রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকা। ক্যাম্পাসের যেদিকে চোখ যায় শুধু পাখি আর পাখি। বিচিত্র রকমের পাখির কিচিরমিচির শব্দে মনে হয় গহীন অরণ্যের কোনো পাখিরাজ্য যেন।
সবসময় মাথার ওপর উড়ে যাচ্ছে হাজারো শামুক খোল, পানকৌড়ি ও নিশি বক। কেউ ছুটছে খাবার সংগ্রহ করতে, কেউবা গাছের ছোট-ছোট ডাল ছিঁড়ে আনছে বাসা বানানোর জন্য। আবার কেউবা তৈরি করা বাসায় ও গাছের ডালে বসে আছে করছে চেঁচামেচি।
এ ব্যাপারে পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় একযুগ ধরে এই এলাকায় পাখিরা প্রজনন করে আসছিল। কয়েকবছর আগে কারা প্রাচীর ও আবাসন নির্মাণের জন্য বহু গাছ কেটে ফেলে কর্তৃপক্ষ। ওই সময় পাখিরা আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকেও গরমকালে প্রজনন মৌসুমে এখানে পাখিরা আসে।
এবছর করোনাভাইরাসের কারণে শহরে কোলাহল কমে যাওয়ায় পাখির আগমন বেড়েছে বলেও জানান কেউ কেউ।
রাজশাহীর পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা ডা. মাহফুজুর রহমান রাজ বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, রাজশাহী টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ও রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস এলাকায় এমন কোনো গাছ নেই যেখানে পাখিরা বাসা বাঁধেনি। এমনকি রাস্তার ডিভাইডারের ছোটো ছোটো গাছগুলোতেও বাসা বেঁধেছে হাজারো শামুক খোল পাখি।
ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন,একসময় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা ছিল পাখিদের অভায়ারণ্য। প্রায় একযুগ ধরে সেখানেই পাখিরা প্রজনন করে আসছে। কিন্তু তিন বছর আগে কারা প্রাচীরসহ আবাসন নির্মাণের জন্য ছোটো-বড়ো প্রায় ৬০০ গাছ কেটে ফেলে কর্তৃপক্ষ। এই কারণে এ বছর পাখিরা কারাগারের আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে গেছে। পাখি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকায় ছোটো-বড়ো গাছে আশ্রয় নিয়েছে। গত তিন বছর ধরেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় পাখিরা প্রজনন করছে।
তবে এ বছর এখানে পাখির সংখ্যা বেশি বলে মনে করেন তিনি।
পাখি বিশেষজ্ঞ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আমিনুজ্জামান মো. সালেহ্ রেজা বলেন, এখন এসব পাখির প্রজননের সময়। তাই তারা দলবন্ধভাবে এসব এলাকায় বাসা তৈরি করছে। মূলত করোনাভাইরাসে কারণে কয়েকমাস শহরে কোলাহল কম ছিল। এই কারণে পাখিরা শহরের ভিতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে।
অধ্যাপক আমিনুজ্জামান আরও বলেন, ১৫-২০ বছর আগেও রাজশাহী অঞ্চলে খুব বেশি সংখ্যক শামুক খোল চোখে পরত না। কিন্তু এখন অনেক পাখি এই এলাকায় দলবদ্ধভাবে বাস করছে।
তার মতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি ও পর্যাপ্ত খাবারের উৎস থাকায় গত প্রায় একযুগ ধরে শামুখ খোল পাখিরা এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছে। এখন এরা বাংলাদেশের আবাসিক পাখি।
আগে শুধু গরম কালে (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) এরা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রজনন করতে আসত বলেও জনান এই বিশেষজ্ঞ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. নওশাদ আলী বলেন, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে আগে থেকেই পাখি আসত। তবে এবার বেশি এসেছে। এখনও পাখি শিকার বা তারা যেন কোনোভাবে বিরক্ত না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।