‘এক ব্যক্তির কোম্পানি’ খোলার বিধান রেখে কোম্পানি আইন সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। গত ৭ সেপ্টেম্বর এই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত ২০ জুলাই এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছিলো মন্ত্রিসভা।
প্রস্তাবিত আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘এক ব্যক্তির কোম্পানি’ হলো সেই কোম্পানি, যার বোর্ডে সদস্য থাকবেন কেবল একজন। পরিচালক ও প্রধান ব্যক্তি একজন থাকেন বলে এ ধরনের কোম্পানির পর্ষদ সভা করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নিয়মের ছাড় পায়। ১৯৯৪ সালের বিদ্যমান কোম্পানি আইনঅনুযায়ী বাংলাদেশে কোনো কোম্পানির নিবন্ধন নিতে হলে একাধিক ব্যক্তির মালিকানা থাকার বিধান রয়েছে। একক কোনো ব্যক্তি কোম্পানি নিবন্ধন ও পরিচালনা করতে পারেন না। পাশের দেশ ভারতের শিল্পপতি ড. জামশেদ জিজি ইরানি ২০০৫ সালে দেশটিতে প্রথম এক ব্যক্তি কোম্পানি সম্পর্কে ধারণা তুলে ধরেন। ২০১৩ সালে ভারত সে দেশের আইন সংশোধন করে এক ব্যক্তির কোম্পানি নিবন্ধন ও পরিচালনার প্রচলন করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোম্পানি আইনের বেশ কিছু ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে খসড়াটি মন্ত্রিসভায় পাঠানোর পর তাতে এক ব্যক্তির কোম্পানি প্রথা অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এই জাতীয় কোম্পানিতে লিখতে হবে ওয়ান পার্সন কোম্পানি বা ওপিসি।
আর পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে লিখতে হবে পিএলসি এবং প্রাইভেট লিমিটেডে লিখতে হবে শুধুমাত্র এলটিডি।
কোম্পানি আইন আইন অনুযায়ী এখন থেকে তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০৬ পরিপালন করে সকল ধরণের কার্যক্রম অনলাইনে করতে পারবে।
মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলছিলেন, ‘এক ব্যক্তির কোম্পানি- এটা আমাদের পারসেপশনে ছিল না। আমাদের কাছে বিভিন্ন দিক থেকে প্রস্তাব এসেছে যে এক ব্যক্তিকে কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন করা হলে অনেক বিনিয়োগ আসবে। সে কারণে এক ব্যক্তির কোম্পানির নিবন্ধন, পরিচালনা ও বিধিবিধান সংশোধিত আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে হস্তান্তরকারীর ব্যক্তিগত উপস্থিতি এবং কমিশনের মাধ্যমে হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। এক ব্যক্তির কোম্পানি খোলার সুযোগ এবং ২১ দিনে বোর্ড মিটিংয়ের ব্যবস্থা রাখায় বিশ্ব ব্যাংকের ব্যবসায় পরিবেশের সূচকে আমাদের পয়েন্ট বেড়ে যাবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোম্পানি উঠে গেলে পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা দেখেছি, যখন কোম্পানি উঠে যায়, তখন পাওনাদাররা ঘোরেন।’ কোম্পানি আইন সংশোধন করে অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধনের বিধান রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর কোম্পানি আইন সংশোধন প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। এখন এই আইন সংশোধনীর প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ায় তা পাসের জন্য সংসদে তোলা হবে।