নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ নিয়ে নতুন করে সংকটে পড়তে যাচ্ছে ভারতসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো। মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার লাসালগাঁওয়ে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ বেচাকেনার পাইকারি বাজারের অবস্থান। বাংলাদেশে আমদানি করা পেঁয়াজের সিংহভাগ জোগান দেন নাসিকের রফতানিকারকরা। গত আগস্টে নাসিকের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরে এসে এ মূল্যবৃদ্ধি যেন লাগাম ছাড়িয়েছে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না পেঁয়াজের বাড়তি দাম। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকদের ভাষ্য, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের উৎপাদন কমিয়েছে। সরবরাহে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের দাম। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
নাসিকের পাইকারি বাজারে চলতি বছরের মার্চে প্রতি কুইন্টাল রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৪৯৮ রুপি (ভারতীয় মুদ্রা)। এর পর পরই মহারাষ্ট্রের কৃষকরা নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে শুরু করেন। এর জের ধরে কমতে শুরু করে পণ্যটির দাম। এ ধারাবাহিকতায় জুলাই নাগাদ নাসিকের বাজারে প্রতি কুইন্টাল রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের দাম কমে ৭৩০ রুপিতে নেমে আসে।
তবে আগস্ট থেকে বাড়তির দিকে রয়েছে পেঁয়াজের দাম। নাসিকের পাইকারি বাজারে আগস্টের শুরুতে রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের দাম কুইন্টালে ১০০ রুপি বেড়ে যায়। মাসের শেষ দিকে এখানকার পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের দাম আরো বেড়ে ১ হাজার ২০০ রুপিতে উন্নীত হয়।
চলতি সেপ্টেম্বরেও রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ কার্যদিবসে নাসিকের পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল রফতানিযোগ্য পেঁয়াজ ১ হাজার ৯৬৮ ডলারে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে জুলাইয়ের তুলনায় চলতি মাসে নাসিকে পেঁয়াজের দাম প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। শুধু আগস্টের শেষ সপ্তাহেই পণ্যটির দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, নাসিকের পাইকারি বাজারে দীর্ঘদিন পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল। বিশেষত মার্চের শেষ নাগাদ নতুন মৌসুমের পণ্য বাজারে আসায় ওই সময় থেকে পেঁয়াজের দাম খুব একটা বাড়েনি। তবে বর্ষা শুরু হলে প্রতি বছরই পেঁয়াজের দাম কিছুটা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। কেননা পেঁয়াজ একটি পচনশীল পণ্য। বৃষ্টির কারণে প্রতি বছর অনেক পেঁয়াজ ক্ষেতে নষ্ট হয়। পরিবহনের সময় বৃষ্টির পানিতে অনেক পেঁয়াজ পচে যায়। ফলে বর্ষাকালে সরবরাহ সংকট থেকে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এবারের বর্ষায় নাসিকের বাজারে পেঁয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। কোনোভাবেই পণ্যটির মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর পেছনেও প্রতিকূল আবহাওয়াকে চিহ্নিত করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য, এবার নাসিকসহ পুরো মহারাষ্ট্রে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। এ রাজ্যের পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকাগুলোয় ভারি বৃষ্টির দেখা মিলেছে। কোথাও কোথাও রীতিমতো বন্যা চলছে। এর জের ধরে পেঁয়াজের সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ শৃঙ্খল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে, যা নাসিকের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
নাসিকের দিনদোরি পাইকারি বাজারের অপারেটর ও অনিয়ন কমিশনের এজেন্ট সুরেশ দেশমুখ বলেন, আগস্টজুড়ে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর জের ধরে এ সময় উৎপাদিত পেঁয়াজের সিংহভাগ পচে গেছে। বৃষ্টির কারণে আগস্ট থেকে বাজারে আসা পেঁয়াজের মানও বেশ নিম্ন। মূলত এ সময় থেকে বাজারে আসা নিম্নমানের পেঁয়াজের পরিমাণ প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশ। প্রতিকূল আবহাওয়ায় সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হলেও অভ্যন্তরীণ ও রফতানি বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা কমেনি, যা পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে, কতদিন পেঁয়াজের দাম এমন বাড়তি থাকবে? খাতসংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, যেহেতু আবহাওয়া পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়ে আসেনি এবং এরই মধ্যে উৎপাদিত পেঁয়াজের বেশির ভাগ হয় নষ্ট হয়ে গেছে, নাহলে মান কমেছে, তাই পরবর্তী মৌসুমের পণ্য বাজারে আসার আগে অবধি নাসিকের পাইকারি বাজারে রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের দাম চাঙ্গা থাকতে পারে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতের বাজারে খরিফ মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। তার আগ পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হতে পারে তুলনামূলক নিম্নমানের পেঁয়াজ।
এ বিষয়ে লাসালগাঁও পাইকারি বাজারের চেয়ারম্যান জয়দত্ত হোলকার বলেন, খরিফ মৌসুমের নতুন পণ্য বাজারে আসার আগে নাসিকে পেঁয়াজর দাম কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বরং লাসালগাঁওয়ের এগ্রিকালচারাল প্রডিউসড মার্কেট কমিটি (এপিএমসি) মনে করছে, অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ নাসিকে রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের দাম কুইন্টালপ্রতি ২ হাজার রুপি ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও বাড়তে পারে পেঁয়াজের দাম।