ঝালকাঠি জেলার ৪টি উপজেলায় ১৩৭৮ টি দরিদ্র ও অস্বচ্ছল পরিবারের জন্য প্রধামন্ত্রীর গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।
১৯ কোটি ৭২ লাখ ২৭ হাজার ৭৪২ টাকা ব্যয় করে এসব গৃহ নির্মাণ করেছে সরকার। মাঠ পর্যায়ে গৃহনির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন উপজেলা প্রকল্প বায়স্তবায়ন কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠি জেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় গৃহনির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত তিন বছরে ১০ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০৬৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও সরকার ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পের অর্থ দিয়ে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার ৭৪২ টাকা ব্যয়ে ৩১১টি গৃহনির্মাণ করে। টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের অর্থ অপচয় রোধ করে এই ধরনের গৃহনির্মাণ প্রকল্প একটি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রসংশিত হয়েছে।
শুরুর বছর ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে আশ্রয়ন প্রকল্প- ২ এর আওতায় প্রতিটি গৃহনির্মাণের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল এবং পরবর্তী ২ বছর গৃহনির্মাণ খাতে ঘর প্রতি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে অর্থ বরাদ্দ হয়। বর্তমানে এই প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৫৭টি গৃহনির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে প্রতি ঘরের জন্য ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১ টাকা করে ব্যয়ে ১৪২টি গৃহনির্মাণে ৩ কোটি ৬৭ লাখ ১১ হাজার ৪শ টাকা ব্যয় করেছে।
২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ঘরের ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়ে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা করা হয়েছে। চলতি বছর ৪টি উপজেলায় ৫ কোটি ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪০ টাকা ব্যয়ে ১৬৯টি গৃহ নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। যে সকল গরিব ও অস্বচ্ছল পরিবারে নিজস্ব জায়গা রয়েছে কিন্তু বসত গৃহ জরাজীর্ণ, অর্থাভাবে বাসযোগ্য ঘর নির্মাণ করতে পারছেন না এমন সব পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী গৃহনির্মাণ করে দিচ্ছেন।
ঝালকাঠি জেলার ৪টি উপজেলার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় সদর উপজেলায় ৩৫৬, নলছিটি উপজেলায় ৩৫৭ এবং রাজাপুর উপজেলায় ২০১ ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় ১৫৩টি পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ করা হয়েছে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ধীন গৃহনির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ৭৩টি, নলছিটি উপজেলায় ৯০টি, রাজাপুর উপজেলায় ৮১টি এবং কাঁঠালিয়া উপজেলায় ৬৭টি গৃহনির্মাণ করা হয়েছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা সুবিধাভোগীদের নির্বাচন করে তালিকা তৈরি করেন। এই তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসক মাঠপর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে তালিকা যাচাই বাছাই করে সুবিধাভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠান। পরবর্তীতে অর্থ বরাদ্দের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে গৃহনির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা স্ব স্ব ইউনিয়নে সমন্বয় ও তদারকীর কাজ করেন।
ঝালকাঠি জেলায় ৪টি উপজেলার মধ্যে ২টি উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রয়েছেন। অন্য ২টি উপজেলায় অতিরিক্তি দায়িত্ব হিসেবে এই দুজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ৪টি উপজেলারই দায়িত্ব পালন করেন। এ কারণেই মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত জনবলের অভাবেই নিবিড় তদারকীর ক্ষেত্রে এই জনবল সংকট বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা।