স্বচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা একটি প্রস্তাব
আপডেট: ২০১৫-১০-০১ ১০:০৬:০৮
সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন পদ্ধতির অনুশীলন গণতান্ত্রিক দেশে উত্তরণের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ অনুশীলনটি ধীরে ধীরে একটি দেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্র হয়ে দাঁড়ায়। তখন বাস্তব অর্থেই দেশটি গণতান্ত্রিক হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। অন্যদিকে, কোন
নির্বাচনে যদি জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত না হয় বা না হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তখনই ওই নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। প্রশ্নবিদ্ধ এ ধরনের নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হন তারা জনগণকে প্রকৃত অর্থে প্রতিনিধিত্ব করেন না। অর্থাৎ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করে চলমান
গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করা হয়। এতে ক্ষমতার যেমন অপব্যবহার করার সুযোগ বাড়িয়ে দেয়, তেমনি বিশ্বে দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে। তাই সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন পদ্ধতি একটি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। সাধারণ মানুষ যেমন নির্বাচন নিয়ে ভাবেন সঠিকভাবে সঠিক লোকটাকে ভোট দেয়ার জন্য, তেমনি রাজনীতিকরা ভাবেন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই নয়, সাধারণ মানুষও বিষয়টি নিয়ে হরহামেশাই নানা কর্মসূচির আয়োজন করে আসছে। সেসব আয়োজন যে সব সময় শান্তিপূর্ণ হয় তা নয়। অনেক সময়ই তা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, রাষ্ট্রের বা অন্যজনের প্রতি অনেকের নিজের কর্তব্য ও দায়িত্ব জ্ঞানটুকুও লোপ পায়। জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, হরতাল, অবরোধ ইত্যাদির কারণে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে শুরু করে জীবনহানি পর্যন্ত ঘটে থাকে। এসবের কোন খতিয়ান দেয়ার প্রয়োজন এখানে আছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই কমবেশি এ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছেন।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো যেতে পারে। বর্তমান সরকার আধুনিক প্রযুক্তিকে দেশের সব ক্ষেত্রে প্রয়োগের মাধ্যমে দেশকে দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের ক্ষেত্রেও যদি এটা করা যায় তাহলে তা সরকারের চিন্তা চেতনা এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ততাকেই গভীরতর করবে। দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য এটি হতে পারে আরেকটি প্রযুক্তি বিপ্লব। তবে একথা সত্য যে, প্রস্তাবিত পদ্ধতিটি বাস্তবায়নের জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের বিকল্প নেই।
আমরা জানি বর্তমান সরকার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাতিয় পরিচয়পত্র দিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকের ছবিসহ আঙুলের ছাপ নেয়া হয়। ভোটার তালিকা প্রণয়নের সময় হয় ভোটারের ছবিসহ আঙুলের ছাপ নিয়ে নিতে হবে, অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য দেয়া ছবি ও আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করতে হবে। ঐ ছবি ও আঙুলের ছাপ নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার ডাটা ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকবে। নির্বাচনের সময় ভোটার প্রথমেই তার আইডি কার্ডটি পোলিং কর্মকর্তার কাছে প্রদর্শন করবেন। এরপর ব্যালট পেপার নেয়ার জন্য ভোটারের আঙুল একটি যন্ত্রের ওপর রাখতে হবে। আঙুলের ছাপটি যন্ত্রে সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে মিলে যাবার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যালট পেপারটি প্রিন্ট হয়ে বের হবে। এরপর ব্যালট পেপারটি নিয়ে ভোটার ভোটকেন্দ্রের নিরাপদ গোপন স্থানে গিয়ে ব্যালটের যথাস্থানে সিল মারার পর পোলিং কর্মকর্তার সামনে রক্ষিত ব্যালট বাক্সে ব্যালট ঢুকিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করবেন। প্রযুক্তিটি নিশ্চিত করবে যে, ভোটারের ছবি ও আঙুলের ছাপের সঙ্গে কম্পিউটারে রক্ষিত তথ্যের মিল না হলে কোনক্রমেই ব্যালট পেপার প্রিন্ট হবে না। একজন ভোটারের আঙুলের ছাপে মাত্র একবারই ব্যালট পেপার প্রিন্ট হবে। পরবর্তীতে যতবারই কোন ভোটার আঙুলের ছাপ দিক না কেন, আর ব্যালট প্রিন্ট হবে না। এ সফটওয়্যারটি তৈরি করা সম্ভব। তবে একটি কথা না বললেই নয়, ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই সততা ও নিষ্ঠার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।
লেখক: সাবেক কূটনীতিক। সূত্র: মানবজমিন