প্রাণঘাতি করোনাভাইসের সংক্রমণ খুব শীঘ্রই কমছে না। বরং করোনাভাইরাস আমাদের সঙ্গে আজীবন থাকবে এটা মনে করেই আমাদের পথ চলতে হবে। করোনার সঙ্গে সমন্বয় করেই আমাদের জীবন ও জীবিকা পরিচালনা করতে হবে।
রোববার রাতে সেন্টার ফর সোস্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রিচার্স ফাউন্ডেশনের (সিসার্ফ) উদ্যোগে এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমার একটা ধারণা ছিল, এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়তো খুব শিগগিরই কমে যাবে বা কমার প্রবণতা দেখা যাবে। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা কোনো সুখবর পাচ্ছি না। আবার অর্থনৈতিক দিক থেকেও কোনো সুখবর পাচ্ছি না। বিশেষ করে এখন সারাবিশ্বের অর্থনীতি এতটাই ইন্টিগ্রেটেড যে যেকোনো প্রান্তের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব সবখানে পড়ে। সেদিক থেকে সুখবর আসলে কোথাও নেই।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অর্থনীতির কথা তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, সত্যি কথা বললে আমার মধ্যে এখন ভীতি আছে। এই ভীতির আরেকটি কারণ হলো, গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে অর্থনীতি সুন্দর একটি অবস্থায় ছিল। প্রতিনিয়তই অর্থনীতির আকার বাড়ছিল। এই ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্তও একটানা বাড়ছিল। কিন্তু সেখানে প্রভাব পড়েছে। সেই তাল বা ছন্দ কেটে গেছে। সব মিলিয়ে সার্বিকভাবেই এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে।
এর মধ্যেও দেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণে স্বস্তি জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এতকিছুর মধ্যেও একটি বিষয়ে স্বস্তি আছে যে আমাদের অর্থনীতিটা কৃষিনির্ভর। করোনায় কৃষি অতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যে কারণে সবকিছু চলে গেলেও অন্তত আমরা নুন-পানি দিয়ে ভাতটা খেয়ে শুয়ে পড়তে পারব। উন্নত দেশগুলো তো এমন একটি অবস্থানে পৌঁছে গেছে যে তাদের পানিটা পর্যন্ত আমদানি করে নিতে হয়। ওই জায়গা থেকে আমরা অন্তত অতটা খারাপ অবস্থানে নেই। তাছাড়া ঝড় হলে বড় গাছপালা ভেঙে পড়ে। ঘাসের কিন্তু তেমন কিছু হয় না। আমাদের অর্থনীতি কিন্তু এখনো ওদের বিচারে অনেক নিচের ধাপে। তাই ইন্টারকানেক্টেড হলেও ওদের ওপরে যতটা প্রভাব পড়েছে, আমাদের ওপরে ততটা প্রভাব পড়েনি।
এসময় মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের করোনার ছোবল থেকে বাঁচতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে। একইসঙ্গে অর্থনীতির চাকাও সচল রাখতে হবে। করোনা আমাদের সঙ্গে আজীবন থাকবে। এ থেকে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে। করোনার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। অর্থনীতি ও জীবনধারণের গতির মধ্যে সমন্বয় করে চলতে হবে।
আলোচনায় স্বচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, আমরা সবাই এটা উপলব্ধি করতে পারছি যে করোনা থেকে সহসাই আমাদের মুক্তি নেই। এর অনেকটাই নির্ভর করছে ভ্যাকসিনের ওপর। আমরা সবাই আসলে ভ্যাকসিনের দিকে চেয়ে আছি। কিন্তু বিশ্বের অন্তত ৮০ শাতংশ মানুষের জন্য দুইটি করে ডোজ নিশ্চিত করাটা কত স্বল্প সময়ের মধ্যে করা যাবে, সেটা কিন্তু বড় একটি প্রশ্ন। ফলে আমাদের মেনে নিতে হবে, করোনার সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে। ওইভাবেই নিজেদের তৈরি করে নিতে হবে।
সানবিডি/এনজে