এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে চালের রফতানিমূল্যে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। গত সপ্তাহে ভারত ও ভিয়েতনামে খাদ্যপণ্যটির রফতানিমূল্য আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে থাইল্যান্ডের বাজারে। দেশটিতে এ সময় চালের রফতানিমূল্য আগের তুলনায় কমেছে। এই খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত থেকে চালের বাড়তি রফতানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভিয়েতনামের বাজারে খাদ্যপণ্যটির সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। এসব কারণে দেশ দুটিতে বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম। এমনকি ভারতে চালের দাম দেড় বছরের সর্বোচ্চে উন্নীত হয়েছে। তবে চাহিদা তুলনামূলক কম থাকার কারণে থাইল্যান্ডে খাদ্যপণ্যটির দাম কমতির দিকে রয়েছে। খবর রয়টার্স ও সাকসেসফুল ফার্মিং।
বর্তমানে বিশ্বে ভারত দ্বিতীয় শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ হলেও খাদ্যপণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় দেশটির অবস্থান শীর্ষে। সর্বশেষ সপ্তাহে ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৩৮৭-৩৯৪ ডলারে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও দেশটিতে রফতানিযোগ্য এ জাতের চাল টনপ্রতি ৩৮৪-৩৯০ ডলারের মধ্যে বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য চালের দাম টনে সর্বোচ্চ ৪ ডলার বেড়েছে। দেড় বছরের মধ্যে ভারতে এটাই রফতানিযোগ্য চালের সর্বোচ্চ দাম।
বর্তমানে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। সংক্রমণের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের পর দেশটি বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষে উঠেছে। লকডাউনের শুরু থেকেই ভারতে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। বন্দরগুলোয় শ্রমিক সংকটে ওই সময় চাহিদা অনুযায়ী চাল রফতানি করতে পারেননি ভারতীয় রফতানিকারকরা। এখন রফতানি পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোয় ভারতীয় চালের রফতানি বাড়তির দিকে রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খাদ্যপণ্যটির দামে।
এ ব্যাপারে কর্ণাটকভিত্তিক ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা বলছেন, আগামী দিনগুলোয় বাংলাদেশের বাজারের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন ভারতীয় চাল রফতানিকারকরা। এবার প্রতিকূল আবহাওয়া ও বন্যার কারণে বাংলাদেশে ধান-চাল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এর জের ধরে বাংলাদেশের বাজারে ভারত থেকে চাল রফতানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সম্ভাবনার আভাস ভারতীয় চালের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাক হিসেবে কাজ করেছে।
ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনামেও খাদ্যপণ্যটির দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। সর্বশেষ সপ্তাহে ভিয়েতনামের বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৪৯৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও দেশটিতে রফতানিযোগ্য এ জাতের চাল টনপ্রতি ৪৯০ ডলারের মধ্যে বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভিয়েতনামের বাজারে রফতানিযোগ্য চালের দাম টনে সর্বোচ্চ ৫ ডলার বেড়েছে।
হো চি মিন সিটির ব্যবসায়ীরা জানান, করোনা মহামারীর মধ্যে ভিয়েতনামে চালের সরবরাহ সীমিত হয়ে এসেছে। এর বিপরীতে রফতানি চাহিদা রয়েছে পর্যাপ্ত। চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়ে দেশটিতে বাড়তে শুরু করেছে চালের রফতানিমূল্য। ভিয়েতনামের মেকং ডেল্টা প্রদেশের রফতানিকারক তিয়েন গিয়াং বলেন, ভিয়েতনামিজ রফতানিকারকরা এরই মধ্যে মালয়েশিয়া, পূর্ব তিমুর ও আফ্রিকার দেশগুলোয় চাল রফতানিতে চুক্তি করেছে। তবে খাদ্যপণ্যটির সরবরাহ সীমিত হয়ে আসায় নির্ধারিত সময়ে খাদ্যপণ্যটি রফতানি করা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। শরৎ শেষে নতুন শস্য উঠলে ভিয়েতনামে চালের দাম কমতে পারে।
এদিকে ভারত ও ভিয়েতনামে বাড়লেও বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ডে খাদ্যপণ্যটির রফতানিমূল্য আগের তুলনায় কমে এসেছে।
সর্বশেষ সপ্তাহে থাইল্যান্ডের বাজারে প্রতি টন রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৪৮৭ ডলার। এক সপ্তাহ আগেও দেশটিতে রফতানিযোগ্য এ জাতের চালের সর্বনিম্ন দাম ছিল টনপ্রতি ৫০০ ডলার। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে থাইল্যান্ডের বাজারে রফতানিযোগ্য চালের সর্বনিম্ন দাম টনে ১৩ ডলার কমেছে।
ব্যাংককভিত্তিক রফতানিকারকরা জানান, খরার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে থাই চালের দাম বাড়তি রয়েছে। ভারত ও ভিয়েতনামের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় আমদানিকারকরা চাল কিনতে চাইছেন না। এর প্রভাব পড়েছে থাইল্যান্ডের চালের বাজারে। দেশটিতে রফতানিযোগ্য চালের দাম আগের তুলনায় কমতে শুরু করেছে।