চলতি মৌসুমে সময় বাড়িয়েও ধান-চাল লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না সরকার।বাজারে ধান-চালের দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চালকল মালিকরা। তাদের দাবি, মহামারি করোনাভাইরাসের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও দফায় দফায় বন্যার কারণে এবার সরকারকে যথাসময়ে নির্ধারিত পরিমাণ ধান-চাল সরবরাহ করতে পারছেন না তারা। এদিকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ না হওয়ায় এবার চাল আমদানির দিকেই ঝুঁকছে সরকার।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নেয়া সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের নির্ধারিত সময় শেষ হচ্ছে ১৫ সেপ্টেম্বর। এই সময়ের মধ্যে ধান, সিদ্ধ ও আতপ চাল মিলিয়ে মোট ২০ লাখ মেট্রিক টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সময় শেষ হয়ে এলেও অর্ধেক খাদ্যশস্যও সংগ্রহ করতে পারেননি চালকল মালিকরা।
চলতি বছর ধান-চাল সংগ্রহে মোট ২০ লাখ মেট্রিক টনের মধ্যে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান, ১১ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের কথা ছিল। কিন্তু খাদ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, গত ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়েছে। এছাড়া সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন। আর আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৮৯ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন।
এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, এবার সারাদেশে দুই কোটি মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। তারপরেও ধান চাল সংগ্রহে কেন এই পরিস্থিতি? প্রশ্নের জবাবে চালকল মালিকরা বলছেন, ঝড়, বন্যা ও করোনাভাইরাসের কারণে তারা ক্ষতির মুখে রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে চালকল মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দেশের সব খাত ক্ষতির মুখে। লোকসানে চালকল মালিকরাও। সরকার ধান-চালের যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে তার থেকে বেশি দামে বাজার থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে চালকল মালিকরা লোকসান দিয়ে ধান-চাল সংগ্রহ করতে চাচ্ছেন না। তারা বলছে, তাদের জেলে পাঠালেও এবার ধান-চাল সরবরাহ করার পরিস্থিতি নেই।’
এদিকে যেসব চালকল মালিকরা সরকারের ধান চাল সংগ্রহে অসহযোগিতা করেছেন, চুক্তি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য অধিদফতর। অধিদফতরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বলেন, ‘এরই মধ্যে জেলা ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে যারা বৈরি আবহাওয়ার কারণে ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারেনি, তাদের বিষয়ে বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।’
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব চালকল মালিক সময়মত ধান-চাল সরবরাহ করতে পারেনি তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এদের মধ্যে যারা ব্যর্থ হয়েছেন তাদের তালিকার পাশাপাশি যারা শতভাগ সংগ্রহ করতে পেরেছেন তাদের তালিকাও থাকবে। যারা সংগ্রহ করতে পেরেছে তাদের ভবিষ্যতে ইনসেনটিভ দেওয়ার কথাও ভাবছে মন্ত্রণালয়। আর যেসব চালকল মালিক একেবারেই সংগ্রহ করতে পারেনি, তারা কী কারণে পারেনি তাও পর্যালোচনা করবে। এসব মূল্যায়নের ওপরেই সিদ্ধান্ত আসবে।
কেজিপ্রতি বোরো ধান ২৬ টাকা ও সিদ্ধ বোরো চাল ৩৬ টাকা দাম নির্ধারণ করে চলতি মৌসুমে ২০ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান, সিদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয় খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান এবং ৭ মে থেকে বোরো চাল সংগ্রহ শুরু হয়। গত ৩১ আগস্ট সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও ওই সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহ না হওয়ায় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে এই অতিরিক্ত সময়ের মধ্যেও অর্ধেক পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রক করতে পারেননি মিলাররা।
এদিকে এবার কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ধান-চাল সংগ্রহ না হওয়ায় প্রয়োজনে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী চাল আমদানিরও আভাস দিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সানবিডি/এনজে