সবার প্রতি সুবিচার ইসলামের নির্দেশনা
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-২৮ ২২:৫৬:০৬
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
সুবিচারের নির্দেশনা : আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৪৭)
আলোচ্য হাদিসে জুলুমের প্রতি সতর্ক করা হয়েছে। আর ন্যায়বিচারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কেননা শরিয়তের অন্যতম মূলভিত্তি ইনসাফ ও ন্যায়বিচার। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! আমার প্রতিপালক ন্যায়বিচারের আদেশ করেছেন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৯)
অন্য আয়াতে আল্লাহ জুলুমকে ঈমানের ক্ষতিকর বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানের সঙ্গে জুলুমের সংমিশ্রণ করেনি; তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা আর তারাই সৎপথপ্রাপ্ত।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৮২)
উল্লিখিত আয়াত প্রমাণ করে, ঈমানের মৌলিক ও শাখা-প্রশাখা, গোপনীয় ও প্রকাশ্য বিষয়গুলো ন্যায়বিচারের পক্ষে এবং জুলুমের পরিপন্থী।
সবার জন্য সুবিচার : জুলুম ঈমানের পরিপন্থী। সুতরাং সর্বস্তরে জুলুম থেকে বিরত থাকবে। সে যেমন জুলুম করবে না অন্যের প্রতি, তেমনি নিজেরও প্রতি জুলুম করবে না সে।
নিজের প্রতি অবিচার : আল্লাহ, তাঁর রাসুল (সা.) ও যেসব বিষয়ে ঈমান রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো অস্বীকার ও অবিশ্বাস করা নিজের প্রতি সবচেয়ে বড় অবিচার। বিশেষত আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা সবচেয়ে বড় অবিচার। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৩)
এ ছাড়া ব্যক্তি আদেশ ও নিষেধ অমান্য করে, শরিয়ত অনুসরণ না করে এবং প্রকাশ্য গোপন পাপে লিপ্ত হয়ে নিজের প্রতি অবিচার করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছি, আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং অনুগ্রহ না করেন তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৩)
পরিবারের প্রতি সুবিচার : কোরআন হাদিসে পারিবারিক জীবনেও ব্যক্তিকে সুবিচার করতে বলা হয়েছে। পারিবারিক জীবনে সুবিচারের নানা দিক রয়েছে। যেমন—মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করা ইত্যাদি। পরিবারের প্রতি সবচেয়ে বড় সুবিচার হলো তাতে দ্বিন পালনের পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং সন্তানদের দ্বিনি শিক্ষায় শিক্ষিত করা।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো জাহান্নাম থেকে, যার জ্বালানি মানুষ ও পাথর; যাতে নিয়োজিত আছেন নির্মমহৃদয় ও কঠোরস্বভাব ফেরেশতারা। যাঁরা অমান্য করেন না তা, যা আল্লাহ তাঁদের আদেশ করেন। আর তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হন, তা-ই করেন।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
সমাজের প্রতি অবিচার : সমাজের প্রতি অবিচার অর্থাৎ সমাজের মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রম নষ্ট করা, তাদের কষ্ট হয় এমন কাজ করা এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার না দেওয়া। মহানবী (সা.) সব ধরনের সামাজিক অবিচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। বিদায় হজের ভাষণে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত (জীবন), তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সম্মান তোমাদের জন্য তেমনি পবিত্র যেমন পবিত্র আজকের এই দিন, এই মাস ও তোমাদের এই শহর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৭)
তিন প্রকার জুলুম : কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য থেকে তিন প্রকার জুলুমের ধারণা পাওয়া যায়।
১. এমন জুলুম যা আল্লাহ কখনো ক্ষমা করেন না। যেমন—শিরকের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করার পাপ ক্ষমা করবেন না। এটা ছাড়া অন্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে সে এক মহাপাপ করে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪৮)
২. আল্লাহ যেসব পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। সুরা নিসার ৪৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তিনি শিরক ছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।
৩. এমন জুলুম আল্লাহ যাকে বান্দার পারস্পরিক লেনদেনের ওপর ন্যস্ত করেছেন। তা হলো কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির অধিকার নষ্ট করলে আল্লাহ তা ক্ষমা করেন না, যদি না ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে। যেমন—ঋণ নিয়ে তা আদায় না করা।
জুলুমে সহযোগিতার ভয়াবহ পরিণতি : আল্লাহ জুলুমের সহযোগীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘ফেরেশতাদের বলা হবে—একত্র করো জালিম ও তার সহচরদের এবং তাদেরকে যাদের ইবাদত তারা করত আল্লাহর পরিবর্তে। তাদের পরিচালিত করো জাহান্নামের পথে।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ২২-২৩)।
আল্লাহ সবাইকে জুলুম পরিহারের তাওফিক দান করুন। আমিন।
সানবিডি/এনজে/১০:৫৫/২৮.০৯.২০২০