পেয়াজ চাষে ঝুঁকেছে রাজবাড়ীর ৬ হাজার তরুণ
জেলা প্রতিনিধি আপডেট: ২০২০-১২-১৭ ১১:৩২:৩৭
রাকিবুল ইসলাম রাফি: পেয়াজ চাষে ঝুঁকছে রাজবাড়ী জেলার প্রায় ৬ হাজার তরুণ। নিজেদেরকে বেকারত্বের জীবন থেকে বের করে আনতে আর ভালো দামের আশায় পেয়াজ চাষে তাদের এই আগ্রহ। নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করতে ও ফসলের উচ্চ মূল্য পাওয়ায় জন্য অধিক পরিমাণ জমিতে পেয়াজ আবাদের লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে তারা।
কেউ কেউ পেয়াজ থেকে অর্জিত অর্থ থেকে ভালো কিছু করার উদ্দেশ্যে সাথী ফসল হিসেবে পেয়াজ চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। তবে ফসল ঘরে তোলার সময় পেয়াজের আমদানি বন্ধ ও পেয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা। তারা পেয়াজ আবাদে কৃষকদের পরামর্শ গ্রহণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা পাবার আশা ব্যক্ত করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে।
প্রতিবছর সরবরাহ সংকটে সারাদেশে আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে পেয়াজের দাম। দেশে দীর্ঘ সময় আলোচনায় থাকে পেয়াজ। পেয়াজের যোগান দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে হিমশিম খেতে হয়। আর এই সময় দেশে পেয়াজের ঘাটতি পূরণে আর নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে এগিয়ে এসেছে এক ঝাঁক বেকার তরুণ।
প্রতি বছরই আচমকা ভারত পেয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় পেয়াজ সংকটের কবলে পড়ে দেশ। এনিয়ে সরকারের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা চাহিদা মোতাবেক পেয়াজ দেশেই উৎপাদন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিভিন্ন ফোরামে। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ কৃষি বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরকে পেয়াজের আবাদ বাড়ানোর নির্দেশও দেয়া হয়েছে। কৃষি দপ্তরগুলোর পেয়াজ চাষে কৃষিকাজে যুক্ত মানুষদের আগ্রহী করে তোলা ও পেয়াজের উচ্চ মূল্যের কারণে রাজবাড়ী জেলার ৫ টি উপজেলার তরুণ সমাজ কৃষকদের পাশাপাশি পেয়াজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছর রাজবাড়ী জেলার ৫ উপজেলা রাজবাড়ী সদর, পাংশা, কালুখালি, বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দে পেয়াজের আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে (২০২০-২১) পেয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। যা থেকে উৎপাদন হবে ১লক্ষ ৬০ হাজার ১৮৫ টন পেয়াজ।
রোপনের মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে কন্দ ও চারা করে পেয়াজ আবাদ শুরু করেছে পেয়াজ চাষিরা। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৮৭ ভাগ জমিতে পেয়াজের কন্দ ও চারা লাগিয়েছে তারা।
রাজবাড়ীর পাংশা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পেয়াজ আবাদের জন্য ইতিমধ্যে ছোট ছোট প্লট করে চারা উৎপাদন করেছে কৃষক। কিছু কিছু নার্সারিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করেছে পেয়াজের চারা। কন্দ লাগিয়ে আগাম যেসব পেয়াজ আবাদ করা হয়েছিল সেসব পেয়াজ উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছেন কৃষকরা। পেয়াজের সঠিক দাম থাকায় মটর, সরিষার পাশাপাশি কেউ কেউ সাথী ফসল হিসেবে পেয়াজ-রসুনেরও চাষ করেছেন।
কন্দ পেয়াজ চাষ করে উচ্চমূল্য পাওয়ায় খুশি ওই এলাকার কৃষক ফজলুল হক (৫৭)। তিনি বলেন, আমি রাস্তার ধারে ২৩ শতক জমিতে কন্দ পেয়াজ লাগিয়েছিলাম। প্রতি মন (৪০ কেজি) পেয়াজ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে, তাই আবার চারা পেয়াজের ফাঁকে ফাঁকে পানি কুমড়া লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই ২৩ শতক জমির পেয়াজ আমি ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আমাদের দাবি ফসল ঘরে উঠার সময় যেন বিদেশ হতে পেয়াজের আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়। না হলে আমরা পেয়াজের ন্যায্য মূল্য পাব না।
একই এলাকার তরুণ পেয়াজ চাষি শাকিল বলেন, বর্তমানে দেশে করোনা মহামারি আকারে চলছে। এই সময় সে রকম কোনো চাকরি পাচ্ছিনা। এভাবে তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না। তাই পেয়াজ চাষের মাধ্যমে কিছুটা স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টায় আছি। আশা করি পেয়াজের সঠিক দাম পাওয়া যাবে। আমাদের এলাকার অনেকেই এবার আমার মতো পেয়াজ চাষ করছে। আমি ৭৯ শতাংশ জমিতে পেয়াজ লাগবো নির্ধারণ করেছি। আর এ থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে একটা ব্যবসা করার চিন্তা আছে। সেইজন্যে আমার মতো এলাকার অনেকেই পেয়াজ আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছে।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোপাল কৃঞ্চ দাস জানান, চলতি বছর ও গত কয়েক বছরে পেয়াজের দাম বাড়ার কারণে সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে রাজবাড়ি জেলার ৫ উপজেলায় পেয়াজ চাষে কৃষকদের উদ্বুব্ধ করা হচ্ছে। আমাদের মাঠ কর্মীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ বছর প্রায় ৬ হাজার বেকার যুবক পেয়াজ চাষে আগ্রহী হয়ে পেয়াজের আবাদ করছে।
ইতোমধ্যে অনেক জমিতে পেয়াজের চারা লাগানোর কার্যক্রম চলছে। এবার আশাকরছি আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে পেয়াজের আবাদ হবে।
প্রণোদনার মাধ্যমে রাজবাড়ী অঞ্চলের ২ হাজার কৃষককে প্রতিজনকে এক বিঘা করে পেয়াজ আবাদের জন্য সার ও বীজ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমি এবার লক্ষ্য করেছি এবং মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এবার অনেক যুবক নতুন মাঠে নেমেছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য।
সানাবিডি/নাজমুল