বিশ্ববাজারে স্বর্ণ ও রুপার দাম বড় ধরনের পতন
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২০-০৯-২৭ ১১:২৫:১১
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মহামারি করোনাভইরাসের প্রকোপের মধ্যে চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। দফায় দফায় দাম বেড়ে আগস্টের শুরুতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড দুই হাজার ৭৪ ডলারে উঠে যায়।
ইতিমধ্যে আবার, অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পর বিশ্ববাজারে স্বর্ণ ও রুপার বড় ধরনের পতনের মধ্যে পড়েছে। গত সপ্তাহে স্বর্ণের দাম সাড়ে চার শতাংশ এবং রুপার দাম সাড়ে ১৪ শতাংশের ওপরে কমেছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমানো এবং নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ডলার শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা চালানোয় স্বর্ণ ও রুপার এই দরপতন হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ৬ আগস্ট দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম রেকর্ড ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৭৪ হাজার ৬৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৬৫ হাজার ৩১৮ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
তবে ৭ আগস্ট থেকে পতনের কবলে পড়ে উত্থানে থাকা স্বর্ণের দাম। ১১ আগস্ট এসে বড় পতন হয় স্বর্ণের দামে। একদিনে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১১২ ডলার পর্যন্ত কমে যায়। এরপরও চলতে থাকে স্বর্ণের দরপতনের ধারা। যা গত সপ্তাহজুড়ে অব্যাহত থাকে।
এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম কমেছে ৭ দশমিক ৯৯ ডলার বা দশমিক ৪৩ শতাংশ। এই পতনের ফলে গত সপ্তাহজুড়ে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমেছে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে কমেছে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তবে বছরের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম এখনো ২৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি রয়েছে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম পতনের মধ্যে পড়ায় গত শুক্রবার দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৪৪৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪ হাজার ৮ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৭০ হাজার ৮৫৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৬২ হাজার ১১১ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৭৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে রুপার দামেও বড় উত্থান হয়। দফায় দফায় দাম বেড়ে আগস্টের শুরুতে রুপার দাম ২০১৩ সালের মার্চে পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। প্রতি আউন্স রুপার দাম ২৮ দশমিক ২৬ ডলার স্পর্শ করে।
তবে স্বর্ণের দরপতন শুরু হলে সেই পথ ধরে রুপাও। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রতি আউন্স রুপার দাম দশমিক ৩৫ ডলার কমে ২২ দশমিক ৮৬ ডলারে নেমে এসেছে। অবশ্য আগের চার কার্যদিবসে রুপার দামে আরও বড় পতন হয়েছে। ফলে গত সপ্তাহজুড়ে রুপার দাম কমেছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
বড় এই দরপতনের ফলে মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে রুপার দাম কমেছে ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে বছরের ব্যবধানে এখনো রুপার দাম ৩৪ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি রয়েছে।
বাজুসের সাবেক সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, “স্বর্ণের বাজার এখন একপ্রকার জুয়ার আখড়ায়” পরিণত হয়েছে। জুয়াড়িরা এখন স্বর্ণ নিয়ে খেলা করছে। স্বর্ণের দাম কখন কোন দিকে যাচ্ছে কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। এর শিকার হচ্ছে আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা। এই অস্থিরতার মধ্যে ব্যবসা করে আমরা শান্তি পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘দু’টি পদ্ধতিতে রিজার্ভ রাখা হয়। ডলার ও স্বর্ণ। ডলারের দরতপন হলে স্বর্ণের দাম বাড়বে। আবার ডলার শক্তিশালী হলে স্বর্ণের দাম কমে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে ডলার শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে। এখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার পেছনে এটি একটি কারণ। তাছাড়া স্বর্ণের দামের অস্থিরতার পেছনে চীনেরও হাত আছে।’
সান বিডি/নাজমুল/১১:২৫/২৭.০৯.২০২০