‘ব্ল্যাক বস’ তরমুজ চাষে বিঘায় লাভ লাখ টাকা
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২০-১২-১৬ ১৪:১২:০৪
যশোরের শার্শায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে কালো ও হলুদ ‘ব্ল্যাক বস’ জাতের তরমুজের চাষ। তরমুজ দেখতে কালো ও হলুদ। কাটলে ভেতরে টকটকে লাল। খেতেও সুস্বাদু। অসময়ে এই তরমুজ চাষ করে দুই মাসে প্রতি বিঘায় লাখ টাকা আয় করছেন অনেকে।
বর্তমানে শার্শার কৃষকরা এসব ফসলের পাশাপাশি উন্নত কৃষি-প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাভজনক ফসল চাষে ঝুঁকছেন। কালো ও হলুদ তরমুজে চাষে সফল হওয়ায় এর চাষ বাড়াতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। ব্ল্যাক বেবি ও হলুদ জাতের তরমুজ প্রথম চাষ হয় চুয়াডাঙ্গায়। এরপর জয়পুরহাট, মেহেরপুর ও ঢাকার ধামরাইয়ের চাষিরাও এ তরমুজ চাষ করেন। আর শার্শায় ‘ব্ল্যাক বস’ জাতটি চাষ করা হয়েছে।
কালো-হলুদ তরমুজ চাষ করে শার্শায় প্রথমবারের মতো চাষ করে সফল হয়েছেন উপজেলার উলাশী গ্রামের রেন্টু হোসেন, কাঠশিকড়া গ্রামের মোমিনুর রহমান ও সুবর্ণখালি গ্রামের আলি রেজা। তারা বলছেন, বারোমাসি জাতের কালো ও হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করে তারা সফল। কম খরচে বেশি ফলন ও বাজারে চাহিদা থাকায় তাদের দেখাদেখি অন্যরাও আগ্রহী হচ্ছেন।
শার্শার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলায় এই প্রথম ৪০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কালো ও হলুদ জাতের তরমুজের চাষ হয়েছে।
এক বিঘা ১২ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলক চাষে সফল হয়েছেন রেন্টু হোসেন। তিনি বলেন, ‘কালো ও হলুদ তরমুজ চাষে প্রথম ধাপে খরচ হয় লাখ খানেক টাকা। প্রথম পর্যায়ে খরচ একটু বেশি হয়। কারণ মাচা করতে হয়। একবার মাচা করলে তা অন্তত তিন বার সেটা ব্যবহার করা যায়। তরমুজগুলো সাধারণত তিন থেকে চার কেজি ওজনের হয়। খরচ-খরচা বাদে তিনগুণ লাভের আশা করছি। আমরা মাঠ থেকে প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকি। তরমুজ বছরে তিনবার ফলন পাওয়া যায়। প্রতি বিঘায় ফলন হয় ১০০-১২০ মণ।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তরুণ কুমার বালা বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে কাঠশিকড়া গ্রামের মোমিনুর রহমান এবং সুবর্ণখালি গ্রামের আলি রেজা ১৫ শতক করে জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এ তরমুজের চাষ করেন। বারমাসি তরমুজ আবাদ করে এলাকায় নতুক চমক সৃষ্টি করেছেন তারা।
আলী রেজা বলেন, ‘প্রথমবার লাগিয়ে ৯ হাজার টাকা খরচ করেছিলাম। আম্পানে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তারপরও ২৯ হাজার টাকা লাভ হয়। দ্বিতীয়বার আবার লাগিয়েছি। এর মধ্যে ৪৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। বাদ বাকি যা আছে তা ৫০-৫৫ টাকা বেচা-বিক্রির আশা করছি।’
মোমিনুর রহমান জানান, অন্য জাতের তরমুজের মৌসুম শেষ হওয়ার পর মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাটির ঢিবি তৈরি করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়ে এবং মাচা তৈরি করে কালো ও হলুদ জাতের তরমুজের চাষ করা যায়। মাত্র ৫৫-৬০ দিনেই প্রতিটি তরমুজ প্রায় আড়াই থেকে তিন কেজি পর্যন্ত হয়। এই জাতীয় তরমুজ বিক্রি করে বিঘা প্রতি জমিতে মাত্র দুই মাসে এক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। বেকার যুবকদের জন্য এটা একটা নতুন বার্তা। তারা এ চাষে এগিয়ে এলে তাদের হতাশার দিন শেষ হবে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, বর্তমানে ধান, গম, পাটসহ অন্য ফসল চাষে ফলন ভালো হলেও, কৃষকরা দাম পাচ্ছেন না। তাই কৃষি বিভাগ থেকে লাভজনক চাষের জন্য সব সময় উদ্বুদ্ধ করা হয়।
সানবিডি/নাজমুল