পণ্য আমদানিতে তুলনামূলক খরচ কম ও বেশি সুবিধাজনক হওয়ায় দিনাজপুরে অবস্থিত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথ দিয়েও ভারত থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। এর ফলে রেলের আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। অন্যদিকে সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথে আমদানি হওয়ায় নতুন করে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। তবে রেল ইয়ার্ডসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও রেল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে হিলির আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ ও পাথর আমদানি অব্যাহত রয়েছে। সড়কপথে ট্রাকে পণ্য নিয়ে আসার চেয়ে রেলপথে পণ্য নিয়ে আসায় সুবিধা বেশি ও খরচ কম হওয়ায় এ পথের অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর জোর দেয়া উচিত বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত পেঁয়াজ আমদানি করেন ব্যবসায়ী বাবলুর রহমান। তিনি বলেন, করোনার কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আড়াই মাস আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। আমদানি-রফতানির অনুমতি মেলায় আমি প্রথম রেলপথ দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করি। যেখানে ট্রাকে পণ্য নিয়ে আসতে এক কেজি পেঁয়াজের ওপর ট্রাক ভাড়া লাগে ৫-৬ টাকা। সেখানে রেলপথে নিয়ে আসলে অর্ধেকের মতো খরচ হয়। তাই সরকার যেন এ রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানির অনুমতি অব্যাহত রাখে। তাহলে আমরা কম দামে আমদানি করতে পারব। তাহলে দেশে পেঁয়াজের দাম কম থাকবে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, চলমান করোনাভাইরাসের মতো মহামারীর মাঝেও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি যথারীতি চলছে। সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথ দিয়েও বেশকিছু পণ্যের ওয়াগন ভিড়ছে এখানে। যেহেতু হিলি রেলস্টেশনে একটি রেকপয়েন্ট রয়েছে তাই আমদানিকারকরা রেলপথেও পণ্য আমদানি করছেন। সড়কপথে পণ্য আমদানির সময় আমদানীকৃত পণ্যবাহী ট্রাকগুলো জ্যামে আটকা পড়ে। এ কারণে সময়মতো বন্দরে প্রবেশ করতে না পারায় পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে রেলপথে পণ্য আমদানির কারণে খরচ যেমন কম হয় তেমনি বাড়তি পরিমাণ পণ্য আমদানি করা যায়। এ কারণে সড়কপথের চেয়ে রেলপথে পণ্য আমদানিতে উৎসাহিত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। আর হিলি একটি সম্ভাবনাময় রেক পয়েন্ট। এখানে প্রতিদিনই বিভিন্ন আমদানীকৃত পণ্যের ওয়াগন আসা চলমান থাকবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিলি দিয়ে রেলপথে পণ্য আমদানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক আমদানিকারক আসছেন। কিন্তু রেললাইনের ত্রুটির কারণে সেভাবে সম্ভব হচ্ছে না।
হিলি স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শাহিনুর রেজা শাহীন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। এখানে সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এ রেলস্টেশনের আধুনিকায়ন করে ওয়াগন কাটার ড্যাম্প, শেড নির্মাণ এবং স্টেশনটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়, তাহলে এ পথ দিয়ে বর্তমানে যে পণ্য আমদানি হচ্ছে, তার চেয়েও প্রচুর পণ্য আমদানি হবে।
হিলি রেলস্টেশন মাস্টার তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, আগে এ রেলপথ দিয়ে পণ্য না এলেও বর্তমানে রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ওয়াগনযোগে হিলি রেলস্টেশনে আসছে। গত ২৮ মে প্রথম হিলি রেলপথ দিয়ে পেঁয়াজবাহী ওয়াগন আসে। বিরল, দর্শনা ও রহনপুর রেলপথ দিয়ে এসব পণ্য হিলি রেলস্টেশনে আসছে। যাতে এ স্টেশন সচল থাকে, ব্যবসা বৃদ্ধি পায় ও রেলের আয় বৃদ্ধি পায়, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সানবিডি/এনজে