ফুয়েল এন্ড পাওয়ার সেক্টরে শেয়ার বাছাই

:: আপডেট: ২০২০-০৭-১৫ ১০:২০:২২


ফুয়েল ও পাওয়ার সেক্টর দেশের অর্থনীতিতে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। বিদ্যুৎবিহীন জীবন অচল এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে বিদ্যুৎ চাহিদার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে বিদ্যুত ছাড়াও প্রয়োজন হয় ডিজেল ও পেট্রোলসহ নানা ধরনের জ্বালানী তেল। ফলে ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্টের সাথে সাথে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী চাহিদা বাড়ে যার ফলে ফুয়েল এন্ড পাওয়ার খাতের গুরুত্বও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিশেষত প্রকৌশলীদের কর্মসংস্থানের জন্যও খাতটি বিশেষ ভূমিকা রাখে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বর্তমানে ফুয়েল এন্ড পাওয়ার খাতে মোট ১৯টি কোম্পানী তালিকাভূক্ত রয়েছে যার মধ্যে ৮টি কোম্পানী সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বা বিতরণের সাথে জড়িত। বাকী কোম্পানীগুলো ফুয়েল বা  জ্বালানী সংশ্লিষ্ট। সঙ্গত কারণেই ফুয়েল এন্ড পাওয়ার  সেক্টরের বিভিন্ন কোম্পানীর প্রডাক্টস এবং সার্ভিসেস এর মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এ খাতের আওতাভূক্ত বিভিন্ন কোম্পানীর সাইজ ও পেইড আপ ক্যাপিটাল, মার্কেট শেয়ার, ইপিএস, আর্থিক ভিত্তি, প্রডাক্টস কোয়ালিটি, ম্যানেজমেন্ট কোয়ালিটি, ইত্যাদি সব সূচক তথা ইন্ডিকেটরেই ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্যনীয়। ফুয়েল এন্ড পাওয়ার কোম্পানীগুলোর বিদ্যমান প্রাইস আর্ণিং (পি-ই) রেশিওতেও রয়েছে ব্যাপক তফাৎ- সিভিওপিআরএল এর পি-ই রেশিও যেখানে ৯৬১.৬৭ এবং ইষ্টার্ণ লুব্রিকেন্টসের ৩৮.৪৩ সেখানে মেঘনা পেট্রোলিয়াম’র মাত্র ৪.৬২ এবং পাওয়ারগ্রীড এর ৫.২৬। সব মিলিয়ে বলা যায় যে সার্বিকভাবে খাতটির কোম্পানীসমূহের মৌল্ভিত্তির পার্থক্য থাকায় বিনিয়োগ ঝুঁকিও কোম্পানীভেদে ভিন্ন ভিন্ন। তাই বিনিয়োগের জন্য প্রযোজ্য সকল ক্রাইটেরিয়া পূরণ হলেই শুধুমাত্র সে কোম্পানীর শেয়ার ক্রয় করার বিষয়টি বিবেচিত হওয়া উচিত।

 

উপরের টেবিলের ২য় ও ৩য় কলামে প্রদর্শিত পেইড আপ ক্যাপিটাল ও রিজার্ভের পরিমাণ দেখে বুঝা যাচ্ছে যে ফুয়েল এন্ড পাওয়ার খাতের ২টি বাদে বর্ণিত সব কটি কোম্পানীর রিজার্ভ তাদের পেইড আপ ক্যাপিটাল এর চেয়ে বেশী যা সন্তোষজনক। যে ২টি কোম্পানীর রিজার্ভ ভাল নয় তারা হলো বারাকা পাওয়ার এবং জিবিবি পাওয়ার। পেইড আপ ক্যাপিটাল এর তুলনায় সবচেয়ে বেশী রিজার্ভ আছে লিন্ডে বিডি’র – ২৮ গুণেরও বেশী। তারপর বেশী রিজার্ভ সমৃদ্ধ কোম্পানী হচ্ছে যমুনা অয়েল (১৬.১২ গু্ণ) এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম এর (৭.৪৭ গুণ)। রিজার্ভের গুরত্ব এ কারণেই যে এটি বেশী থাকলে কোন বছরে প্রত্যাশিত নীট আয় কম হলেও কোম্পানী রিজার্ভ থেকে ল্ভ্যাংশ দিতে সক্ষম হয়। এ অনুপাত যত বেশী হবে কোম্পানী ও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য তা ততই ভাল।

৪র্থ কলামে প্রদর্শিত স্পন্সর শেয়ারহোল্ডিং পজিশনে দেখা যায় যে বর্ণিত ১১টি কোম্পানীর মধ্যে ৭টি’র স্পন্সর শেয়ারহোল্ডিং ৫৯ থেকে ৬৮ শতাংশের মধ্যে, ২টি’র (পাওয়ারগ্রীড ও ইউপিজিডিসিএল) ৮০ শতাংশের উপরে, ১টি’র (জিবিবি পাওয়ার) ৩২ শতাংশ এবং ১টি’র (বারাকা পাওয়ার) মাত্র ১৮ শতাংশ। অধিকাংশ কোম্পানীর অর্ধেকের অধিক শেয়ার স্পন্সরদের দখলে আছে যা খুবই ভাল। এ অনুপাতের গুরুত্ব এজন্য যে কম শেয়ার থাকা মানেই হলো কোম্পানীর পেইড আপ ক্যাপিটালে স্পন্সরদের নিজের বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ কম এবং তার ফলে তাঁদের ঝুঁকিও কম। সেক্ষেত্রে কোম্পানীর লাভের অংশও তাঁরা কম পাবে যার ফলশ্রুতিতে কোম্পানীর উন্নয়নে সম্ভবত স্পন্সররা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিবেন না। এমনকি অসৎ কোম্পানী হলে ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে কোম্পানীর লাভ কম প্রদর্শন করতে পারে। এটি কমপক্ষে ৩০ শতাংশ থাকা উচিত। এ খাতের বারাকা পাওয়ার এর স্পন্সর শেয়ারহোল্ডিং মাত্র ১৮ শতাংশ যা গ্রহনযোগ্য নয়।

৫ম কলামে প্রদর্শিত ডেট (Debt) -ইকু্ইটি (Equity) রেশিও যে কোন কোম্পানীতে বিনিয়োগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সূচক। ইক্যুইটির তুলনায় ঋণের পরিমাণ যত বাড়বে কোম্পানীর জন্য তা ততই ঝুঁকিপূর্ণ হতে থাকবে। কারণ ঋণের সুদ দেয়ার ফলে কোম্পানীর নীট আয় কমতে থাকবে। আর কোন কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হলে অতিরিক্ত সুদ বহনের ফলে কোম্পানী দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ডেট (Debt) -ইকু্ইটি (Equity) রেশিও কত হওয়া উচিত তার কোন সুনির্দিষ্ট মাত্রা নেই। তবে সাধারনভাবে তা ৫০ শতাংশের নীচে থাকলে তাকে নিরাপদ ভাবা যেতে পারে।  ডেট (Debt) -ইকু্ইটি (Equity) রেশিও বিবেচনায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে পাওয়ারগ্রীড, ডরিন পাওয়ার, ডেসকো এবং বারাকা পাওয়ার – যথাক্রমে ২৩৭.৭২%, ১৭০.২৭%, ১৬১.৫৫% এবং ১৫০.৪৭%। এসব কোম্পানীর মোট শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটির পরিমাণ থেকেও তাদের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ অনেক বেশী যা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরী করে। সবচেয়ে ভাল অবস্থানে আছে লিন্ডে বিডি’র – কারণ সে কোম্পানীর কোন ব্যাংক ঋণ নেই। যমুনা অয়েল এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম এর ব্যাংক ঋণও খুবই অনুল্লেখ্য। সন্তোষজনক ও নিরাপদ ডেট (Debt) -ইকু্ইটি (Equity) রেশিও রয়েছে জিবিবি পাওয়ার, ইউপিজিডিসিএল, শাহজাদপুর পাওয়ার এবং সামিট পাওয়ার এর।

৬ষ্ট কলামে প্রদর্শিত গড় ইপিএস কোম্পানীগুলোর সব খরচ শেষে শেয়ারপ্রতি নীট আয় অবস্থানের প্রতিফলন। এ সূচকটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি কোম্পানী কতটা লাভজনক এবং তার ব্যবসার প্রবৃদ্ধি কতটা হচ্ছে তা ইপিএস দেখে বুঝা যায়। ফুয়েল এন্ড পাওয়ার খাতের যে ১১টি কোম্পানীর তুলনা করা হয়েছে তাদের অধিকাংশের গড় ইপিএস বেশ ভাল। লিন্ডে বিডি’র ইপিএস সবচেয়ে বেশী -৫৭.৩০ টাকা। মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েল এর ইপিএসও বেশ ভাল – ২০ টাকার উপরে। তবে ৩টি কোম্পানীর (ডেসকো, বারাকা পাওয়ার এবং জিবিবি পাওয়ার) ইপিএস তেমন ভাল নয়- ২ টাকার নীচে বা সামান্য উপরে। বাকী কোম্পানীগুলোর ইপিএস ৪ থেকে ৬ টাকার মধ্যে যা সন্তোষজনক মর্মে প্রতীয়মান হয়।

৭ম কলামে প্রদর্শিত গড় ডিভিডেন্ড ইল্ড বছর শেষে গড়ে শেয়ারহোল্ডাররা যে পরিমাণ ল্ভ্যাংশ হাতে পাচ্ছে তা দেখায়। ফলে এ সূচকটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন কোম্পানীর ইপিএস অনেক ভাল হলেও তার শেয়ার দাম বেশী হলে ইল্ড কমে যায়। আবার অনেক কোম্পানী ভাল লাভ হলেও লো পে আউট অর্থাৎ ডিভিডেন্ড কম ঘোষনা করতে পারে। অনেক কোম্পানী আবার ইপিএস কম হলেও রিজার্ভ থেকে নিয়ে ডিভিডেন্ড ঘোষনা করতে পারে। আবার অনেক কোম্পানী ক্যাশ ডিভিডেন্ডের সাথে সাথে স্টক ডিভিডেন্ডও দেয়। স্টক ডিভিডেন্ডকে ইল্ড বিবেচনায় নেয়া হয় না, কিন্ত তা্র ফলে শেয়ারহোল্ডার অতিরিক্ত শেয়ারের মালিক হন। কোম্পানীর  সার্বিক আর্থিক অবস্থান, ইপিএস, শেয়ার প্রাইস, ডিভিডেন্ড পলিসিসহ নানা ফ্যাক্টর দ্বারা ইল্ড প্রভাবিত হয়ে থাকে। তাই সেসব বিবেচনায় নিয়ে ডিভিডেন্ড ইল্ডকে দেখতে হবে। ডিভিডেন্ড ইল্ড বিবেচনায় ফুয়েল এন্ড পাওয়ার খাতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কোম্পানীগুলো হচ্ছে যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং সামিট পাওয়ার। এদের সবার ডিভিডেন্ড ইল্ড ৬% এর আশেপাশে। ডরিন পাওয়ার এবং জিবিবি পাওয়ার এর ইল্ড ২% এর নীচে। বাকী কোম্পানীগুলোর ইল্ড ২% থেকে ৪% এর মধ্যে।

৮ম কলামে প্রদর্শিত রিটার্ন অন ইক্যুইটি (ROE) বছর শেষে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে যে পরিমাণ নীট আয় হচ্ছে তা দেখায়। কোম্পানী তার পেইড আপ ক্যাপিটাল, বিভিন্ন ধরনের প্রভিশন বাবদ রক্ষিত অর্থ, রিজার্ভ মানি এবং ব্যাংক ঋণ ব্যবহার করে যে আয় করে তা থেকে সব ধরনের খরচ ও ট্যাক্স বাদ দিয়ে নীট আয় হিসাব করা হয়। তাই এ অনুপাত কোন কোম্পানীর সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা ও পারদর্শিতাকে ইংগিত করে। একই খাতের আওতাধীন বিভিন্ন কোম্পানীতে সে অনুপাত ভিন্ন হলে তাদের দক্ষতা ও পারদর্শিতাও তদ্রপ বিবেচিত হয়ে থাকে। ROE যত বেশী হয় ততই শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ভাল বিবেচিত হয়। এ অনুপাত অন্তত ১০ শতাংশ বা তার উপরে না থাকলে সেখানে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কারণ, এফডিআর এর মত নিরাপদ বিনিয়োগে যেখানে ৬% বা তার বেশী লাভ পাওয়া যায় সেখানে ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে যে কোন শেয়ারের ROE অন্ততপক্ষে ১০% হওয়া যৌক্তিক। দেখা যাচ্ছে যে ফুয়েল এন্ড পাওয়ার খাতে শেয়ারপ্রতি ROE সবচেয়ে বেশী ইউপিজিডিসিএল এর (২৬.১১%)। তারপর রয়েছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম (২৬.০৫%), লিন্ডে বিডি (২২.৫৮%) এবং ডরিন পাওয়ার এর (১৭.৯৯%)। সামিট পাওয়ার, শাহজাদপুর পাওয়ার এবং যমুনা অয়েল এর ROE ১০% এর উপরে কিন্ত তা ১৬% এর নীচে। ৪টি  কোম্পানীর (বারাকা পাওয়ার, ডেসকো, জিবিবি পাওয়ার এবং পাওয়ারগ্রীড) ROE ১০% এর নীচে।

৯ম কলামে প্রদর্শিত PEG হচ্ছে যে কোন কোম্পানী ভ্যালুয়েশনে জটিল একটি সূচক। তাই এর গুরুত্বও বেশী, যদিও অনেকেই এর ব্যবহার সম্পর্কে তেমন অবহিত নন। প্রাইস আর্নিং (পি-ই) রেশিও দিয়ে একটি কোম্পানীর আয়ের কতগুণ দামে শেয়ারটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে তা বুঝা যায়। যেসব কোম্পানীর প্রবৃদ্ধি ভাল অর্থাৎ আগামীতে ভাল আয় হবে সংগত কারণেই তাদের পি-ই রেশিও বেশি হবে। তবে তা ইপিএস প্রবৃদ্ধির সাথে সংগতিপূর্ণ কিনা তা পি-ই রেশিও দেখে বুঝা যায় না। দেখা গেল একটি কোম্পানীর ইপিএস এ কোন প্রবৃদ্ধি নেই, অথচ তার পি-ই রেশিও অনেক বেশী যা কোনক্রমেই যৌক্তিক হতে পারে না। কারণ, বিদ্যমান ইপিএস দিয়ে ঐ শেয়ারের উচ্চ দাম আগামীতে পুষিয়ে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। সে কারণেই PEG রেশিও জানার প্রয়োজন। এটি পি-ই রেশিও এর তুলনায় অনেক বেশী গ্রহনযোগ্য একটি সূচক। বিদ্যমান পি-ই রেশিওকে ঐ কোম্পানীর ইপিএস প্রবৃদ্ধি দিয়ে ভাগ করলে PEG পাওয়া যায়। এটির মান যত কম শেয়ারটির মৌল্ভিত্তি ততই বেশী। এটির মান ১ হওয়ার অর্থ হচ্ছে পি-ই রেশিও’র সমান হারে ইপিএস প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। অন্যভাবে বলা যায় কোম্পানীটি ফেয়ারলি ভ্যালুড। PEG মান ১ এর নীচে থাকার অর্থ হলো ইপিএস এর প্রবৃদ্ধি পি-ই রেশিও’র চেয়ে বেশী, অর্থাৎ কোম্পানীটি আন্ডারভ্যালুড। অপরদিকে এটির মান ১ এর চেয়ে যত বাড়বে শেয়ারটি তত বেশী ওভারভ্যালুড ও ঝুঁকিপূর্ণ হবে। উপরের টেবিলের ৯ম কলামে বিবেচিত ফুয়েল এন্ড পাওয়ার খাতের ১১টি কোম্পানীর মধ্যে ৪টি কোম্পানীর (বারাকা পাওয়ার, ডেসকো, জিবিবি পাওয়ার এবং যমুনা অয়েল) PEG অহিসাবযোগ্য। কারণ, হয় তাদের ইপিএস নেগেটিভ অথবা পূর্বের সময়ের তুলনায় ইপিএস না বেড়ে বরং কমেছে। সে অবস্থাটা কোম্পানীগুলোর জন্য বলা যায় রেড সিগন্যাল। এ খাতে ৪টি কোম্পানীর PEG ১ এর নীচে। তারা হলো ডরিন পাওয়ার, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, পাওয়ারগ্রীড এবং সামিট পাওয়ার। সে অবস্থা কোম্পানীগুলোর আন্ডারভ্যালুড প্রাইস প্রদর্শন করে। বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, লিন্ডে বিডি এর PEG ১ এর আশেপাশে যেটি কোম্পানীর ফেয়ার ভ্যালু প্রদর্শন করছে। ইউপিজিডিসিএল এর PEG ২.৭৪ যা কোম্পানীটির শেয়ারদাম কিছুটা ওভারভ্যালুড দেখায়। তবে শাহজাদপুর পাওয়ার এর PEG হচ্ছে ১৬.৬৭ যা ১ এর চেয়ে অনেক বেশী যেটি ঐ কোম্পানীর অস্বাভাবিক ওভারভ্যালুড অবস্থা নির্দেশ করছে। তার মানে হলো যে ঐ কোম্পানী শেয়ারের বিদ্যমান মার্কেট প্রাইস অনেক কম হওয়া উচিত ছিল।

সর্বশেষ ১০ম কলামে প্রদর্শিত শেয়ারপ্রতি ফ্রি ক্যাশ ফ্লো হচ্ছে কোম্পানী ভ্যালুয়েশন করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সূচক। ফ্রি ক্যাশ ফ্লো’র পরিমাণ দিয়ে বুঝা যায় কোম্পানীর বিল্ডিং এবং প্লান্ট ইক্যুইপমেন্ট ঠিক রাখতে এবং প্রয়োজনীয় রক্ষ্নাবেক্ষণ খরচ বাদ দেয়ার পর কি পরিমাণ ক্যাশ অবশিষ্ট থাকছে। ফ্রি ক্যাশ ফ্লো’ই হচ্ছে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বিতরণযোগ্য প্রকৃত আয় যা দিয়ে ম্যানেজমেন্ট ডিভিডেন্ড ঘোষনা করতে পারে, কিংবা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারে। এটি কোন কোম্পানীর আর্থিক স্বচ্ছলতা ও গতিশীলতার সত্যিকার নির্ণায়ক এবং তা যত বেশী হবে ততই ভাল। কোম্পানীর আর্থিক প্রতিবেদনের Cash Flow Statement এর  ১ম  অংশের শেষাংশ অর্থাৎ Net Cash from Operating Activities এর পরিমাণ থেকে Cash Flow from Investments অংশে বর্ণিত প্লান্ট, ইক্যুইপমেন্ট এন্ড এষ্টাব্লিসমেন্ট (PPE) বাবদ ব্যয় বাদ দিলে ফ্রি ক্যাশ ফ্লো পাওয়া যায়। তারপর সে পরিমাণকে মোট শেয়ার সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে শেয়ারপ্রতি ফ্রি ক্যাশ ফ্লো পাওয়া যায়। উপরোক্ত টেবিলে উল্লেখিত ফুয়েল এন্ড পাওয়ার খাতের কোম্পানীগুলোর মধ্যে লিন্ডে বিডি’র শেয়ারপ্রতি সবচেয়ে বেশী ফ্রি ক্যাশ ফ্লো আছে- ৭০ টাকা। তারপর রয়েছে ইউপিজিডিসিএল এর – শেয়ারপ্রতি প্রায় ১৬ টাকা। ৫টি কোম্পানীর (সামিট পাওয়ার, শাহজাদপুর পাওয়ার, জিবিবি পাওয়ার, ডরিন পাওয়ার এবং বারাকা পাওয়ার) শেয়ারপ্রতি ফ্রি ক্যাশ ফ্লো তেমন বেশী নয়, তবু অন্তত তা পজিটিভ। আর ৪টি কোম্পানী (ডেসকো, যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং পাওয়ারগ্রীড) এর ফ্রি ক্যাশ ফ্লো নেগেটিভ। প্রসংগত উল্লেখ্য যে, প্রতি বছর কোম্পানীর মূলধনী ব্যয় তথা PPE একরকম থাকে না, আবার ক্যাশ ইনফ্লো-আউটফ্লো’তে বড় ধরনের পরিবর্তন হতে পারে। সেক্ষেত্রে শেয়ারপ্রতি ফ্রি ক্যাশ ফ্লো প্রতি বছর একরকম থাকবে না। সেক্ষেত্রে অধিকতর ভাল হয় যদি কোন কোম্পানীর কয়েক বছরের ফ্রি ক্যাশ ফ্লো হিসাব করে তার গড় বিবেচনা করা হয়। উপরের টেবিলে অবশ্য শুধুমাত্র সর্বশেষ বছরের শেয়ারপ্রতি ফ্রি ক্যাশ ফ্লো হিসাব করা হয়েছে।

বিভিন্ন সূচক বা ইন্ডিকেটরের সাহায্যে ফুয়েল এন্ড পাওয়ার খাতের যে ১১টি কোম্পানীর মধ্যে পারস্পরিক তুলনা করা হলো তাতে দেখা যায় যে কোন কোম্পানিই সব সূচকে সর্বোত্তম অবস্থানে নেই। তবে বেশীরভাগ সূচকে সম্ভবত লিন্ডে বিডি, মেঘনা পেট্রোলিয়া্ম, সামিট পাওয়ার এবং ইউপিজিডিসিএল এর অবস্থান বেশ ভাল ও গ্রহনযোগ্য। তবে সরকার অতি সাম্প্রতিককালে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টগুলোর সাথে চুক্তি আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেছে। সে সিদ্ধান্ত পাওয়ার কোম্পানীগুলোর ভবিষ্যত আয়ে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই দেখতে হবে কোন পাওয়ার কোম্পানীর কোন কোন প্লান্ট বা ইউনিটের সাথে করা চুক্তির মেয়াদ কবে নাগাদ শেষ হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ মার্কেটে টিকে থাকতে হলে যথাযথভাবে যাচাই বাছাই ও গবেষণার বিকল্প নাই। যথার্থ যাচাই বাছাই করার পর বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়া বা সূচকের ভিত্তিতে কোন কোম্পানীর শেয়ার ক্রয় যৌক্তিক বা ফিজিবল হলেই শুধুমাত্র তা ক্রয় করা উচিত। অন্যথায় সে কোম্পানীর শেয়ার থেকে দূরে থাকা বাঞ্চনীয়। বিনিয়োগকারীগন নিজ স্বার্থেই তা করবেন বলে আস্থা রাখতে চাই।

সতর্কতাঃ বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে বর্ণিত কোম্পানীগুলোর পারস্পরিক তুলনায় পাবলিক ড্যাটা ব্যবহার করা হয়েছে। আর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কোম্পানীগুলো সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে তা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত যার সাথে বাস্তবের মিল নাও থাকতে পারে। তাই সেসব মন্তব্যের ভিত্তিতে কোন কোম্পানীর শেয়ার ক্রয় বা বিক্রয় থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা যাচ্ছে। অন্যথায় কারো ব্যক্তিগত আর্থিক ক্ষতির জন্য কোনক্রমেই লেখক দায়ী থাকবে না।

 

শফিকুল ইসলাম : অতিরিক্ত সচিব (পিআরএল)

Email: msislam201386@gmail.com