শ্যামল দত্তকে মসজিদে খুৎবা শোনার আমন্ত্রণ জানানো হোক
আপডেট: ২০১৫-১২-২৯ ০০:২৯:০৯
শ্যামল দত্তের বক্তব্য নিয়ে কদিন থেকে সবাই ব্যস্ত। আগে গাফ্ফার চৌধূরী আর আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য নিয়েও এমন সমস্যা হয়েছিলো। আমি ভাই উনাদের বক্তব্যে সমস্যার কিছু দেখিনা। সমস্যা দেখি যারা উনাদের প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচন করেছে তাদের রূচি এবং দৈন্যতায়। আপনি ইঞ্জিনিয়ারকে দিবেন রোগীর সার্জারী করতে আর ডাক্তারকে দিবেন আপনার ব্রিজ বানাতে আবার কমপ্লেইনও করবেন – তা কি করে হয়? যদি লোকবলের অভাবই হয়, আর এই কজন মানুষ দিয়েই সব করতে হয়, তাহলে তাদের অল রাউন্ডার বানান; সেইভাবে ট্রেইনিং দিন।
আপনি যাকে তাকে যেকোন বিষয়ের উপর কথা বলতে ডাকতে পারেন না। যাকে ইসলাম এবং টেরোরিজম বিষয়ে বলতে বলছেন, তার সে যোগ্যতা আছে কি না এ বিষয়ে কথা বলার সেটাতো আপনাকে আগে দেখতে হবে। অবশ্য হবে না যদি সেটা কমেডি শো হয়; মানে লোক হাসানোর উদ্দেশ্যে ডাকা হয়। সে উদ্দেশ্যে যত পাগলাটে, অজ্ঞ এবং অবুজ শিশুদের আনবেন, তত আসর জমবে। অন্যথায় যাকে ইসলাম এবং টেরোরিজম বিষয়ে কথা বলার জন্য ডাকবেন তাকে হয় ইসলাম মেনে জীবন ধারন করতে হবে (সে জানে কোন জিনিসে কতটুকু চ্যালেঞ্জ), না হয় টেরোরিস্ট হতে হবে (সে বলতে পারবে ইসলামে এবং টেরোরিজমের মিল বা অমিল কোথায়), আর না হয় এ বিষয়ে যথেষ্ঠ গবেষণার রেকর্ড থাকতে হবে।
যেমন, সৈয়দ সামসুল হক যদি বলেন যে আজানের চেয়ে কাকের কা কা বেশি ভালো লাগে, আমি আপত্তি করি না। উনি সবার কথা বলেন নি; নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। আর উনি আজান এবং কা কা শব্দ দুটোরই দৈনিক শ্রতা। উনার কানে কোনটার শব্দ কেমন লাগবে এটা উনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। তবে শ্যামল দত্ত যখন মসজিদের খুৎবা নিয়ে কথা বলেন, তখন আমার একটা প্রশ্ন জাগে- উনি কোন কোন মসজিদের খুৎবা নিয়মিত শুনেছেন? কোন কোন ঈমাম এ ধরনের বক্তব্য দেন? একটা বিষয়ে একজন দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন মানুষের জেনারালাইজড কনক্লুশনে আসতে হলেতো একটা সারভে থাকতে হবে সেই স্টেমেন্টর পক্ষে। শিক্ষত এবং দায়িত্ববান কোন লোক কোভাবেই এর দায় থেকে মুক্তি দেয়া পেতে পারেন না। শ্যামল দত্ত যদি মসজিদে যেয়ে খুৎবা না শুনে থাকেন, তাহলে কোথায় উনি নিয়মিত খুৎবা শুনেছেন যার ভিত্তিতে এমন একটা স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন?
এটা অন্য সাংবাদিকদের উপরও বর্তায়। আমেরিকায় যখন রিপাবলিকান ফ্রন্ট রানার ডানল্ড ট্রাম্প উল্টা পাল্টা বলেন অন্যদের নিয়ে, তখন সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে। বাংলাদেশের সবকিছুই মনে যেনো নিছক স্টেটমেন্ট। কোন রকম চ্যালেঞ্জ ছাড়াই যে যার মতো করে যা খুশি বলছে।
সে যাই হোক, একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি- বাংলাদেশে ইন্টার রিলেজিয়াস রিলেশন খুব কম। কেমন একটা ভয় ভয় আর ঘৃণা ঘৃণা সম্পর্ক। পুজা বা বড়দিনের মতো অনুষ্ঠান আসলে মুসলমানদের একটা টেনশন থাকে কিভাবে ছেলেপুলেদের সেখান থেকে সরায়ে রাখা যায়। আর ঈদের সময় অন্য ধর্মের মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া হয় আমি জানি না কারন আমি কেবল মুসলমানদেরই এত কােছ থেকে দেখেছি।
এতে যে সমস্যাটা হয় তা হলো মানুষেরা জ্ঞানী না হয়ে আন্ধা মানুষে পরিনত হয়। আমার নিজের কথাই বলি। আমি যখন এন ওয়াই ইউতে ইন্টার কালচারাল কমিউনিকেশন কোর্স নেই তখন আমাদের একেকজনকে একেকটা বিষয়ে প্রেজেন্টশন দেয়া হয়। একটা পপ কুইজে হিন্দু ধর্মের দশটি প্রশ্নের মধ্যে চারটিতেই ভুল উত্তর লিখেছিলাম। অথচ হিন্দু ধর্ম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। কোথায় আছি আমরা? যেদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হিন্দুইজম, সেখানেতো প্রতিটি ছেলেময়ের হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে যথেষ্ট ধারনা থাকতে হবে। শুধু দেশের না, দেশের চারপাশের সব দেশের ধর্ম এবং কালচার থাকতে হবে তাদের নখদর্পনে। তবেইতো তারা লিড নিতে পারবে।অন্যথায় দেশ হিসাবে কিভাবে সামনে আগাবে?
সে যাই হোক, শ্যামল দত্তের বক্তব্যে ফিরে আসি- বাংলাদেশের মসজিদের খবর জানিনা। আমেরকার মসজিদে বিধর্মীরাও আসে। তারা বক্তব্য শুনে। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, বাংলাদেশে এমন কোন মসজিদের ঈমাম কি আছেন যিনি মিডিয়ার মাধ্যমে তার মসজিদে শ্যামল দত্তকে প্রতি জুমায় খুৎবা শোনার আমন্ত্রণ জানাবেন? আর রিপোর্টাররা এটার ফলোআপ জানতে চাইবেন উনার কাছে। উনি সে আমন্ত্রণ গ্রহন করলেন কিনা, না করলেন সেটাও আমারা জানতে চাই। আমরা জানতে চাই, কে কার প্রতিনিধিত্ব করে। যার প্রতিনিধিত্ব করা হবে তার সম্পর্কেতো ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। উনি যেহেতু মসজিদ বিষয়ে ইন্টেরেস্টেড উনাকে মসজিদ বিষয়ের দায়িত্বই না হয় দেয়া হোক। আর এ বিষয়ে দায়িত্বের আগে তো উনাকে মসজিদ এবং এর কালচার সম্পর্কে জানতে হবে।
(ফলোআপ দেখার অপেক্ষায়- MJ)
সূত্র: লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে। মতামতের জন্য সানবিডি দায়ী নয়।