লুব্রিকেন্টসের সম্ভাবনাকে ধরতে ব্যবসা সম্প্রসারণে যাচ্ছে লুব-রেফ বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২০-০৯-২৬ ১৫:০৫:৫৬


লুব্রিকেন্টস শিল্পে বাংলাদেশকে স্বনির্ভর করে বিদেশে রপ্তানী করার লক্ষ্যে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে চায় লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড। ইতিমধ্যে ‘বিএনও’ ব্র্যান্ড বাজারজাত করা এ কোম্পানিটি ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগে বেজঅয়েল রিফাইনারী প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে লুব্রিকেন্টসের বিপুল সম্ভাবনা দেখে ব্যবসা সম্প্রসারণে এ উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি খাতের এই কোম্পানিটি।

লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড ২০২৫ সালের মধ্যে লুব্রিকেন্টস বাজারের ২০ শতাংশ স্থান দখল করার লক্ষ্যে আধুনিক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে বলে জানান কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ইউসুফ।

শনিবার দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে বিসিক শিল্প নগরীতে কোম্পানির কারখানা প্রাঙ্গণে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, পেট্রোকেমিক্যাল ও লুব্রিক্যান্ট শিল্পে তাদের প্রায় চার দশকের অভিজ্ঞতা। স্থানীয় প্লান্টে বিশ্বমানের লুব্রিক্যান্ট প্রস্তুত করে এরইমধ্যে বাজারের আস্থা অর্জন করেছে লুব-রেফের ব্র্যান্ড ’বিএনও’।

তিনি আরও বলেন, এই খাতের বিপুল চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কর্ণফুলি নদীর তীরে একটি ইন্ড্রাষ্টিয়াল থিম পার্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সর্বপ্রথম বেজঅয়েল রিফাইনারী ও বিশেষায়িত বিটুমিন প্লান্ট ও এক লক্ষ টনের একটি টার্মিনাল প্রস্তুতের উদ্যেগ হাতে নিয়েছে।

এসব প্রকল্পের পুঁজি সংগ্রহের লক্ষ্যে পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে, যা ইতিমধ্যে বিন্ডিংয়ের জন্য অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সংগৃহীত টাকায় নতুন যন্ত্রপাতি কেনা, ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের খরচ খাতে ব্যয় করবে।

কোম্পানিটি ৩০ জুন ২০১৯ সমাপ্ত সমন্বিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী যথাক্রমে শেয়ার প্রতি নিট সম্পত্তি মূল্য (পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ) ৩১ টাকা ৯৩ পয়সা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পত্তির মূল্য (পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি ব্যতীত) ২৫ টাকা ৯৬ পয়সা। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২ টাকা ৮ পয়সা।

বিগত ৫ টি আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী কর পরবর্তী নীট মুনাফার ভারিত গড় হারে শেয়ারপ্রতি আয় (ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস) ২ টাকা ২৩ পয়সা।

লুব-রেফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহিত অর্থ দিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কোম্পানির লুব্রিকেন্ট উৎপাদন সক্ষমতা ও বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে। যার ফলশ্রুতিতে লুব্রিকেন্ট তেল আমদানি নির্ভরতা হ্রাস পেয়ে দেশের বৈদশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং দেশের শিক্ষিত ও প্রযুক্তি নির্ভর বেকার জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়ার মাধ্যমে লুব-রেফে জনগণের অংশীদার হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে লুব-রেফের কারখানা ঘুরে দেখা যায়, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের লুব্রিকেন্টস উৎপাদনে কাজ করছে ২৫০ জনেরও বেশি রসায়নবিদ ও প্রকৌশলী। প্রকল্পটিতে আধুনিক প্রযুক্তিতে অটোমোটিভ, ইন্ড্রাষ্টিয়াল ও মেরিন লুব্রিকেটিং পণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। লুব্রিকেন্টস শিল্পে উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ন্যানো ও নিনাস নামের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশে এটিই প্রথম বলে দাবি করেন কোম্পানিটির কর্তারা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় থাকা এ কোম্পানিটি মেটিরিয়াল রির্সোচ ও মানব সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভাবনমুখী লুব্রিকেটিং পণ্য উৎপাদন করে দেশের শিল্প উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানসহ রাজস্ব খাতে বড় অবদান রাখছে বলে দাবি করেন মোহাম্মদ ইউসুফ।

কোম্পানিটির এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের একটি কোম্পানির সঙ্গে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ন্যানো টেকনোলজী সমৃদ্ধ লুব্রিকেটিং অয়েল সামগ্রী উৎপাদন ও বিপণণ শুরু করেছে। তাছাড়া দেশের বৈদ্যুতিক খাতে অত্যন্ত আমদানি নির্ভর ট্রান্সফরমার অয়েল প্রস্তুত ও সেনটিফিউজিংয়ের মাধ্যমে প্রচুর বৈদশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে।