কোন মিউচুয়্যাল ফান্ড কিনবেন?
:: প্রকাশ: ২০২০-১১-১৬ ০৮:৩৬:২৩
বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মিউচুয়্যাল ফান্ডগুলো অবহেলিত থাকলেও বেশ কিছুদিন যাবত সে খাতটির ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইন্সুরেন্স সেক্টরের পাশাপাশি অনেক মিউচুয়্যাল ফান্ডের দর ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আগামীতে এ খাতের শেয়ারদাম আরও বাড়বে বলে অনেকেই ধারনা করছে। মিউচুয়্যাল ফান্ডগুলো অন্যান্য খাতের কোম্পানী থেকে অনেকটাই ভিন্ন। এগুলো কোন ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট নয়। তাই তাদের আয়ের প্রধান উৎস ডিভিডেন্ড, শেয়ার ট্রেডিং থেকে লব্ধ ক্যাপিটাল গেইন এবং বন্ড/এফডিআর সুদ। তাই ফান্ড সাইজ কত, পরিচালনাকারী এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী কিভাবে এ্যাসেট এলোকেশন করে, কোন কোন সেক্টর বা কোম্পানীর শেয়ারে কি পরিমাণ বিনিয়োগ করে, কত তাড়াতাড়ি প্রফিট তুলে নেয় বা লস ম্যানেজ করে এবং সর্বোপরি সার্বিক বাজার পরিস্থিতি কেমন, ইত্যাদি নানা ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে ফান্ডের পারফরমেন্স তথা আর্ণিংস পার ইউনিট বা ইপিইউ (EPU)। প্রচলিত কোম্পানীগুলোর তুলনায় মিউচুয়্যাল ফান্ডের হিসাব অনেকটাই ভিন্ন হওয়ার ফলে অনেক সাধারন বিনিয়োগকারী বিভ্রান্তিতে ভোগেন। তাঁরা কোন মিউচুয়্যাল ফান্ড কেনা যায় তা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন।
মিউচুয়্যাল ফান্ডগুলোর যত ভিন্নতাই থাকুক না কেন, অন্যান্য কোম্পানীর শেয়ারের মতই বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের পারস্পরিক প্রভাবে তার দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। উন্নত ক্যাপিটাল মার্কেটে মিউচুয়্যাল ফান্ডের অংশ অনেক বেশী থাকলেও নানা কারণে আমাদের দেশে মিউচুয়্যাল ফান্ডের বিকাশ সেভাবে ঘটেনি। ঢাকা স্টক একচেঞ্জে তালিকাভূক্ত ৩৬২টি কোম্পানীর মধ্যে মাত্র ৩৭টি মিউচুয়্যাল ফান্ড রয়েছে (১০.২২%), এবং মোট মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন (৫৩ হাজার কোটি টাকা) এর মধ্যে মিউচুয়্যাল ফান্ডের অংশ মাত্র ৪৭৮০ কোটি টাকা (মাত্র ১.২%)। অথচ বিনিয়োগে ঝুঁকি কমানো, সাধারন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং মার্কেটকে স্থিতিশীল করতে মিউচুয়্যাল ফান্ড বিশেষভাবে সহায়ক হয়।
মিউচুয়্যাল ফান্ডের মূল কনসেপ্টই হচ্ছে যে যেহেতু সাধারন বিনিয়োগকারীদের পক্ষে মার্কেট রিসার্চ করে উপযুক্ত কোম্পানী যাচাই বাছাই করা সম্ভবপর নয় সেহেতু এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানীর প্রফেশনাল ম্যানেজাররা বিনিয়োগকারীদের পক্ষে তা করবে। কিন্ত বাংলাদেশের অনেক ফান্ডের শেয়ার পোর্টফলিও দেখলেই বুঝা যাবে যে তারা সাধারন বিনিয়োগকারীর মতই ভাল মন্দ নির্বিশেষে নানা কোম্পানীর শেয়ার অতি উচ্চ দামে ক্রয় করে রেখেছে। তাহলে তাঁদের রিসার্চ আর অভিজ্ঞতার প্রমাণ কোথায়? তদুপরি তাঁদের ওয়েবসাইটে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রিসেন্ট তথ্য থাকে না। তবে বর্তমান সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন ফান্ডগুলোর ত্রৈমাসিক পোর্টফলিও রিপোর্ট প্রকাশ বাধ্যতামূলক করেছে। এতে তথ্যের ঘাটতি কিছুটা লাঘব হচ্ছে।
অন্যান্য সব খাতের মত মিউচুয়্যাল ফান্ড এর ক্ষেত্রেও ভাল মন্দ রয়েছে। এগুলো যারা ম্যানেজ করেন তাঁদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাও সমান নয়। ফান্ড চালুর সময় সার্বিক বাজার চিত্র কেমন ছিল সেটাও বড় ফ্যাক্টর। কারণ মার্কেট ডাউন থাকলে ফান্ডগুলো কম দামে শেয়ার সংগ্রহ করতে পেরেছে। তাই লাভ করতে হলে নানা ইন্ডিকেটরের সাহায্যে ফান্ডের গুনগত মান বুঝার সক্ষমতা অর্জনের বিকল্প নেই।
ডিএসইতে তালিকাভূক্ত ৩৭টি ফান্ডের পরিচালনায় জড়িত আছে মোট ৮টি এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী। তাদের পারস্পরিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, কর্মতৎপরতায় ও পারফর্মেন্সে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্যনীয়। কিছু ফান্ডের রিজার্ভের পরিমাণ অনুল্লেখ্য, বছর বছর ইপিএস এর পরিমাণ উঠানামা করে, অনেকবার ইপিএস Re-Stated করা হয়েছে, প্রদত্ত ল্ভ্যাংশ হারও খুবই কম এবং ক্রমশঃ তা নিম্নগামী, পোর্টফলিওতে প্রয়োজনীয় সব তথ্য নেই, ইত্যাদি। আবার কিছু ফান্ডের রয়েছে প্রত্যাশিত রিজার্ভ, ভাল ইপিইউ, ধারাবাহিকভাবে গ্রহণযোগ্য ডিভিডেন্ড প্রদান, পোর্টফলিওতে মৌল্ভিত্তি শেয়ার আধিক্য এবং ক্যাপিটাল এলোকেশনে ইকুইটি এবং ফিক্সড ইনকা্ম ইনুস্ট্রমেন্টের মধ্যে সুষম বন্টন। তাই বিনিয়োগকারীদের বিবেচনা করা উচিত ফান্ড পরিচালনার সাথে জড়িত বোর্ডের চেয়ারম্যান, সিএফও এবং অন্যান্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা, সততা, অভিজ্ঞতা এবং সর্বোপরি তাঁদের অতীত ট্র্যাক রেকর্ড, পোর্টফলিওতে কোন কোন শেয়ার আছে, সেসব শেয়ারের ক্রয়মূল্য ও বর্তমান বাজারমূল্য, এফডিআর বা বন্ড আছে কিনা ও থাকলে তার অনুপাত, ইউনিটপ্রতি NAV এর Cost Price এবং NAV এর Market Price এর মধ্যকার পার্থক্য, পেইড আপ ক্যাপিটাল এর তুলনায় রিজার্ভের পরিমাণ, গড় ইপিইউ এবং ডিভিডেন্ড ইল্ড, পি-ই রেশিও সহ নানা তথ্য।
তালিকাভূক্ত ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে কোনটি বিনিয়োগযোগ্য বা যোগ্য নয় তা নির্ধারণে প্রয়োজন মিউচুয়্যাল ফান্ড মূল্যায়নের উপযোগী বিভিন্ন সূচক বা ইনডিকেটরের সাহায্যে পারস্পরিক তুলনা। সেসবের মধ্য থেকে কতিপয় সূচকের সাহায্যে ১৮টি নির্বাচিত ফান্ডের তুলনা নীচের টেবিলে দেয়া হলো।
Company |
Paid Up Capital (Million) |
Reserve (Million) |
Average EPU (TK) |
Average Dividend Yield (%) |
July-Sept’20 Qtr EPU in TK (with unrealized gain) |
July-Sept’20 Qtr EPU in TK (excluding unrealized gain) |
P/E Ratio based on latest qtr EPU (Annualized & excluding unrealized gain) |
Year End |
1STPRIMF |
200 |
38.5 |
0.83 |
5.74 |
3.15 |
0.27 |
22.5 |
31 Dec |
ABB1ST |
2390.9 |
-427.2 |
0.26 |
2.8 |
1.56 |
0.18 |
9.72 |
3o June |
AIBL1STISL |
1000 |
134.8 |
0.72 |
9.56 |
1.01 |
0.04 |
56.25 |
31 March |
ATCSLGF |
617.86 |
0.2 |
0.77 |
9.81 |
0.67 |
-0.21 |
N.A. |
30 June |
CAPMIBBL |
668.53 |
-67.3 |
0.16 |
2.96 |
0.10 |
0.10 |
59.5 |
3o June |
GRAMEENS2 |
1823.98 |
995.5 |
1.07 |
7.35 |
3.07 |
— |
N.A. |
3o June |
ICBAGRANI1 |
982 |
-228.4 |
0.48 |
8.13 |
1.82 |
0.21 |
9.88 |
3o June |
ICBSONALI1 |
1000 |
137 |
0.69 |
8.73 |
2.13 |
0.35 |
6.29 |
3o June |
MBL1ST |
1000 |
171 |
0.72 |
9.3 |
0.53 |
0.25 |
8.1 |
31 March |
NCCBL1 |
1085.03 |
114.9 |
0.58 |
8.5 |
0.30 |
0.11 |
23.18 |
31 Dec |
NLI1ST |
503 |
50.6 |
1.08 |
9.46 |
1.48 |
0.21 |
17.86 |
3o June |
PF1ST |
600 |
115.7 |
0.49 |
7.79 |
0.13 |
0.13 |
17.12 |
3o June |
PRIME1ICBA |
1000 |
187.2 |
0.64 |
10.48 |
2.05 |
0.33 |
5.68 |
3o June |
RELIANCE1 |
605 |
42.5 |
0.71 |
9.29 |
1.75 |
0.26 |
13.17 |
3o June |
SEBL1 |
997.84 |
32.4 |
0.92 |
9.04 |
1.47 |
0.21 |
13.93 |
3o June |
SEMLIBBL |
1000 |
-104 |
-0.03 |
3.56 |
1.19 |
0.18 |
18.61 |
3o June |
TRUSTB1 |
3035.86 |
-405.9 |
0.48 |
2.63 |
1.30 |
0.14 |
12.68 |
3o June |
VAMLBD1 |
1043 |
22.7 |
0.44 |
6.2 |
0.32 (for whole year) |
N.A. |
30 Sept |
• কোম্পানীগুলোর সর্বশেষ ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন এবং ডিএসই ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রেশিওগুলো ক্যাল্কুলেশন করা হয়েছে।
উপরের টেবিলের ২য় ও ৩য় কলামে পেইড আপ ক্যাপিটাল ও রিজার্ভের পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে। রিজার্ভের গুরুত্ব এ কারণেই যে এটি বেশী থাকলে কোন বছরে প্রত্যাশিত নীট আয় কম হলেও ফান্ড/ কোম্পানী রিজার্ভ থেকে ল্ভ্যাংশ দিতে সক্ষম হয়। এ অনুপাত যত বেশী হবে ইউনিট হোল্ডারদের জন্য তা ততই ভাল। দেখা যাচ্ছে যে মিউচুয়্যাল ফান্ড খাতের ১৮টির রিজার্ভ ভিন্ন ভিন্ন। অনেকগুলোর রিজার্ভ পজিটিভ হলেও তা একেবারেই নগণ্য, আবার ৫টির রিজার্ভ নেগেটিভ ( ABB1ST, CAPMIBBL,
ICBAGRANI, SEMLIBBL,TRUSTB1)। সবচেয়ে ভাল রিজার্ভ হচ্ছে GRAMEENS2 এর।
৪র্থ কলামে ফান্ডগুলোর সব খরচ শেষে বিগত ৫ বছরের ইউনিটপ্রতি গড় আর্ণিংস পার ইউনিট (ইপিইউ) দেখানো হয়েছে। যেক্ষেত্রে ফান্ডের বয়স ৫ বছরের কম সেখানে প্রযোজ্য ৩ অথবা ৪ বছরের গড় ইপিইউ দেখানো হয়েছে। এ সূচকটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ফান্ড কতটা লাভজনক তা ইপিইউ দেখে বুঝা যায়। তাছাড়া, ইপিইউ সন্তোষজনক না হলে প্রত্যাশিত হারে ল্ভ্যাংশ দেয়ারও সুযোগ থাকে না। একমাত্র SEMLIBBLবাদে মিউচুয়্যাল ফান্ড খাতে বিবেচিত অন্য সবার ইপিইউ পজিটিভ দেখা যায়। তবে গড় ইপিইউ ১ টাকার উপরে আছে মাত্র ২টি ফান্ডের (GRAMEENS2, NLI1ST )। আর ০.৬০ টাকা থেকে ১ টাকার মধ্যে ইপিইউ রয়েছে ৮টি ফান্ডের (1STPRIMF, AIBL1STISL, ATCSLGF, ICBSONALI1, MBL1ST, PRIME1ICBA, RELIANCE1, SEBL1)।
৫ম কলামে প্রদর্শিত ডিভিডেন্ড ইল্ড বছর শেষে শেয়ারহোল্ডাররা গড়ে যে পরিমাণ ল্ভ্যাংশ হাতে পাচ্ছে তা দেখানো হয়েছে। ফলে এ সূচকটিও খু্ব গুরুত্বপূর্ণ। কোন ফান্ডের ইপিইউ অনেক ভাল হলেও তার শেয়ার দাম বেশী হলে ইল্ড কমে যায়। আবার অনেক কোম্পানী/ফান্ড ভাল লাভ করলেও লো পে আউট দিতে অর্থাৎ ডিভিডেন্ড কম ঘোষনা করতে পারে। অনেক ফান্ড আবার ইপিইউ কম হলেও রিজার্ভ থেকে নিয়ে ডিভিডেন্ড ঘোষনা করতে পারে। ফান্ডের সার্বিক আর্থিক অবস্থান, ইপিইউ, প্রাইস, ডিভিডেন্ড পলিসিসহ নানা ফ্যাক্টর দ্বারা ইল্ড প্রভাবিত হয়ে থাকে। তাই সেসব বিবেচনায় নিয়ে ডিভিডেন্ড ইল্ডকে দেখতে হবে। অধিকাংশ ফান্ডের ইয়ার ক্লোজিং ৩০ জুন। মন্দা শেয়ার বাজারের ফলশ্রুতিতে ইপিইউ কম বা নেগেটিভ থাকায় ২০২০ সালের জুন শেষে অধিকাংশ ফান্ড ভাল ল্ভ্যাংশ দিতে পারে নাই। তবে গত ৫ বছরের বা ক্ষেত্রবিশেষে কম বছরের গড় ডিভিডেন্ড ইল্ড বিবেচনায় মিউচুয়্যাল খাতের কোম্পানীগুলো মোটামুটি আকর্ষণীয়। PRIME1ICBA এর ইল্ড ১০ শতাংশের উপরে। তারপর রয়েছে ৬টি ফান্ড ( AIBL1STISL, ATCSLGF, MBL1ST, NLI1ST, RELIANCE1, SEBL1) যাদের ইল্ড ৯ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। ইল্ড ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে রয়েছে ৩টি ফান্ড (ICBAGRANI1, ICBSONALI1, NCCBL1)। আর ২টি ফান্ডের (GRAMEENS2, PF1ST) ইল্ড ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে। ২ থেকে ৪ শতাংশ ইল্ড নিয়ে সন্তোষজনক নয় এমন অবস্থানে আছে ৪টি ফান্ড (ABB1ST, CAPMIBBL, SEMLIBBL, TRUSTB1)।
৬ষ্ট কলামে ফান্ডগুলোর unrealized capital gain আয় হিসাবে বিবেচনা করে ত্রৈমাসিক ইপিইউ প্রদর্শিত হয়েছে। ৩ টাকার উপরে ইপিইউ আছে ২টি ফান্ডের (1STPRIMF, GRAMEENS2), ২ থেকে ৩ টাকার মধ্যে ইপিইউ আছে ২টি ফান্ডের (ICBSONALI1, PRIME1ICBA ), আর ১ থেকে ২ টাকার মধ্যে ইপিইউ আছে মোট ৮টি ফান্ডের। তবে ৩টি ফান্ডের (CAPMIBBL, NCCBL1, PF1ST) ইপিইউ বেশ কম- ৩০ পয়সা বা তার নীচে। তবে এ সূচকটি ব্যবহারের অসুবিধা হচ্ছে যে মার্কেট সূচক এর পতন হলে unrealized gain লোকসানে পরিণত হতে পারে। তখন প্রদর্শিত ইপিইউ কমে যাবে বা নেগেটিভ হয়ে পড়বে। তাই এর উপর বেশী আস্থা রাখার সুযোগ নেই, যদিও ফান্ডগুলো সেরুপ ইপিইউ আন-অডিটেড স্টেটমেন্টে অফিসিয়ালি ঘোষনা করে থাকে।
৭ম কলামে অন্যান্য আয়ের সাথে শুধুমাত্র realized capital gain যোগ করে ত্রৈমাসিক ইপিইউ প্রদর্শিত হয়েছে, যেটা ফান্ডের প্রকৃত আয় বলে আমি বিবেচনা করি। জুলাই-সেপ্টেম্বর’২০ প্রান্তিকে ২টি ফান্ডের (GRAMEENS2, VAMLBD1) ফিনান্সিয়াল স্টেট্মেন্ট তাদের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। বাকী ফান্ডগুলোর মধ্যে ৩০ পয়সার উপরে ইপিইউ আছে মাত্র ২টির (ICBSONALI1, PRIME1ICBA)। আর বেশীরভাগ ফান্ডের ইপিইউ ১০ থেকে ২৭ পয়সার মধ্যে। অবশ্য ATCSLGF এর ইপিইউ নেগেটিভ।
৮ম কলামে শুধুমাত্র realized capital gain হিসাবে ধরে প্রাপ্ত ইপিইউ এর ভিত্তিতে প্রাইস-আর্ণিংস (পি-ই) রেশিও প্রদর্শিত হয়েছে, যেটা ইউনিট ক্রয় বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। পি-ই রেশিও যত কম হবে তা বিনিয়োগের জন্য ততই ভাল। বিগত ১২ নভেম্বর ২০২০ তারিখের ক্লোজিং প্রাইসের ভিত্তিতে পি-ই রেশিও হিসাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রান্তিকে realized gain এর ভিত্তিতে ইপিইউ না পাওয়ার কারণে ২টি ফান্ডের (GRAMEENS2, VAMLBD1) পি-ই রেশিও বের করা সম্ভব হয়নি। উক্ত কলামে প্রদর্শিত তথ্য মোতাবেক ১০ এর নীচে পি-ই রেশিও আছে মাত্র ৫টি ফান্ডের (ABB1ST, ICBAGRANI1, ICBSONALI1, MBL1ST, PRIME1ICBA)। আর ২০ এর উপরে পি-ই রেশিও উঠে গেছে ৫টি ফান্ডের (1STPRIMF, AIBL1STISL, CAPMIBBL, NCCBL1, VAMLBD1)।
উপরে বিভিন্ন সূচক বা ইন্ডিকেটরের সাহায্যে মিউচুয়্যাল ফান্ড খাতের যে ১৮টি কোম্পানীর মধ্যে পারস্পরিক তুলনা করা হলো তাতে দেখা যায় যে কোন ফান্ডই সব সূচকে সর্বোত্তম অবস্থানে নেই। কোন ফান্ড কিছু সূচকে ভাল অবস্থানে থাকলেও অন্য সূচকে হয়তো খারাপ অবস্থানে রয়েছে। GRAMEENS2 NAV এর Cost Price এবং NAV এর Market Price এর মধ্যকার পার্থক্য এবং সেইসাথে রিজার্ভের বিবেচনায় সর্বোত্তম হলেও তার দামও বেশী। যদি সর্বশেষ প্রান্তিকের প্রকৃত ইপিইউ এবং দাম বিবেচনা করা হয় তবে সবচেয়ে ভাল হচ্ছে MBL1ST, PRIME1ICBA, ICBSONALI1 এবং ICBAGRANI1। আর NLI1ST, RELIANCE1 এবং SEBL1 নিঃসন্দেহে ভাল ফান্ড এবং তাদের দামও কিছুটা বেশী। তদসত্বেও সর্বশেষ প্রান্তিকে তাদের প্রকৃত আয় তেমন আকর্ষণীয় নয়। ঐসব ফান্ডের পোর্টফলিওতে বেশীরভাগ শেয়ার হচ্ছে মৌল্ভিত্তিসম্পন্ন এবং মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর – যেগুলোর দাম সাম্প্রতিক সময়ে তেমন বাড়েনি। তাই ভবিষ্যতে সেসব কোম্পানীর শেয়ারদাম বৃদ্ধি পেলে ঐ মিউচুয়্যাল ফান্ডগুলোরও ইপিইউ বাড়বে।
পরিশেষে বলবো যে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কোন মিউচুয়্যাল ফান্ড কিনবেন তা বিনিয়োগকারী তার নিজ পছন্দ ও অবস্থানের আলোকে ঠিক করবেন। এ মার্কেটে লাভ করতে হলে যথাযথভাবে যাচাই বাছাই এর বিকল্প নাই। যথার্থ গবেষনা করার পর বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়া বা সূচকের ভিত্তিতে কোন ফান্ডের শেয়ার ক্রয় যৌক্তিক বা ফিজিবল হলেই শুধুমাত্র সেখানে বিনিয়োগের চিন্তা করা উচিত।
সতর্কতাঃ বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে বর্ণিত ফান্ডগুলোর পারস্পরিক তুলনায় পাবলিক ড্যাটা ব্যবহার করা হয়েছে। আর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ফান্ডগুলো সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে তা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত যার সাথে বাস্তবের মিল নাও থাকতে পারে। তাই সেসব মন্তব্যের ভিত্তিতে কোন শেয়ার ক্রয় বা বিক্রয় থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে পরামর্শ দেয়া গেল। অন্যথায় কারো ব্যক্তিগত আর্থিক ক্ষতির জন্য কোনক্রমেই লেখক দায়ী থাকবে না।
শফিকুল ইসলাম
অতিরিক্ত সচিব (অবঃ)
Email: msislam201386@gmail.com