চীন থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ দাম বেড়েছে মূল্যবান ধাতুর স্বর্ণের। বিনিয়োগের নিরাপদ পণ্য হিসেবে দেশে দেশে বিনিয়োগকারীদের কাছে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবান ধাতুটির দাম এরই মধ্যে ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থান ছুঁয়েছে। বৈশ্বিক গণমাধ্যম থেকে শুরু করে ধাতুর বাজার—সবখানে আলোচনার কেন্দ্রে এখন স্বর্ণ। তবে স্বর্ণের পাশাপাশি অনেকটা নীরবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে রুপার বাজারও। চাহিদার আগের তুলনায় বেড়ে যাওয়ার জের ধরে করোনা মহামারীর মধ্যে বিগত পাঁচ মাসে মূল্যবান ধাতুটির দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও স্বর্ণের তুলনায় রুপার এ চাঙ্গা ভাব নিয়ে আলোচনা তুলনামূলক কম। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ না কমলে এবং চাহিদা বাড়তির দিকে থাকলে আগামী দিনগুলোতে রুপার বাজার বর্তমানের তুলনায় আরো চাঙ্গা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। খবর মাইনিংডটকম ও ব্লুমবার্গ।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চীনে করোনা মহামারী চরম আকার ধারণ করে। ইউরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে মার্চ নাগাদ। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতি আউন্স রুপার স্পটমূল্য ছিল ১৫ ডলারের কাছাকাছি।
ধাতুর বাজারে বিনিয়োগকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান নবেল গোল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কলিন প্লামি বলেন, করোনা সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় টানা লকডাউনে চলে যায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। মার্কিন বিনিয়োগকারীরা অর্থলগ্নি নিয়ে সাময়িক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন। তারা বুঝতে পারছিলেন না, করোনা মহামারীর সময় কোথায় অর্থলগ্নি করা তুলনামূলক নিরাপদ হবে। পরে ধীরে ধীরে সংশয় কাটতে শুরু করে। তুলনামূলক নিরাপদ বিবেচনায় মূল্যবান ধাতুর বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হন তারা।
এ পরিস্থিতি ধাতুর বাজারে স্বর্ণ ও রুপার চাহিদা বাড়িয়েছে। প্রভাব পড়েছে দামেও। বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তার কারণে এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতি আউন্স রুপার দাম ১৩ ডলার ৯২ সেন্টে নেমেছিল। তবে এ দরপতন ছিল সাময়িক। বিনিয়োগকারীদের মন থেকে অনিশ্চয়তা কাটার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করে মূল্যবান ধাতুটির দাম।
এ ধারাবাহিকতায় আগস্টে এসে রীতিমতো রেকর্ড করে রুপার বাজার। ১০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতি আউন্স রুপার দাম ওঠে ২৯ ডলার ১৩ সেন্টে। সেই হিসাবে মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে রুপার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। একই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
যদিও ব্লুমবার্গ ইনডেক্স অনুযায়ী, সর্বশেষ কার্যদিবসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৯৩৩ ডলার ৯০ সেন্টে আর রুপা আউন্সপ্রতি ২৭ ডলার ১২ সেন্টে। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলের তুলনায় এটাও মূল্যবান ধাতুটির বাড়তি দাম।
এ বিষয়ে কলিন প্লামি বলেন, করোনা মহামারীর শুরুর দিকে মূল্যবান ধাতুর বাজারে স্বর্ণ ও রুপার চাহিদা অনুপাত ছিল, যথাক্রমে ৬০ ও ৪০ শতাংশ। বর্তমানে তা ৫০ ও ৫০ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ করোনাকালে শুধু স্বর্ণের চাহিদা ও দাম বাড়েনি। একই হারে বেড়েছে রুপার চাহিদা ও দাম। তাই বলা যায়, ২০২০ সালটা শুধু স্বর্ণের নয়, রুপারও। যদিও বৈশ্বিক গণমাধ্যম থেকে শুরু করে ধাতুর বাজার—সবখানে রুপার এ উত্থান নিয়ে আলাপ-আলোচনা বেশ কম।
সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণ ও রুপার দাম বাড়ে বিশ্বজুড়ে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিলে। কিংবা মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের মান কমে গেলে। করোনা মাহামারীর সময় মুদ্রাবাজারে ডলারের অবস্থান নাজুক হয়েছে। চীন ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ববাসী। দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা এখনো চলছে। উত্তপ্ত রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য। নভেম্বরে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয়েছে সহিংস বিক্ষোভ। করোনা মহামারীর পাশাপাশি এসব পরিস্থিতিও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণ ও রুপার দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলে এক নোটে জানিয়েছে নোবেল গোল্ড।
২০১১ সালের ১ এপ্রিল ধাতুর বাজারে রুপার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চে বা আউন্সপ্রতি ৪৯ ডলার ৫২ সেন্টে উঠেছিল। করোনাকালে মূল্যবান ধাতুটির দাম ওই অবস্থানে না উঠলেও আগামী কিছুদিন চাঙ্গা থাকতে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।