২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত দিলো বিএনপির সঙ্গীরা

সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৪-১২-২২ ০৮:৪৯:০১


নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠকদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে আবারও ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বিএনপি। আর এতে ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপির সঙ্গীরা।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) প্রথম দিনে যুগপৎ এর শরিক ১২–দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় হয়। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা হয়। জানা গেছে, দুএকদিনের মধ্যে অন্য সমমনা দলগুলোর সঙ্গেও ধারাবাহিক বৈঠক করবে বিএনপি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে কার্যত বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মনোভাব যাচাই করছে। সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বার্তা দিতে চাইছে যে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে নির্বাচন চায়।

বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে জোট নেতাদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে তাদের জানানো হয়, নির্বাচন নিয়ে তাদের মতামত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হবে। নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরা হবে।

এ দিকে সূত্র বলছে, শনিবারের বৈঠকে ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দেন বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ১২ দলীয় জোটের নেতারা। তারা মনে করেন, ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন আদায় করতে না পারলে সেটা নানা কারণে আরও বিলম্বিত হতে পারে। তাই নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে হবে।

মতবিনিময়ে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা হয়েছে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া বক্তব্য, সরকারের সহযোগিতায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের তৎপরতা, এই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির করণীয় সম্পর্কে অনেকে মতামত জানান। তারা সরকারের দিক থেকে নির্বাচন প্রলম্বিত করার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। এ জন্য বিএনপিকে কোনো সংঘাতে না গিয়ে নির্বাচনের জন্য চাপ তৈরির পরামর্শ দেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে মতবিনিময় সভায় দলের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির মহাসচিব আন্দোলনের সহযোগী নেতাদের উদ্দেশে বলেন, দেশ নিয়ে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত থেমে নেই। চক্রান্তকারীরা যেকোনো উপায়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এমন সময়ে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে সবাইকে আরও কৌশলী হতে হবে, আরও ধৈর্য ধারণ করতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিতে কোনো বিভক্তি তৈরি করা যাবে না। সরকারকে নির্বাচন আয়োজনের যৌক্তিক সময় দিতে হবে। সরকারের সঙ্গে বৈরী নয়; বরং আলোচনার টেবিলকেই প্রাধান্য দিয়ে এগোতে হবে।

মতবিনিময় শেষে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থা, জনগণের নানা সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে মতবিনিময় করেছি। এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হলে সেটা জানাব।’

১২ দলীয় জোটের প্রধান জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি, আমাদের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। আগামী দিনে সেটা আরও গভীরভাবে অনুভূত হবে। বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে খুব শিগগির আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

প্রথমে ১২ দলীয় জোট, এরপর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও সর্বশেষ লেবার পার্টির সঙ্গে মতবিনিময় হয়।

এতে ১২–দলীয় জোটের পক্ষে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিকল্পধারার নুরুল আমিন ব্যাপারী, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, লেবার পার্টির (একাংশ) মো. ফারুক রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম ও জাগপা রাশেদ প্রধান উপস্থিত ছিলেন। এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ১১টি দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি নেতারা বিএনপির লিয়োজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।

বিএইচ