প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসিকে) নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজকে একইসঙ্গে ৫ হাজার রোগী ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হবে, বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের পুরাতন হলগুলো নতুনভাবে সংস্কার করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে সংস্কার করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরগুলো, পাবলিক লাইব্রেরিকেও ডিজটাল করে উন্নত করা হবে, যুক্ত হবে ডিজিটাল ব্যবস্থা।’ আগামী প্রজন্মের জন্য এগুলো সব করে যেতে চাই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে এই কর্মসূচিতে কথা বলতে হবে, আমি সেইভাবে জানতাম না। আমার আরেকটা কর্মসূচি ছিল। যেখানে ভিডিও কনফরেন্সের মাধ্যমে আমরা কাজ করছিলাম। সেখানে ইতোমধ্যে বলেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিটাকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে চাই। সম্পূর্ণ আধুনিকভাবে টিএসসি প্রতিষ্ঠা করব। এটা হচ্ছে আমাদের ছাত্র শিক্ষকদের একটা মিলন কেন্দ্র। সেটাকে আরও সুন্দরভাবে তৈরি করব। সেই নির্দেশ আমি দিয়েছি। ওখানে নতুনভাবে যা যা করার দরকার করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে আমি কথা বলেছিলাম। আমি জানি যে বিশ্ববিদ্যালয় এটা করতে পারবে না। কাজেই যে টাকা পয়সার খরচা লাগে...।
আমি তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, বঙ্গবন্ধুও ছাত্র ছিলেন। কাজেই আমরাই এটা করে দিবো, সেটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজটাকেও আমরা খুব সুন্দরভাবে করতে চাই। কারণ এটা একটা আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান, সারাবাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য আসে। কাজেই সেখানে যাতে ৫ হাজার রোগীর চিকিৎসা হতে পারে, সেইভাবে আমরা নতুনভাবে এটাকে গড়ে তুলতে চাই। হ্যাঁ, পুরনো ঐতিহ্য কিছুটা আমরা ধরে রাখতে পারি। কিন্তু ভিতরে সম্পূর্ণ একটি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ আমরা নির্মাণ করে দেব। ইতোমধ্যে সে প্লানটাও তৈরি করা আছে। সেটা যাতে দ্রুত হয়, সে ব্যবস্থাটা করতে চাই। সেখানে আমাদের ঐতিহ্যগুলো রক্ষা করা; মেডিকেল কলেজের সঙ্গে যেহেতু আমাদের শহীদ মিনার এই শহীদ মিনারটাকেও সুন্দরভাবে তৈরি করা, যেভাবে আছে ডিজাইনটা ঠিক রেখে শহীদ মিনারটা করা। শহীদ মিনারের সাথে ঢাকা মেডিকেল কলেজ; এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল। সেই আমতলায় দাঁড়িয়ে আমাদের ভাষা আন্দোলন শুরু। যেখানে ১৬ ই মার্চ জাতির পিতা ১৯৪৮ সালে মিটিং করেছিলেন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য। কাজেই সেই আমতলা’টাও রক্ষা করা। সবকিছু নিয়ে আমরা করব, সেই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছি।’
তাছাড়া ময়মনসিংহ নতুন বিভাগীয় শহর, সেখানে বিভাগীয় কমিশনার ভবন নির্মাণের নকশাও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তা ছাড়া আমাদের বিপিএটিসি’ প্রশাসন ক্যাডারদের ট্রেনিংয়ের যে ইনস্টিটিউট, সেটা খুবই করুণ-জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেখানে একটি নতুন প্ল্যান নতুন ডিজাইন আমরা করে দিতে চাচ্ছি। তারপর প্ল্যানটা দেখেও অনুমোদন দিয়ে দিলাম।’
‘সেই সাথে রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরিটাকে একটা আধুনিক একটা লাইব্রেরি করতে চাই। কারণ এটা খুবই পুরনো। খুবই জরাজীর্ণ এবং বিশেষ করে অডিটরিয়ামটা খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। যাতে একটা আধুনিক পাবলিক লাইব্রেরি তৈরি করা যায়, যেখানে ডিজিটাল ব্যবস্থা থাকবে। ডিজিটাল লাইব্রেরি হবে এবং সেখানে সুন্দর সাইবার ক্যাফে’রও ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে বসতে পারে। আমাদের যে জাতীয় জাদুঘর, তার পিছনে যে পুকুর এবং পাবলিক লাইব্রেরির ল্যান্ডস্কেপটা, আর পাবলিক লাইব্রেরিটাকে আমরা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই। তারও একটা প্ল্যান অলরেডি করলাম এবং সেটা তৈরি করাই আছে। সেটার কাজ যাতে দ্রুত শুরু হয়, সে ব্যবস্থা আমরা নিতে চাচ্ছি। অর্থ্যাৎ আমরা প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে একটা আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন করে আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য এটা তৈরি করে দিয়ে যেতে চাই।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হলগুলো আছে, সেগুলো সংস্কার এবং পুকুরগুলোকে আবারও সংস্কার করা হবে সেই নির্দেশনাও দিয়ে দিয়েছি বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, `এ কাজগুলি আমি করতে চাই। এটা আমার দলের, আমার উচিত। কাজেই আমরা এভাবে করে দিতে চাই।’
তার আগে বুধবার (০২ সেপ্টেম্বর) বিপিএটিসি’র প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের ২০ তলা বিশিষ্ট ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন’ এর নকশা এবং ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দপ্তর স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত প্ল্যানের ভূমি ব্যবহার’ পরিকল্পনার উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, শফিউল ইসলাম চৌধুরী নাদেল, বিপ্লব বড়ুয়া, অসীম কুমার উকিল, মৃণাল কান্তি দাস, হাবিবুর রহমান সিরাজ, সুজিত রায় নন্দী, সেলিম মাহমুদ, রোকেয়া সুলতানা, ওয়াসিকা আয়শা খান, শাম্মী আহমেদ, সায়েম খানসহ অন্যরা।
সানবিডি/এনজে