দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরায় অবস্থিত ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়। বেশ কয়েকদিন দিন ধরে এ স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এ ধারাবাহিকতায় গতকাল আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪২ টাকায় উঠেছে। দাম বেড়েছে কেজিতে ১৭-১৮ টাকা। স্থানীয় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। এ কারণে দেশের বাজারেও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
শনিবার ভোমরা স্থলবন্দরের পাইকারি আড়তগুলো ঘুরে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। তিনদিন আগেও এখানকার পাইকারি বাজারে আমদানি করা এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২৪-২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে তিনদিনের ব্যবধানে ভোমরা স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ১৭ টাকা বেড়েছে।
সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত সবচেয়ে বড় মোকাম সুলতানপুর বড় বাজার। এখানকার পাইকারি দোকানগুলোয় শনিবার ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৪৪-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। তিন-চারদিন আগেও আমদানি করা এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২৬-২৭ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে তিন-চারদিনের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৮ টাকা বেড়েছে।
একইভাবে তিন-চারদিন আগে প্রতি কেজি দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ মানভেদে ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা কেজিপ্রতি ৫৫-৬০ টাকায় কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়।
পেঁয়াজের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ভারত থেকে বাড়তি দামে আমদানি করাকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এ কারণে পণ্যটির আমদানিতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। তাই দেশের বাজারেও ক্রমান্বয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠছে পেঁয়াজের দাম।
ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স গনি অ্যান্ড সন্স ভারত থেকে প্রতিদিন ১০-১২ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি করে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক অশোক কুমার বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে গত তিন-চারদিনে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তিন-চারদিন আগে যে মানের পেঁয়াজ আমদানিতে কেজিপ্রতি ২১-২২ টাকা খরচ হয়েছে, সেই একই মানের পেঁয়াজ এখন ভারতের বাজারেই কেজিপ্রতি ৩৭-৩৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে পরিবহন ব্যয় ও শুল্ক। এতে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি প্রায় ৪০ টাকা পড়ছে। দেশে আনার পর আমদানিকারকরা সামান্য লাভ রেখে এসব পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন।
এর পেছনে প্রতিকূল আবহাওয়াকে চিহ্নিত করে অশোক কুমার বলেন, ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে ভারি বৃষ্টিপাত ও বন্যা হয়েছে। এর জের ধরে পেঁয়াজের উৎপাদন ও সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষত নাসিক ও আশপাশের অঞ্চলগুলো বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এসব জায়গায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশের বাজারে নাসিক থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আসে। তাই দেশের বাজারেও পেঁয়াজের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়তির দিকে রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পেঁয়াজ আমদানিতে দেশীয় আমদানিকারকরা বিহারের প্রতি ঝুঁকবেন। তাই সেখান থেকেও বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হবে। সুতরাং তাড়াতাড়ি দেশের বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
এ ব্যাপারে ভোমরা স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশন জানিয়েছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৬৪ হাজার ৭৮১ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে গত জুলাইয়ে আমদানি হয়েছে ৩৮ হাজার ৩৩৮ টন ও আগস্টে ২৬ হাজার ৪৪৩ টন। এর আগের অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ভারত থেকে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে দেশের বাজারে ৫২ হাজার ৪৪২ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। এর মধ্যে জুলাইয়ে আমদানি হয়েছিল ৩২ হাজার ৪৩২ টন ও আগস্টে ২০ হাজার ১০ টন পেঁয়াজ। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বেড়েছে ১২ হাজার ৩৩৯ টন।