অভিযোগের পাহাড়, ইসি বলছে ‘ভিত্তিহীন’

প্রকাশ: ২০১৫-১২-২৩ ১৪:৩৭:৩১


ECপৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন সহ্য করা হবে না, এমন হুঙ্কার দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু এ হুঙ্কার থোড়াই কেয়ার করেছেন অনেকেই। ইসিতে জমেছে অভিযোগের পাহাড়। মন্ত্রী, এমপিসহ ডাকসাইটে নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিলেও তদন্ত করে রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতিবেদনে বলছেন, এসব ‘অতিরঞ্জিত, ভিত্তিহীন’।

তফশিল ঘোষণার পর থেকে মন্ত্রী, এমপি, প্রার্থী ও সমর্থকের আচরণবিধি ও নির্বাচনবিধি ভঙ্গের হিড়িক পড়ে, যা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া অনেকেই ইসিতে এসে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। এ রকম ৭০টির বেশি অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য কমিশন ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।

এরই মধ্যে ডজন খানেক অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে এসেছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদেনে অভিযোগের সত্যতা পায়নি ইসি ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

পৌর নির্বাচনের আচরণবিধি মনিটরিং কমিটি প্রধান উপ-সচিব রকীব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ৭০টির বেশি অভিযোগ তদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছি। এর মধ্যে ১২/১৩টি অভিযোগের প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।’

‘যে দুয়েকটির সত্যতা পেয়েছে সেগুলো এখনো কম্পাইল করিনি, উল্লেখযোগ্য কিছু না। আরো কিছু প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।’ বলেন রকীব উদ্দিন।

সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘অভিযোগের প্রতিবেদন আসতে শুরু করেছে। যেসব কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিচ্ছে না বা পাঠাতে গড়িমসি করছে তাদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আমি কিছু প্রতিবেদন দেখেছি, তারা অভিযোগের সত্যতা পাচ্ছে না। তাদের বলেছি, কিছু না থাকলে (NILL) নিল লিখে পাঠাতে।’

সিইসি বলেন, ‘ইতোমধ্যে কয়েকজনকে বদলে দিয়েছি। আমরা সব সময় খেয়াল রাখছি, অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আসছে, যাচাই-বাছাই করে অ্যাকশন নিচ্ছি, বদলে দেব।’

ইসি কর্মকর্তারা জানান, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঝিনাইদহের মহেশপুর, ময়মনসিংহের ফুলপুর, চাঁদপুরের ছেংগারচর, কোটচাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ সদরসহ যে ১২/১৩টি পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিয়েছেন তাতে বিধিলঙ্ঘনের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ইসিতে চাটখিল পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর অভিযোগ আসে। ইসিতে এসে এ বিষয়ে প্রার্থীর পক্ষে অভিযোগ করে বিএনপি। পরে ঘটনাটির সত্যতা যাচাই করার জন্য আইন শাখার উপসচিব মো. মহসীনুল হকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করে কমিশন। গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে সার্বিক বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দেন।

অন্যদিকে, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ ফুলপুর পৌরসভায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। পরে ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয় ইসি। রিটার্নিং কর্মকর্তা অভিযোগ তদন্ত করে দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের সত্যতা পায়নি মর্মে প্রতিবেদন পাঠান।

এ বিষয়ে ফুলপুর রিটার্নিং কর্মকর্তা সুব্রত পাল জানান, ইসির নির্দেশনা পাওয়ার পর একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করা হয়। তদন্তে দুই মন্ত্রীর নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ কারণে মন্ত্রীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার প্রয়োজন হয়নি।

এ ছাড়া চাঁদপুরের ছেংগারচর পৌরসভায় রিটার্নিং কর্মকর্তা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সারোয়ারুল আবেদীনের মনোনয়ন বাতিল করে। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছিলেন। পরে তিনি আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফেরত পান।

প্রার্থিতা ফেরত পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ওই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। তদন্ত করে রিটার্নিং কর্মকর্তা ‘বিএনপি প্রার্থী মিথ্যেবাদী ও মনোনয়নপত্রে বানোয়াট তথ্য দিয়েছেন’ বলে প্রতিবেদন পাঠান। এ ছাড়া প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল বলেও উল্লেখ করেন প্রতিবেদনে।

সানবিডি/ঢাকা/এসএস