বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সয়াবিন তেল রফতানিতে একক আধিপত্য বজায় রেখেছে আর্জেন্টিনা। দেশটি থেকে ভোজ্যতেলটির রফতানি উত্তরোত্তর বাড়তির দিকে রয়েছে। গত বছর সবচেয়ে বেশি সয়াবিন তেল রফতানি করেছে দেশটি। আর্জেন্টিনার পর পরই গত বছর সয়াবিন তেল রফতানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় শুরুর দিকে ছিল যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। তবে এসব দেশের তুলনায় ভোজ্যতেলটির রফতানিতে অনেকটাই এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। তাই বলা যায়, সয়াবিন তেলের বৈশ্বিক রফতানি বাজারে আর্জেন্টিনা সবচেয়ে বড় প্রভাবক। ফলে দেশটি থেকে ভোজ্যতেলটির রফতানিতে উত্থান-পতন আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন তেল রফতানিকারক দেশ হচ্ছে আর্জেন্টিনা। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সয়াবিন তেলের রফতানি বাজারে আর্জেন্টিনার একক আধিপত্যের চিত্র উঠে এসেছে। গত এক দশকের রফতানির তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ১০ বছরের মধ্যে ছয় বছরই দেশটি থেকে ভোজ্যতেলটির রফতানি বেড়েছে।
বিগত ২০১০ সালে আর্জেন্টিনা থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ৪৫ লাখ ৬১ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। পরের বছর দেশটি থেকে ভোজ্যতেলটির রফতানি ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার টনে। ২০১২ ও ২০১৩ সালে আর্জেন্টিনা থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে যথাক্রমে ৪২ লাখ ৪৪ হাজার ও ৪০ লাখ ৮৭ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল।
আর্জেন্টিনা থেকে ২০১৪ সালে ৫০ লাখ ৯৪ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল। পরের বছর দেশটি থেকে ভোজ্যতেলটির রফতানি ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়ে ৫৬ লাখ ৯৮ হাজার টনে উন্নীত হয়। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দেশটি থেকে যথাক্রমে ৫৩ লাখ ৮৭ হাজার ও ৪১ লাখ ৬৪ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল। ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনা থেকে আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে মোট ৫২ লাখ ৬১ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল।
গত বছর আর্জেন্টিনা সব মিলিয়ে ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। দেশটির ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বেশি সয়াবিন তেল রফতদানির রেকর্ড। গত বছর সয়াবিন তেল রফতানিকারকদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় আর্জেন্টিনার পর দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় আর্জেন্টিনার সাড়ে ৫৯ লাখ টন সয়াবিন তেল রফতানির বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভোজ্যতেলটির সম্মিলিত রফতানির পরিমাণ ছিল সাকল্যে ১২ লাখ ২৫ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশের বেশি। এ থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেল রফতানিতে আর্জেন্টিনার একক আধিপত্যের চিত্র সুস্পষ্ট হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় গত বছর দেশটি থেকে ৪৭ লাখ টনের বেশি।
ইউএসডিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৪ লাখ ৬৬ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল। পরের ১০ বছরের মধ্যে অর্ধেক সময়জুড়ে দেশটির সয়াবিন তেল রফতানিতে মন্দা ভাব দেখা গেছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সাকল্যে ৮ লাখ ৮১ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ কম।
গত বছর সয়াবিন তেলের রফতানি বাজারে ব্রাজিলের অবস্থান ছিল তৃতীয় শীর্ষে। এ সময় দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১১ লাখ ৫০ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছে বলে ইউএসডিএর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। এর আগের বছর ব্রাজিল থেকে মোট ১০ লাখ ৯৩ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ২৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ কম। ব্রাজিলের ইতিহাসে ২০১১ সালে সবচেয়ে বেশি ১৮ লাখ ৮৫ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল।
গত বছর সয়াবিন তেলের রফতানিকারকদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় ইইউভুক্ত দেশগুলোর সম্মিলিত অবস্থান ছিল চতুর্থ। এ সময় ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে সব মিলিয়ে আট লাখ টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে এসব দেশ থেকে মোট ৭ লাখ ৮৮ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল। ইইউর ইতিহাসে ২০১২ সালে সবচেয়ে বেশি ১০ লাখ ১১ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল।
এদিকে চলতি বছরের রফতানি পূর্বাভাসে ইউএসডিএ জানিয়েছে, আর্জেন্টিনা থেকে সব মিলিয়ে ৬০ লাখ টন সয়াবিন তেল রফতানি হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। এর মধ্য দিয়ে ভোজ্যতেলটির রফতানি বাজারে আর্জেন্টিনার অবস্থান আরো পোক্ত হবে। চলতি বছর ব্রাজিল থেকে ১০ লাখ ৫০ হাজার ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯ লাখ ৯৮ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ভোজ্যতেলটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রকে এক ধাপ পেছনে ফেলে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসবে ব্রাজিল। আর ২০২০ সালে ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে সয়াবিন তেল রফতানি দাঁড়াতে পারে ৮ লাখ ২৫ হাজার টনে।
এগ্রিমানি ও ইনডেক্স মুন্ডি অবলম্বনে