সোমবার ভারত সরকার হঠাৎ করেই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করলেও এবার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন দেশের আমদানিকারকরা। এই সংকট আগে থেকেই মোকাবেলার জন্য বিকল্প দেশ থেকে সমুদ্রপথে ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মজুদ থাকার পাশাপাশি দ্রুত আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হলেও খুচরা পর্যায়ে পণ্যটির মূল্য বাড়তে শুরু করেছে জ্যামিতিক হারে। আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ কেনার জন্য খুচরা দোকানগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। ফলে মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নেয়া হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে।
চট্টগ্র্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ৩ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত পাঁচটি দেশ থেকে মোট ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছে ২৫ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। এসব দেশের মধ্যে মিসর থেকে ১০০ টন আর বাকি রফতানিকারক দেশ তুরস্ক, চীন, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে আমদানি হবে বাকি পেঁয়াজ। অনুমতি নেয়ার পর দ্রুত ঋণপত্র খোলার ব্যাপারেও সক্রিয় হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে পেঁয়াজ আসা শুরু হবে আর বাকি দেশগুলো থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের দেয়া তথ্যমতে, গত চার মাসে (১ জুন-৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের ১৮ লাখ ২৪ হাজার কেজি পেঁয়াজের শুল্কায়ন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে মোট ১২ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পেঁয়াজ এনেছে। আমদানিকারকদের মধ্যে ঊসা ট্রেডিং ৪ লাখ ৮৮ হাজার কেজি, হাফিজ করপোরেশন ১ লাখ ৭৪ হাজার কেজি, মেসার্স সানজিদা এন্টারপ্রাইজ ১ লাখ ১৬ হাজার কেজি, এএমআর ট্রেডিং ২ লাখ ৯০ হাজার কেজি, মেসার্স কাসিদ ট্রেডিং ২৮ হাজার ৮০০ কেজি, মেসার্স এসএইচ খান ট্রেডিং ৫৮ হাজার কেজি, মেসার্স ফারহা ইন্টারন্যাশনাল ২ লাখ ৯০ হাজার কেজি, আহসান মতিনা ফুড দুই হাজার কেজি। এছাড়া মেসার্স রায়হান ট্রেডার্স, গ্রিন ট্রেড ও মেসার্স এসআর ইন্টারন্যাশনাল আলাদাভাবে ১ লাখ ১৬ হাজার কেজি এবং মেসার্স এন এইচ কার্গো সার্ভিসের আমদানি করা ২৯ হাজার ৫০০ কেজি পেঁয়াজের ওপর শুল্কায়ন করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পেঁয়াজ আমদানির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) এরই মধ্যে ইস্যু করা হয়েছে। আমদানি যাতে দ্রুত হয় সেজন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আবেদন পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব অনুমতিপত্র দেয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট আছি আমরা। পণ্যটি নিয়ে স্থানীয় বাজারে যাতে কোনো ধরনের অস্থিরতা তৈরি না হয়, সেজন্যই এ পদক্ষেপ।’
ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বন্যায় এবার গ্রীষ্মকালীন ফসল মার খাওয়ার পর সেখানে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। সে দেশে পণ্যটির দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ার পর সরকার সব ধরনের পেঁয়াজ রফতানির ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে এর দাম নিয়ে যে অস্থিরতা চলছে, সেটাই রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ বলে জানা গেছে। গত বছর ভারত রফতানি বন্ধের দুই সপ্তাহ পর ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানিতে সক্রিয় হয়েছিলেন। তবে এবার রফতানি বন্ধের বিষয়টি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।