একজন রাজীর এর জীবনী-৪
:: আপডেট: ২০১৯-১১-২৭ ১৭:৪৫:৪৭
৬৮ সালের শেষের দিকে বিয়ে দেওয়া হলো।
তখনকার সময়ে ভাবা হতো ছেলে মেয়ে বিয়েতে রাজি না থাকলেও বিয়ের পরে ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া পটুয়াখালি শহরে শ্বশুর কাদের মৃধা, চাচা শ্বশুর করিম মৃধা তাদের মেয়ে বিয়ে করবে না এই কথা বলার সাহস বারেক এর নেই।
পাকিস্তান আমলে তাদের নামে মানুষ কেঁপে উঠতো।
চার বউয়ের সংসারে ডজন ডজন ছেলে মেয়ে। বারেক নিরিহ মানুষ। চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস রাখবে না।
বারেক এর বাবা কাসেম সাহেব ও এদের ভয়ে মুখের কথা বের করতে সাহস পান না।
তাছাড়া পারিবারিক জমি জমার ব্যাপার থাকে।
হিসাব ছিলো ঘরের জমি ঘরেই থাকবে।
বিয়েতে দশ কাঠা চাষের জমি দেওয়া হয়।
হয়তো যৌতুক ছিলো।
বারেক বুঝে উঠতে পারে না,ঋণের বোঝা বাড়লো না কমলো।
মা বাবার ঋণ হয়তো কিছুটা কমলো,নিজের মনকে মানাবে কেমন করে? এটা কেমন বিয়ে হলো? মন তো কবুল করে না।
কোনমতে ঢাকা চলে গেলে বাঁচা যায়।
কম কথা বলা বারেক কাওকে বলতে পারেনা,বুকের ভিতরটা কেমন করে কাঁদে।
মনে মনে ভাবে,যুদ্ধে মারা গেলে এই জীবনের যাতনা থেমে যেতো।
একটা গুলি এসে লাগলেই তো সব কাহিনির অবসান হয়।
পাকিস্তানি আর্মিদের হাতে ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো।
পটুয়াখালির আবতার হাওলাদার বাড়িতে আজম আর বারেক মিটিং করে।কেও বা কারা আর্মিতে খবর দেয়।
আবতার হাওলাদার সাহেবের মেয়ে, যাকে বারেক মামী বলে ডাকতো,সেই মামী বারেক আর আজমের হাত ধরে টান দিয়ে চালের মটকিতে ঢুকিয়ে ঢাকনি দিয়ে দেন।
তখনকার মত প্রানে বাঁচলো।
দেশ স্বাধীন হলো,তিতাসগ্যাস কোম্পানির সুপার ভাইজার হ’য়ে কাজ শুরু।
পড়াশোনা চলতে থাকে।
পায়ের নিচে মাটি পেলো যেনো।
তিতাসগ্যাস কোম্পানিতে তখন ইলেকশন হতো,এখন হয় কিনা জানিনা।
সিদ্ধান্ত নিলো ইলেকশন করবে।
বিপুল ভোটে জয়ি হয়ে সভাপতি নির্বাচিত হলো।
যত জনপ্রিয়তা ততই শত্রুতা।
যারা হেরে গেলো,তাদের ঘুম হারাম হলো।
মিটিং চলতে থাকে, কিভাবে বারেক কে সরানো যায়।
প্রানের বন্ধু হাবিব।(হাবিব সাহেব মারা গেছেন) একসাথে চাকরি করে।হাবিবের মধ্যে হিংসা বাসা বাঁধে।
তদবীর করে বারেক এর প্রমোশন করায়,কমার্শিয়াল অফিসার ক’রে নরসিংদী ট্রান্সফার করা হয়।
বারেক এর ইচ্ছে সভাপতি পদেই থাকবে।এই প্রমোশন শুধুমাত্র তাকে সরানোর জন্য।
বারেক বুঝতে পারে কি হচ্ছে, কারা করছে।
ততদিনে নিজের মতামত জানানোর সময় এসেছে, আত্ম নির্ভরশীলতা কাজ করছে।
সাফ জানিয়ে দিলেন, নরসিংদী যাবে না।
পনের দিন পর বস এর ডাক এলো।
বস সম্ভবত ডঃ হাবিবুর রহমান। বস ডেকে বলেনঃ গাড়ির চাবি দাও।চাবি নিয়ে নিলেন।
পিয়নকে ডেকে বলেন, বারেক সাহেবকে রিকশা ডেকে দাও।
বস বললেনঃতোমার চাকরি নেই।এই নাও রিকশা ভাড়া রাস্তা মাপো।
অপমান আবার অপমান। এবার আর মাথা নিচু করে নয়,মাথা উঁচু করেই বললো,মোর নাম বারেক,দেখা হবে খুব তাড়াতাড়ি।
অফিস থেকে বের হয়ে অনিশ্চিত রাস্তা ধরে হাটা শুরু।
কিছু একটা কাজ জুটে যাবে।আত্মবিশ্বাস নিয়ে পথ চলা শুরু হলো। বেকারত্বের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে,
তবে কোথায় যেনো মন বলছেঃ হবে হবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
চিড়ে কলা একবেলা খেয়ে দিন যায়।
কাওকে বুঝতে দেয় না।
মাথায় আবার ঝিমঝিম ধরে, কেরামত সাহেব এর কথা মনে পড়ে।
(ও তো নায়ক হতে চায়)
অফুরন্ত সময়। শেরেবাংলা নগর মাঠে যাত্রা হচ্ছে। সময় কাটানোর জন্য যাওয়া যায়।
দূর্ভাগ্য বারেক এর পিছু নিলো।
মাঠে ঢোকার দশ মিনিটের মাথায়, কেও একজন বেবী নামের অভিনেত্রীর পেটে চাকু ঢুকিয়ে দিলো।( যিনি চাকু মেরেছিলেন তার নাম না-ই বললাম)
বারেক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এটা কি হলো? গ্রামের সহজ সরল বারেক,বুঝে ওঠার আগেই, অনেক এর নামের সাথে বারেক এর নাম আসামি লিষ্ট এ চলে গেলো।
এরেস্ট হয়ে গেলো।
একাকিত্বের যন্ত্রণায় চোখে পানি আসে।জেলখানায় সবার আত্মীয় স্বজন দেখা করতে আসে, খাবার বিড়ি সিগারেট দিয়ে যায়।
বারেক একা, কেও আসে না।কেও থাকলে তো আসবে। ভাবে আহা আমার জন্য যদি কেও আসতো?
জেলের খাবার গন্ধে মুখে দেওয়া যায়না।
রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।সিগারেট কম লাগবে,ইফতারে চিঁড়া গুড় দেওয়া হয়,ওটা খেয়ে দিন পার করে। চলবে…
সূত্র: দেবি গাফফার ফেসবুক
সানবিডি/ঢাকা/এসএস