মহামারি করোনাভাইরাসে নানামুখি প্রভাবের কারনে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে পোশাক রফতানিতে বিশ্ব বাজারে দ্বিতীয় স্থান হারিয়েছে বাংলাদেশ। একই সময়ে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি রফতানি করেছে ভিয়েতনাম, তারাই এখন পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে খাত সংশ্লিষ্টদের কারও কারও শঙ্কা, বছর শেষেও হয়তো তৃতীয় স্থানেই থাকতে হতে পারে বাংলাদেশকে। তবে বেশিরভাগ উদ্যোক্তার প্রত্যাশা, ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। বছর শেষে অন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থান পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।
পোশাক রফতানিতে বিশ্বে চীনের অবস্থান প্রথম। কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। গেল কয়েক বছর ধরে তৃতীয় স্থানটি দখল করে রেখেছিল ভিয়েতনাম। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি খুব দ্রুত এগিয়ে আসছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে রফতানি আয়ের ব্যবধানও কমছিল ক্রমেই। করেনাভাইরাসের সময়ে দেশের পোশাক কারখানাগুলো একের পর এক ক্রয়াদেশ হারালে রফতানি কমে যায় বাংলাদেশের। এই সুযোগেই বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে ভিয়েতনাম। তবে বছর শেষে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) যে তথ্য প্রকাশ করে, তার ওপর নির্ভর করেই রফতানিতে প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় স্থান নির্ধারিত হয়। সেই হিসাবে এখনো বাংলাদেশ এই খাতে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে।
ডব্লিউটিও’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম অবস্থানে থাকা চীন ২০১৯ সালে বিশ্ব বাজারে পোশাক রফতানি করেছিল ১৫১ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারের। ৩৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করে দ্বিতীয় অবস্থান পায় বাংলাদেশ। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনামের রফতানি আয় ছিল ৩০ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের।
এদিকে, দেশের পোশাক খাতের সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে ভিয়েতনামের রফতানি ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এই সময়টিতে বাংলাদেশকে পেরিয়ে যায় ভিয়েতনাম।
এই তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জানুয়ারিতে বাংলাদেশের রফতানি আয় ৩ ছিল হাজার ৩৯ মিলিয়ন ডলার, ভিয়েতনামের ২ হাজার ৪৭০ মিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের আয় ছিল ২ হাজার ৭৮৪ মিলিয়ন ডলার, ভিয়েতনামের ২ হাজার ২২৩ মিলিয়ন ডলার। মার্চে বাংলাদেশের আয় ছিল ২ হাজার ২৫৬ মিলিয়ন ডলার, ভিয়েতনামের আয় ২ হাজার ৩৩৮ মিলিয়ন ডলার। বছরের প্রথম একক মাস হিসেবে করোনাকালীন এই মার্চে এসে রফতানি আয়ে প্রথমবারের মতো ভিয়েতনাম ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশকে। পরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের রফতানি তলানিতে ঠেকে। মাসটিতে বাংলাদেশ মাত্র ৩৭৪ মিলিয়ন ডলারের আয় করে, বিপরীতে ভিয়েতনামের রফতানি আয় ছিল ১ হাজার ৬০৯ মিলিয়ন ডলার। আর মে মাসে বাংলাদেশের রফতানি আয় বেড়ে ১ হাজার ২৩০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ালেও ভিয়েতনামের রফতানি আয় ছিল আরও বেশি— ১ হাজার ৮৬৬ মিলিয়ন ডলার।
পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ওই উদ্যোক্তাদের কাছে পরের মাসগুলো তূলনামূলক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অন্য একটি সূত্রের তথ্য বলছে, এ বছরের প্রথম ছয় মাস, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের আয় ছিল ১১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে ভিয়েতনামের রফতানি আয় ছিল ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে,বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ১২ মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে ভিয়েতনামের রফতানি আয় ছিল ৩০ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। সেখানে একই সময়ে বাংলাদেশের আয় ছিল ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে গত অর্থ বছরে বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনাম প্রায় ৩ বিলিয়ন (২৯৬ কোটি ডলার) ডলার বেশি আয় করেছে।
সানবিডি/এনজে