২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের পরে ৫ অক্টোবর গুলি করে হত্যা করা হয় শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি (সরকারি কৌঁসুলি), আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবীবুর রহমান ও তাঁর ভাই পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন মুন্সীকে। ১৯ বছর পর বৃহস্পতিবার ১০ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নিহত হাবিবুর রহমানের ছেলে এ্যাড. পারভেজ রহমান জন তার বাবা ও চাচার হত্যার সাক্ষী হিসেবে প্রথম সাক্ষী দেন ।
এই মামলার বাদী নিহত হাবিবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত রহমান ২০১৮ সালে মারা যান। এরপর পরিবারের সদস্যরা শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ প্রয়াত হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গসহ স্থানীয় সাবেক আওয়ামী লীগের কয়েকজন ও বিএনপির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল। হাবিবুর রহমান ও মনির মুন্সীর হত্যার বিচারের প্রত্যাশা হাজারো মানুষের।
মামলার এজাহার ও বাদীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জাজিরা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ। তখন আওরঙ্গের পক্ষে অবস্থান নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একটি পক্ষ। ৫ অক্টোবর শহরে হাবীবুর রহমানের বাসভবনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে সভা চলছিল। সেখানে হামলা চালান আওরঙ্গ-সমর্থক যুবলীগের সাবেক নেতা সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদার ও তার লোকজন। হামলায় হাবীবুর রহমান ও তাঁর ভাই মনির হোসেন খুন হন।
হাবীবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত রহমানের করা হত্যা মামলায় আওরঙ্গকে প্রধান আসামি করা হয়। মোট ৫৫ ব্যক্তিকে আসামি করেন তিনি। পুলিশ তদন্ত শেষে আওরঙ্গর নাম বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলার বাদী তখন আদালতে নারাজি দেন। আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর জিন্নাত রহমান উচ্চ আদালতে রিট করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন আওরঙ্গ। তিনি নানাভাবে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন।
২০১৩ সালের ৩ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় আওরঙ্গ মারা যান। এরপর উচ্চ আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন পুলিশকে। পুলিশ ২০০৩ সালের অক্টোবরে আদালতে ৫৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
আওরঙ্গ ছাড়াও মামলার আসামি স্বপন কোতোয়াল, শাহজাহান মাঝি মৃত্যুবরণ করেছেন। আর চারজন চলে গেছেন বিদেশে। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন। অধিকাংশ আসামি এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত।
প্রয়াত হাবীবুর রহমানের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আর মনির হোসেনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
হাবীবুর রহমানের ছেলে শরীয়তপুর জজ আদালতের আইনজীবী পারভেজ রহমান জন বলেন, আমাদের চোখের সামনে বাবা-চাচাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তখন আমরা শিশু ছিলাম। অনেকেই আমাদের পাশে ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের পাশে ছিলেন, তাই এখনো মামলাটি টিকে আছে। একটা সময় স্থানীয় আইনজীবীদেরও পাশে পাইনি। তখন আইনজীবী সাহারা খাতুন (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) শরীয়তপুরে এসে মামলার শুনানিতে অংশ নিতেন। বাবা-চাচা হত্যার বিচার না দেখেই মা মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন আমরাও শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে আছি। আমাদের চারিদিক থেকে অনেক চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমার বাবার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আমি প্রথম সাক্ষী দিয়েছি। এখন থেকে সাক্ষী অব্যাহত থাকবে। আশা করি নেয় বিচার পাবো ইনশাআল্লাহ।
সানবিডি/প্রতিনিধি/আরএম/১৫.৫৪/১৫/৯/২০