ব্যাংকিংখাত থেকে ঋণ নেওয়া বেড়েছে

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-১০-২৩ ১২:১২:২৩


সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া, লক্ষ্যমাত্র অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সন্তোষজনক না হওয়াসহ বিভিন্ন কারনে ব্যাংকিংখাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া বেড়েছে।

অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই পুরো অর্থবছরের জন্য ব্যাংকিংখাত থেকে যে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে তার ৬১ শতাংশ নিয়ে ফেলেছে সরকার।

চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয় ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসেই এ খাত থেকে ২৮ হাজার ৭১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেলেছে সরকার।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন,মূলত রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী না হওয়ায় এবং সঞ্চয়পত্র থেকে গ্রাহক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় বিক্রি ব্যাপক হারে কমে গেছে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই এখন ব্যাংকিংখাত থেকে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। ব্যাংকিংখাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায় বাড়লে সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার তেমন প্রয়োজন পড়ত না। বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যেতো। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছেনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জুলাই-আগস্ট মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কিন্ত আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ৬২০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই দুই মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্য দিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কিন্তু বাজেটে এই রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ধরা রয়েছে ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে অত্যাধিক কড়াকড়ি আরোপ এবং কর বৃদ্ধির কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে গ্রাহকরা অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ জন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রিও কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) তিন হাজার ৩৬৪ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে; যা গত বছরের একই সময়ের তিন ভাগের এক ভাগ। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের হিসাবে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ১১ হাজার ৩০৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে সাত হাজার ৬৪৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ হিসাবে এই দুই মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জুলাই সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৫৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকার মূলত দুইভাবে ঋণ নিয়ে থাকে। একটি হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এবং অন্যটি হচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে। যেহেতু সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকেই বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। যদি রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব না হয় তবে বছর শেষে বাজেটে প্রক্ষেপিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ঋণ সরকারকে ব্যাংক থেকে নিতে হবে।

ব্যাংকিংখাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকার ব্যাংকিংখাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের এর পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে সরকার ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছে ১৮ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে সরকার ঋণ নিয়েছে ৩২৯ কোটি টাকা।