১৪ ডিসেম্বর সন্ধা ৭টা, স্থান ধানমন্ডি ৬ নম্বর রোডের মাথায় নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, যার পুরু নাম গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল। মিরপুর সড়ক থেকে ১ নং গেইট দিয়ে জরূরী বিভাগ হয়ে একটু সামনে এগুতেই ৬/৭ জন মহিলাকে বসা অবস্থায় দেখলাম। আমিও বসলাম ঐ রিসিপশান করিডোরে। আমার একজন প্রতিবেশীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ২/৩ মিনিট পরই একজন লোক এসে মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করলেন আপনারা বেড়িয়ে যান, এখানে থাকতে পারবেন না, বাহিরে রাস্তায় যেয়ে অপেক্ষা করেন, উপরে আমাদের চেয়ারম্যান স্যার আছেন।
উনি যতক্ষন হাসপাতালে থাকবেন ততক্ষন আপনার হাসপাতালের ভিতরে থাকতে পারবেন না। খুব উচ্চস্বরেই মহিলাদেরকে কথাগুলো বলছিলেন। আমি তখন কথা বলছিলাম, ততক্ষনে মহিলাদের বেড় হওয়ার জন্য তাড়া করছেন যান যান তাড়াতাড়ি বের হন, আপনারা এখানে থাকলে আমার সমস্যা হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
ততক্ষণে আমার ফোনে কলা বলা শেষ। আমি সবিনয়ে বিষয়টা জানতে চাইলাম ভদ্র লোকের কাছে। তিনি একই ভাবে আমাকেও জবাব দিলেন। আমি উত্তরে তাকে বললাম এই যানজটের শহরে এই মহিলাগুলো রাতের বেলায় বাহিরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে এটা কাজটা কি ঠিক হবে ?
আর এখানে বসে থাকলে আপনাদের কি ধরনের সমস্যা হবে বলবেন কি? উত্তরে তিনি আবার ও বললেন এতো কিছু বলতে পারব না আমার নিয়ম হচ্ছে এখানে হাসপাতালে রোগীর সাথের কোন লোক থাকতে পারবে না, চেয়ারম্যান স্যার যতক্ষণ আছেন ততক্ষণ সবাইকে হাসপাতালের বাহিরে থাকতে হবে। আমি আবার ও বললাম মহিলাদের জন্য বিষয়টা খুবই কষ্টকর এবং বেমানান।
এরা এই রাত্রে বেলায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে, আর আপনি চেয়ারম্যান স্যারের জন্য করিডোর ফাকা রাখবেন, এটা কেমন সেবা। ভদ্র লোক আবার ও বলতে শুরু করলেন আমাদের হাসপাতালে কোন রোগীর জন্য এটেনডেন্ট লাগে না। এটেনডেন্ট রাখা বা থাকতে দেয়া নিষেধ আছে। তার পরও আমি রিকোয়েষ্ট করলাম মহিলাদেরকে চুপচাপ নিচ তলার চেয়ারগুলোতে বসে থাকার জন্য হাসপাতালের কোন বড় সমস্যা হয়ে যাবে এটা আমার মনে হচ্ছে না।
এই কথাগুলো বলতে বলতে মহিলারা তাদের আগের বসা জায়গায় বসে রইলেন। আমি বাহিরের কেন্টিনে চা খাওয়ার জন্য বেড়িয়ে গেলাম, চা খাওয়া শেষে হচ্ছে এমন সময় কেনটিনের সামনে আবার জটলা, কেন্টি ন ম্যানেজার বলছে এখানে জায়গা নেই আপনারা অন্য কোথাও যান, কই বসবেন তা আমরা জানি কি? ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি বের হওয়ার পথে দেখলাম সেই কজন মহিলা, তাদেরকে রীতিমত গরু তাড়ানোর মত করে ঐ ভদ্রলোক শাসাচ্ছে, আমি বার বার বলছি তা আপনারা বাহিরে যাচ্ছেন না কেন? আমি বাধ্য হয়েই তখন ঐ ভদ্র লোক কে ভললাম আপনার চেয়ারম্যান সাহেব নীচে আসুক তার পর আমি মহিলাদের হয়ে বিষয়টা উনাকে জানাতে চাই, মহিলাদের যদি এখানে থাকতে নিষেধই করা হয় তা হলে যেন কোন রোগীর এটেনডেন্ট না আসে, আর এটেনডেন্ট ছাড়া যদি হাসপাতাল সেবা সম্পন্ন করে তা হলে তো সকলের জন্যই মঙ্গল।
আমাদের জানার বিষযঃ
১। গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল প্রতিটি রোগীর হাসপাতালে থাকা অবস্থায় সকল পরিচর্যা করে কি না?
২।একটা পরীক্ষা করাতে বিলের জন্য একাধিক জায়গায় দৌড়াতে হয়। প্রতিটা পরীক্ষার জন্য ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বিল করাতে হয় এবং প্রতিটি পরীক্ষার পৃথক বিল করতে হয় এবং একাধিক বার রিসিপশনে যেতে হয়, এ কাজটা কে করে দেয়? এই জটিল প্রক্রিয়ার সমাধান কি?
৩। দরিদ্র রোগীর বিভিন্ন রোগের প্যাকেজ বিল এর রেট একেক জন একক রকম তথ্য দান করেন। যা বিভ্রান্তিকর।
৪। ওয়ার্ডের দেয়ালগুলো খুবই নোংরা ময়লা এবং শ্যাতশ্যাতে। রোগীদের ফ্যান টয়লেট বেসিন, ফ্লাস আকেজো এবং অপরিস্কার।
রোগীর জন্য যে সকল পরীক্ষা (প্যাথলজিসহ অন্যান্য) গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল এ করার ব্যবস্থা নাই, বাহির থেকে করানোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান থেকে করিয়ে আনার জন্য রোগীকে চাপ দেয়া হয়, যা রোগীর জন্য তার স্বাধীনতা এবং সামর্থ দুটোই বিব্রতকর। এ সকল ঘটনা গুলোতে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
আমার জানা মতে জনগনের জন্য গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল খুবই সহায়ক, বিশেষ করে গরিব রোগীদের জন্য চিকিৎসার বিষয়ে খুবই সহায়ক। অসহায় মানুষের জীবন রক্ষায় নিয়মিত কাজ করে চলছে এই হাসপাতাল। আমরা স্বাস্থ্য আন্দোলনের সকল সদস্যই বিশ্বাস করি এটি দরিদ্র জনগণ বান্ধব হাসপাতাল। তবে কিছু অসংগতি দূর করতে না পারলে এটি আমাদের আশা ভরসার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে কি না তা সন্দেহ জাগাচ্ছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস