এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ১৩ শতাংশ

সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৪-১০-১৬ ২১:৪৩:৩৮


দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রয়েছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের। কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা এ খাতের উদ্যোক্তারা সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও কাঙ্ক্ষিত ঋণ পাচ্ছেন না। অন্যান্য খাতে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি থাকলেও সিএমএসএমই খাতে উল্টো কমেছে। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এ খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ১৩ শতাংশের বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকের মোট ঋণের অন্তত ২৫ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। আবার এই ২৫ শতাংশের অর্ধেক দিতে হবে কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে। মোট সিএমএসএমই ঋণের মধ্যে উৎপাদনশীল শিল্পে অন্তত ৪০ শতাংশ, সেবায় ২৫ শতাংশ এবং বাকি ৩৫ শতাংশ ব্যবসা উপখাতে বিতরণ করতে হবে। নারী উদ্যোগে দিতে হবে অন্তত ১৫ শতাংশ। যদিও এ ক্ষেত্রেও উৎপাদন ও সেবার তুলনায় ব্যবসায় বেশি ঋণ দিতে আগ্রহ দেখা যায়। ব্যাংকে আমানতের বড় একটা অংশ রাখেন এসব আমানতকারী। তবে সেই টাকা নামে বেনামে কিংবা প্রভাব খাটিয়ে নিয়ে নেন বড় ব্যবসায়ীরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রন্তিকে (এপ্রিল-জুন) এসএমই খাতে ৫৪ হাজার ৫২৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৬২ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এই খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ৮ হাজার ২২০ কোটি টাকা। সে হিসেবে এই খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ১৩ শতাংশের বেশি। তবে গত প্রন্তিকের থেকে সামান্য বেড়েছে এই খাতে ঋণ বিতরণ। জানুয়ারি-মার্চ প্রন্তিকে এই খাতে বিতরণ করা হয়েছিল ৫৩ হাজার ১০৭ কোটি টাকা।

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ও কর্মসংস্থানের জন্য সিএমএসএমইতে ঋণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সাধারণভাবে তারল্য সংকট দেখা দিলে বড়রা যে কোনো উপায়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে। এরকম সময়ে ছোটরাই বেশি বঞ্চিত হয়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে ছোট ও মাঝারি শিল্পে বাড়তি নজর দিতে হবে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এসএমই লোনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে টাকা আছে। কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দিতে পারছি না। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগ করতে যায়। কিন্তু কোনো একটা সমস্যার কারণে ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণগুলো বিতরণ হচ্ছে না। আমরা ব্যাংকগুলোকে লিখিতভাবে এই সমস্যার কারণ এবং সমাধান জানাতে বলেছি। খুব শিগগিরই ক্ষুদ্রঋণের প্রবাহ ব্যাপকভাবে বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, কর্মসংস্থান বিবেচনায় সিএমএসএমইতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বেশ আগে থেকে নানা নির্দেশনা দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ খাতের জন্য কম সুদের বেশ কয়েকটি প্রণোদনা ও পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কম পরিশ্রমে বেশি আয়ের জন্য বড় করপোরেটদের পেছনে দৌড়ায়। বড় প্রতিষ্ঠানের একটি অংশ ঋণ নিয়ে আর ফেরত না দেওয়ায় ব্যাংক খাতে আজকের দুরবস্থা তৈরি হয়েছে।

এদিকে গত জুন মাসে এক বিজ্ঞপ্তিতে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের আরও ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা জানায় এসএমই ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি জানায়, একজন উদ্যোক্তা সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। এই ঋণের সুদের হার হবে ৬ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ লক্ষ্যে ২৩টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। গতকাল মঙ্গলবার এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন অংশীদার ১৯টি ব্যাংক ও ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী। এই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।

এসএমই ফাউন্ডেশনের এই ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচটি যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমত, অগ্রাধিকারভুক্ত এসএমই সাব-সেক্টর, ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা এবং ভ্যালু চেইনের আওতাভুক্ত উদ্যোক্তা এই ঋণ পাবেন। দ্বিতীয়ত, রপ্তানি উপযোগী পণ্য এবং আমদানি বিকল্প পণ্য প্রস্ততকারী উদ্যোক্তা এই ঋণ পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।

এ ছাড়া, আইসিটি ও প্রযুক্তিনির্ভর সৃজনশীল ব্যবসায় যুক্ত তরুণ বা নতুন উদ্যোক্তা, যাঁরা এখনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাননি; পশ্চাৎপদ অঞ্চল, উপজাতীয় অঞ্চল, শারীরিকভাবে অক্ষম ও তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তা; দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত বাণিজ্য সংগঠন, এসএমই সমিতি, নারী উদ্যোক্তা সংগঠন, নাসিব, উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সুপারিশকৃত উদ্যোক্তারা এই ঋণ পাবেন।

এএ