প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিজেএমসি’র বন্ধ ঘোষিত মিলসসমূহের অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত শ্রমিকদের পাওনা নগদ ও সঞ্চয়পত্রে পরিশোধের কার্যক্রম সূচনা করলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার ডেমরায় করিম জুট মিলস লিমিটেডে এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাটকল শ্রমীকদের দায়িত্ব নিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিজেএমসি’র বন্ধ ঘোষিত মিলসসমূহের অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত শ্রমিকদের পাওনা নগদ ও সঞ্চয়পত্রে পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হল। প্রয়োজনীয় নিরীক্ষান্তে একই প্রক্রিয়ায় বাকী মিলগুলোর শ্রমিকদের পাওনাও শীঘ্রই পরিশোধ করা হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান,এমপি ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে, এম, আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন ।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া ।
মন্ত্রী বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে ৩০ জনের সঞ্চয়পত্র তাদের হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কার্যক্রম শুভ উদ্বোধন করা হলো। করিম জুট মিলের অবসানকৃত শ্রমিকদের (১,৭৫৯জন) পাওনা ১৯২.০০কোটি টাকা; অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের (৬১২জন) বকেয়া পাওনা ৩৪.৩৭ কোটিটাকা; ও বদলী শ্রমিকদের (২,৬২৫জন) পাওনা ২৫.২১ কোটি টাকাসহ মোট ২৫১.৫৮কোটি টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বন্ধ ঘোষিত ২৫টিমিলের ২৪,৬০৯ জন স্থায়ী কর্মরত শ্রমিকদের পাওনা বাবদ প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকা এবং ২০১৩ সনের পরে হতে অবসরপ্রাপ্ত ১০,১০৭ জনশ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়ন বাবদ পাওনা প্রায় ১,০০০ কোটি টাকাসহ মোট প্রায় ৫,০০০.০০ কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে ৩টি অর্থবছরে পরিশোধের প্রস্তাব করা হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের আর্থিক দুরাবস্হার কথা সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করে সমুদয় পাওনা চলতি অর্থবছরে এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। শ্রমিকদের ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকের পাওনার ৫০% নগদে এবং অবশিষ্ট ৫০% তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করার নির্দেশনা ও প্রদান করেন।
তিনি বলেন, শ্রম আইন, ২০০৬ এর বিধান অনুযায়ী ৬০ দিনের নোটিশের পরিবর্তে কাজ করা ছাড়াই শ্রমিকদের জুলাই এবং আগষ্ট ২০২০ মাসের মজুরী ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা এককালীন পরিশোধের নিমিত্ত যাবতীয় পাওনাদির হিসাব নিরীক্ষাপূর্বক চূড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নিরীক্ষান্তে করিম জুটমিলের পূর্বে অবসর গ্রহণকারী ও সম্প্রতি অবসানকৃত শ্রমিকদের যাবতীয় পাওনা বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ ইতোমধ্যে ছাড় করেছে। তা হতে আজ করিম জুটমিলের সকল শ্রমিকের পাওনার ৫০% নগদে (ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে) পরিশোধ করা হচ্ছে। অবশিষ্ট ৫০% সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধের প্রক্রিয়া চলমান আছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বিজেএমসির অর্থায়নে বিভিন্ন মিল এলাকায় বর্তমানে ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে বিদ্যালয়গুলো ক্ষেত্রমত সরকারীকরণ ও এমপিও ভুক্তির মাধ্যমে পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষিত পাটকলসমূহের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি সার্বিকভাবে পাটখাতকে পুনরুজ্জীবিত এবং মিলগুলোকে উপযুক্ত মডেলে আধুনিকায়ন ও পুনঃচালু করার লক্ষ্যে মিলও বিজেএমসি’র অন্যান্য সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহার বিষয়ে অনুসরণীয় কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং বিজেএমসি’র সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনসহ প্রয়োজনীয় জনবলের যৌক্তিকীকরণ বিষয়ে সুপারিশ প্রদানকল্পে সরকার কর্তৃক উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ২টি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করা যায় যে বর্ণিত কমিটি দু’টির সুপারিশের আলোকে বন্ধ ঘোষিত মিলগুলো নতুন আঙ্গিকে পুনরায় চালু হবে এবং এভাবে পুনঃচালুকৃত মিলে পূর্বের অভিজ্ঞ শ্রমিকগণ পুনঃকর্মসংস্হানের সুযোগ পাবেন। সরকারি সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলসমুহে বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান এবং পাটখাত পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বিজেএমসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি চালু মিলে কর্মরত সকল স্থায়ী শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়নসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার মাধ্যমে চাকুরি অবসায়ন পূর্বক উৎপাদন কার্যক্রম ১ জুলাই, ২০২০ তারিখ হতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সানবিডি/আরএম/১৫.৪৮/১৫/৯/২০