গরীব দেশের বোকা (!) পুলিশ
প্রকাশ: ২০১৫-১২-২৬ ১১:৫৬:৩৭
একটি উঁচু ভবন। চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ভেতরে অবস্থান করছে সন্ত্রাসীরা। গুলি বিনিময় হচ্ছে। চলছে নানান দেন দরবার, হুমকি-ধামকিও। এক পর্যায়ে সাহসী কোনো পুলিশ অফিসার জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসীদের পরাস্ত করেন।
এমনটা অনেক সিনেমাতেই দেখেছেন। কিন্তু বাস্তবে, তাও আবার ঢাকায়! হ্যাঁ, এমনটাইতো ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার সকালে। রাজধানীর মিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় হামলাটি সরাসরি দেখাচ্ছিল অনেক টেলিভিশন চ্যানেল। অন্তত সেখানে দেখে তাই মনে হচ্ছিল।
এরকম পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করতে হয় তার প্রশিক্ষণ ছিল ওই অভিযানে অংশ নেয়া কিছু সংখ্যক গোয়েন্দা পুলিশের। কিন্তু বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে কখনো তাদেরকে সেই প্রশিক্ষণের পরীক্ষা দিতে হয়নি। কীভাবে তারা সফল হলেন সেই পরীক্ষায়? অভিযানে অংশ নেয়া ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান সানোয়ার হোসেন শুক্রবার তার ফেইসবুক পোস্টে কিছুটা শেয়ার করেন সেই অভিজ্ঞতার কথা। সানবিডি২৪.কমের পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘গতকাল মিরপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় যে অভিযানটি পরিচালিত হয়েছে তা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং কৌশলগতভাবে অত্যন্ত জটিল। ‘হাই রিস্ক অপারেশন’ (এইচআরও) পরিচালনার প্রশিক্ষণ (ট্যাকটিকাল সাপোর্ট টিম -টিএসটি এবং ক্রাইসিস রিসপনস টিম -সিআরটি) আমাদের থাকলেও অভিজ্ঞতা একেবারেই শূণ্য। তবুও পরিকল্পনামাফিক সব করা হয়েছিল। এ ধরনের প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনামাফিক যেভাবে অভিযান পরিচালনা করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে তা করা হলেও ক্যাজুয়ালিটি খুব একটা এড়ানো যায় না। ।
কেননা, শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনের উৎপীড়ণ থাকলে আত্মরক্ষাই মূখ্য হয়ে ওঠে। পরিকল্পনা এবং এক্সেকিউশনে তার প্রভাব পড়ে। তবে দায়িত্ববোধের সাথে দেশপ্রেমের আবেগ জড়িয়ে গেলে সাফল্যের মাত্রা বেড়ে যায়। আবেগী বোকাদের (!) খুব বেশি অস্ত্র-গোলাবারুদ লাগে না। রক্তপাতহীন পথের সন্ধানে তারা হয় কৌশলী। তারা হাজার হাজার রাউন্ড গুলির বদলে শর্টগানের ডজনখানেক গুলি আর তিন থেকে চারটা গ্যাস বা সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেই কাজ সেরে ফেলে। গরীব দেশের বোকা (!) পুলিশ হিসেবে গতকাল আমরা কাজটা সেভাবেই সেরেছি।
গতকালের অভিযানের পরিকল্পনা সাজাতে সময় নিয়েছি ৪ ঘণ্টা (রাত ২- সকাল ৭টা) আর মূল অভিযান ছিল ২ ঘণ্টার (সকাল ৭টা-৯টা)। পরিকল্পনার ৭০ শতাং এক্সেকিউট করা সম্ভব হয়েছিল। কৌশলগতভাবে জঙ্গিদের মানসিক ও শারিরীকভাবে দুর্বল করে পরিকল্পনা মাফিক রক্তপাতহীন অভিযান সমাপ্ত হয়। বেসিকালি ইট ওয়াজ অ্যা সাইকোলজিকাল গেম।
প্যারিসে শত শত পুলিশের অ্যাসল্ট রাইফেলের হাজার রাউন্ড গুলির বদলে একজন মৃত জঙ্গি আর ঢাকার দুই ডজন পুলিশের ১২ রাউন্ড শর্টগানের গুলির বদলে ২ জন জীবিত (অক্ষত) জঙ্গি- পার্থক্য আছে কি?
ধন্যবাদ তাদের যারা নিজের দেশের পুলিশের সাফল্যে আনন্দিত হয়ে আমাদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন।
(অভিযানটি পরিচালনা করে ডিএমপি’র গোয়েন্দা পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। সহযোগিতা করে সোয়াট টিম। সাথে ছিল স্থানীয় থানা পুলিশ এবং রিজার্ভ পুলিশ)।’
ফেসবুক পোস্টে বোম্ব ডিসপোজাল টিমের এসি রহমতুল্লাহ চৌধুরী সুমন ও এসি জাহাঙ্গীর আলমের কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর একজন জঙ্গি সদস্যকে আটকের পর তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাত থেকে অভিযানে নামে পুলিশ। শাহ আলী থানাধীন মিরপুর ১ এর (রোড ৯, সেকশন এ) একটি ৬ তলা ভবনে রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালানো হয়। এলাকায় জঙ্গিরাও পাল্টা আক্রমন করে গ্রেনেড ছোঁড়ে। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ। সকাল ১১টার দিকে হাই প্রোফাইল এই অপারেশনে আনা হয় পুলিশের স্পেশাল টিম সোয়াত। সাথে যোগ দেয় র্যাব।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস