় থাকবে না। নিরাপদে থাকবে বিনিয়োগ।
সানবিডি/এসএমএস/ জিইউ/আরএম ৯:২৮/২৫/৩/২০