বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টিকারী মসজিদ টাঙ্গাইলে
আপডেট: ২০১৫-১২-২১ ১৭:২৫:৩৩
মসজিদের বাইরের নকশা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই কিংবা সৌদি আরব নয় বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনারের মসজিদ। রেকর্ড সৃষ্টিকারী এই মসজিদের গম্বুজের সংখ্যা ২০১টি এবং মিনারের উচ্চতা ৪৫১ ফুট। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে নির্মিত হচ্ছে মসজিদটি। সব মিলিয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করে গিনেস বুকে নাম লেখাতে চলেছে নির্মাণাধীন এই মসজিদ।
এ স্থাপনাটি বিশ্বের দরবারে মসজিদের দেশ বাংলাদেশকে নতুন করে তুলে ধরবে এবং এটি পরিদর্শন করতে দেশি-বিদেশি পর্যটক, ওলি আউলিয়ার আগমন ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন ২০১টি গম্বুজ বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে মসজিদটি নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশের ২০১ গম্বুজ মসজিদের পাশেই ৪৫১ ফুট (১৩৮ মিটার) অর্থাৎ ৫৭তলা উচ্চতার মিনারটি হবে বিশ্বের সবচাইতে উঁচু ইটের তৈরি মিনার।
বলে রাখা ভালো, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরি মিনারটি ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত কুতুব মিনার। যার উচ্চতা ২৪০ ফুট (৭৩ মিটার) এবং এর সিঁড়ি রয়েছে ৩৭৯টি। সুলতান মোহাম্মদ ঘুড়ির সেনাপতি ও প্রতিনিধি কুতুবউদ্দিন আইবেক ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে চৌহান রাজা পৃথ্বিরাজকে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং বিজয় স্মরণীয় করে রাখতে এ মিনার তৈরি করেছিলেন। তাজমহলের চেয়েও বেশি পর্যটক এটি পরিদর্শন করেন। আর বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনারটি মরক্কোর কাসাব্লাংকায় দ্বিতীয় হাসান মসজিদে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৬৮৯ ফুট (২১০ মিটার) অর্থাৎ ৬০তলা ভবনের সমান।
তবে এটি ইটের তৈরি নয়। প্রায় ১৫ বিঘা জমির উপর নির্মিত নির্মাণাধীন ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ কমপ্লেক্সে থাকবে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। মিহরাবের দুই পাশে লাশ রাখার জন্য হিমাগার তৈরি করা হবে। পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও মসজিদে ফ্যান লাগানো হবে সহস্রাধিক। মসজিদের ভেতরের নকশা ২০১টি গম্বুজের মধ্যে মসজিদের ছাদের মাঝখানে থাকবে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি বড় গম্বুজ এবং চারদিকে থাকবে ১৭ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ২০০টি গম্বুজ।
মূল মসজিদের চার কোনায় ১০১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট চারটি মিনার থাকবে। পাশাপশি আরো চারটি মিনার থাকবে ৮১ ফুট করে উচ্চতা বিশিষ্ট। ১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ ফুট প্রস্থের দ্বিতল বিশিষ্ট মসজিদটিতে একসাথে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের দেয়ালের টাইলসে অংকিত থাকবে পূর্ণ পবিত্র কোরআন শরীফ। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে মসজিদের দেয়ালে কোরআন শরীফ পড়তে পারবেন। আর মসজিদের প্রধান দরজা তৈরিতে ব্যবহার করা হবে ৫০ মণ পিতল। আজান দেয়ার জন্য মসজিদের দক্ষিণপাশে নির্মাণ করা হবে ৪৫১ ফুট উঁচু মিনারটি।
মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে আলাদা আলাদা পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবন। সেখানে থাকবে দুঃস্থ মহিলাদের জন্য বিনামূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পূণর্বাসনের ব্যবস্থা। নির্মণাধীন মসজিদের বর্তমান অবস্থা মসজিদের উত্তর-পশ্চিম পাশে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে দেশি-বিদেশি মেহমান থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থার জন্য। পশ্চিমে ঝিনাই নদী থেকে মসজিদ পর্যন্ত সিঁড়ি করা হবে এবং নদীর উপরে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। চারপাশে করা হবে দেশি-বিদেশি ফুলের বাগান। মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ভাই মো: হুমায়ুন কবির সার্বক্ষণিক এ মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন।
তিনি জানান, নিজেদের তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন অবস্থায়ই ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদে ইতিমধ্যে ঈদের নামাজ আদায় শুরু হয়েছে। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম তিনি আরো জানান, গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিনাই নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে নির্মিত মসজিদটির নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে। কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া খাতুন। প্রায় ৪৫০ শতাংশ জায়গায় নির্মাণাধীন মসজিদের কাজ ইতোমধ্যেই অধিকাংশ শেষ হয়েছে।
নির্মাণ করা হবে হ্যালিপ্যাড। আশা করা হচ্ছে, ২০১৬ সালের মধ্যে মসজিদের কাজ শেষ হবে এবং ২০১৭ সালের প্রথম দিকে পবিত্র কাবা শরিফের ইমামের উপস্থিতি ও ইমামতির মাধ্যমে মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। নির্মাতাদের প্রত্যাশা, শৈল্পিক স্থাপনা হিসেবে এ মসজিদটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের এক প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে। ইতোমধ্যেই নির্মাণাধীন অবস্থায় মসজিদটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য পর্যটক নির্মাণ কাজ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। এলাকার লোকজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রাণ-চঞ্চলতা।
এ মসজিদ তৈরির ব্যাপারে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যান ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান জনতা ব্যাংক এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের সভাপতি (সিবিএ) বীর মুক্তযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের ও মানবতার কল্যাণের জন্য তরুণ বয়স থেকেই কাজ করে এসেছি। সমস্ত প্রজেক্ট নির্মাণ কাজ শেষ করতে এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার দরকার হবে। আমার সাধ্য অনুযায়ী কল্যাণ ট্রাষ্টের মাধ্যমে সমস্ত প্রজেক্টের ৪০% এবং মসজিদের কাজ ৮০% সম্পন্ন করেছি। এই পর্যায়ে এসে আমার একার পক্ষে সব কাজ সম্পন্ন করতে কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি মসজিদ আল্লাহর ঘর নির্মাণ করাসহ মানব কল্যাণের জন্য সবার সহযোগিতার হাতকে প্রসারিত করে এই প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে এগিয়ে আসবেন।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস