বিএসইসির হস্তক্ষেপে বন্ধ হলো সরাসরি তালিকাভুক্তি
চুক্তি না করেই আইসিবি ক্যাপিটালের নাম ব্যবহার করলো লা মেরিডিয়ান
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২০-১২-১৯ ০৯:৩০:১৪
বহুল আলোচিত বেস্ট হোল্ডিং লিমিটেডেকে ( ‘লা মেরিডিয়ান’ ) সরকারি তকমা লাগিয়ে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তরিৎ সিদ্ধান্তের কারণে এই জায়গা থেকে সরে এসেছে ডিএসই। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে গুরতর অভিযোগ তুলেছে সরকারের একমাত্র বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের সাথে চুক্তি না করেই নাম ব্যবহার করেছে লা মেরিডিয়ান।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন
Sunbd News–ক্যাপিটাল নিউজ–ক্যাপিটাল ভিউজ–স্টক নিউজ
সরকারি না হয়েও সরকারি তকমা লাগানোর পর এবার উঠেছে ইস্যু ম্যানেজার নিয়োগে গুরুতর অভিযোগ। আইসিবি ক্যাপিটালের পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রতিবাদে বলা হয়েছে, তারা বেস্ট হোল্ডিং লিমিটেডের (লা মেরিডিয়ান) ইস্যু ম্যানেজার না। ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সাথে কোন ধরণের চুক্তি হয়নি আইসিবি ক্যাপিটালের।
এদিকে আলোচিত কোম্পানিটিকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব ড. মো: ফেরদৌস আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কে এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে অবকাঠামোগত প্রকল্প অর্থায়নে সরকারি ও বেসরকারি তফসিলি ব্যাংকের ইক্যুইটি এক্সপোজার এ তারল্য সৃষ্টি ও ঝুঁকি হ্রাসের উদ্দেশ্যে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি সংক্রানত গত ৮ সেপ্টেম্বরের পত্রটি স্থগিত করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখার অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সানবিডিকে বলেন, অর্থমন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যস্থা গ্রহণ করবে।
সূত্র মতে, ডিএসইর ২০১৫ সালের লিস্টিং রুলসে ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে সব কোম্পানির শেয়ার অফলোড করার সুযোগ রাখা ছিল। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি) ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর নির্দেশনার মাধ্যমে সরকারি কোম্পানি ছাড়া অন্যসব ক্ষেত্রে ডাইরেক্ট লিস্টিং নিষিদ্ধ করেছে। আর এই নিষিদ্ধের মধ্য দিয়েই বেসরকারি হোটেল লা মেরিডিয়ানকে পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা করা হচ্ছিল। সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও এটাকেই এখন সরকারি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া ও পরবর্তীতে শেয়ারে রুপান্তর করায়, এমনটি করার চেষ্টা চলছে। অথচ হোটেলটি নির্মাণ ও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে পুরো বেসরকারিভাবে। আর সরকারি ইন্টারকন্টিনেন্টাল (বিডি সার্ভিসেস) চলছে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। যেটা নিয়ে কারও প্রশ্ন নেই। যে কারনে বিএসইসি লা মেরিডিয়ানকে সরকারি মানতে নারাজ।
কোম্পানিটিতে বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানা ৫২ দশমিক ০১ শতাংশ। এছাড়া ৪৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ মালিকানা রয়েছে প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের। লা মেরিডিয়ানে সরকারি ৪ ব্যাংকের মালিকানা রয়েছে ২৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এরমধ্যে সোনালি ব্যাংকের ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকের ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ ও রূপালি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ । বেসরকারি খাতে সরকারি ব্যাংকের এ জাতীয় অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্যই অর্থমন্ত্রী ওই চিঠি দিয়েছিলেন।
নিজে ঋণ নিয়ে পরবর্তীতে শেয়ারে রুপান্তর করা লা মেরিডিয়ান থেকে আবার ৩টি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৯৪৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৬৩১ কোটি ২২ লাখ টাকা (এরমধ্যে প্রিমিয়াম ৬৩০ কোটি ৩১ লাখ টাকা) বিনিয়োগ করা হয়েছে বেস্ট সার্ভিসেস লিমিটেডে। যে কোম্পানিটি সর্বশেষ অর্থবছরে মাত্র ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আয় করেছে। আর বাকি দুটি কোম্পানি ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত কোন আয় করেনি।
এছাড়া ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে বোনাস শেয়ার ব্যতিত অন্যকোন উপায়ে বিগত ২ বছরের মধ্যে শেয়ার ইস্যু না করার জন্য ডিএসইর বিধান রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটির ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে নগদে প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৪৭২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ও নগদ ব্যতিত অন্যভাবে ১৮৯ কোটি ৩২ লাখ টাকার মূলধন বাড়ানো হয়েছে। এসত্ত্বেও লা মেরিডিয়ানকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য একটি গ্রুপ উঠে পড়ে লেগেছে।
লা মেরিডিয়ানের বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন ৮৭১ কোটি টাকা। কোম্পানিটির সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ি শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা। এই ইপিএস নিয়ে কোম্পানিটির শেয়ার অফলোড করতে চায় সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা করে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারে সর্বনিম্ন ৫৫ টাকা প্রিমিয়াম নিতে চায়। যেখানে এরচেয়ে ভালো ব্যবসার হোটেল কোম্পানিগুলোর শেয়ার তলানিতে।
এদিকে প্রতিটি ৬৫ টাকায় শেয়ারবাজারে ৪ কোটি ৩৫ লাখ শেয়ার অফলোড করতে চায় লা মেরিডিয়ান। যা হবে মোট শেয়ারের ৫ শতাংশ। এটা ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের নিয়ম বর্হিভূত। এই লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ শেয়ার অফলোডের কথা বলা আছে। এছাড়া ডাইরেক্ট লিস্টিং রুলসে দর নির্ধারনের প্রক্রিয়া বলা আছে। সে হিসাবে দর কত হবে, তা আগেই নির্ধারণ করে দেওয়ার সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনের পরে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ লিস্টিংয়ের অনুমোদন দেয়। আর ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে টাকা তোলার বিষয় না থাকায়, স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদনের মাধ্যমে মূলত কার্যক্রম শুরু হয়। তাদের অনুমোদন সাপেক্ষে ১টি কোম্পানির ডাইরেক্ট লিস্টিং হয়ে থাকে।
এই লিস্টিং হওয়ার পরে লেনদেন শুরু হওয়ার পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদেরকে তাদের শেয়ার বিক্রি (অফলোড) করতে হবে। এক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ শেয়ার অফলোড করতে হবে। তবে বিদ্যমান কোন শেয়ারহোল্ডার তার ধারণ করা থেকে অর্ধেকের বেশি বিক্রি করতে পারবেন না।