মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না..........
এ গানটা আমরা অনেকে শুনেছি, পথে চলতে চলতে গুণ গুণ করে গেয়ে বেড়াই। হয়তো এর মর্মার্থ কখোনো ভেবে দেখেনি। আসলেইতো মানুষ মানুষের জন্য। আমরা মানুষেরা যদি মানুষের পাশে দাঁড়াতে না পারি তাহলে আমরা কিসের মানুষ?
এই গানের কথাই হোক স্লোগান ও আমাদের পথচলার মূলমন্ত্র। চারদিকে হিম হিম বাতাস জানান দিচ্ছে শীত কড়া নাড়ছে আমাদের দুয়ারে। এই শীত কারো জন্য মজার মজার খাবার আর কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘরে আরাম করার মৌসুম। আবার কারো জীবনে বয়ে আনে মানববেতর জীবন।
শীত নামক এই প্রাকৃতিক দানবের থাবায় অসংখ্য স্বপ্ন ভঙ্গের ঘটনা ঘটে চলেছে নীরবে। তা থেকে যাচ্ছে চোখের আড়ালে, মাঝে মাঝে হয়তো কিছু পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেলের সুবাদে আমরা জানতে পারি।
এই বিত্তছাড়া মানুষের মৃত্যুর খবরে কারও মাথা ব্যথার নেই! কেনই বা থাকবে, ওরা সমাজের কে? চৌদ্দগোষ্ঠীর হিসাব করেও তো এই কূলহারা মানুষ বিত্তওয়ালাদের আত্মীয় হয় না! আর মানবতা দিয়েই বা কী হবে? আপনি বাঁচলে বাপের নাম! এ ধরনের কিছু মানুষ আছে। তারপরও সমাজের ভাল মানুষ আছে। যারা চাইলে একজন শীতার্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।
আপনার যা আছে তা দিয়ে দাঁড়িয়ে যান গরীব দু:খী মানুষের পাশে, যারা রাস্তার পাশে কনকনে শীতে পড়ে থাকে। অনেকে হয়তো সেখানে মরে পরে থাকে। আপনার ভিতরের মানুষটাকে জাগিয়ে তুলন, তাহলে আশে-পাশের মানুষগুলো জেগে উঠবে।
মানবতার পাশে দাড়ানোর জন্য ইসলাম উৎসাহিত করেছে মানুষকে। আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা ধনী বানান আবার যাকে ইচ্ছা গরিব বানান। তিনি মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। রোগব্যাধি, বিপদাপদ, দারিদ্র্য দিয়ে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং জানমালের ক্ষয় ও ফল-ফলাদি হ্রাসকরণের মাধ্যমে পরীক্ষা করব। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।' (অধ্যায়: ১, সূরা নাম্বার: ২, সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)।
ধনীদের শীতের পোশাক থাকায় তারা শীতের প্রচণ্ডতা বুঝতে পারেন না। তাই ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবতাকে সামনে রেখে শীতার্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অভাবীকে দান করা কর্তব্য। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, 'হে বনি আদম! যদি উদ্বৃত্ত অর্থ দান করো, তাহলে ভালো হবে। আর আটকে রাখলে ক্ষতি হবে।'
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, 'কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে বস্ত্রহীনতায় কাপড় দিলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে সবুজ কাপড় পরিধান করাবেন।' (আবু দাউদ ও তিরমিজি)।
শীত ঋতুও পরীক্ষার একটি ধাপ। নির্ধনতার ফলে শীত মোকাবিলা করার পর্যাপ্ত সম্বল তাদের নেই। আমাদের উচিত তাদের ওপর পতিত এ বিপদ দূরীকরণে চেষ্টা করা। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের বিপদ দূর করবে আল্লাহ তায়ালা (সেই কাজের বিনিময় হিসেবে) কেয়ামত দিবসে তার বিপদ দূর করে দেবেন।' (মুসলিম : ৪৬৭৭)।
সর্বপরি আপনার একটু সদিচ্ছাই পারে আপনার পাশে শীতে কাঁপা মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তাহলে আসুন আমাদের যার যেমন সমর্থ আছে সে তেমন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় মানবতার কাঁধে। আপনার একটু হাতের পরশ তাকে শীতের কনকনে থাবা থেকে বাঁচাতে পারবে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস