পুঁজিবাজারে ২১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে নীতিমালা করছে বিএসইসি
:: প্রকাশ: ২০২১-০১-০৭ ০০:১৩:৩৩
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়্যাল ফান্ডের ব্যবস্থাপকদের কাছে অলস পড়ে আছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। অলস এই টাকা বিনিয়োগে নীতিমালা করছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি)। আজ বৃহস্পতিবার এই টাকা বিনিয়োগে একটি নির্দেশনা আসতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, এই ফান্ডের নাম হবে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবলিস্টমেন্ট ফান্ড অব বিএসইসি’। প্রাথমিকভাবে এর আকার হবে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এর আকার আরও বড় হতে পারে। কারণ সব কোম্পানির তথ্য এখনো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আসেনি। অন্যদিকে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর তথ্য এখানে যুক্ত করা হয়নি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিএসইসিতে ২০ হাজার ৯৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার তথ্য একত্রিত করা হয়েছে। এর মধ্যে নগদ ৯৫৬ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বরের বাজার দর অনুযায়ী বোনাস শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৯৮৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এই টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য একটি নীতিমালা করছে বিএসইসি। আজ বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি হতে পারে।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন
Sunbd News–ক্যাপিটাল নিউজ–ক্যাপিটাল ভিউজ–স্টক নিউজ
বিএসইসি মনে করছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টাকা সকল কোম্পানি, ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পড়ে আছে। এগুলোকে একত্র করে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে। তবে কোন দাবিদার যদি গঠিত ট্রাস্টে আবদেন করে, তাহলে তাদেরকে ফেরত দেওয়া হবে। এই সুযোগ সবসময় বহাল থাকবে।
বিএসইসি’র সূত্র মতে, পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে এই ফান্ড গঠন করা হচ্ছে। ফান্ড পরিচালনায় ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হবে। এর মধ্যে বিএসইসি থেকে চার জন,ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ,সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডে (সিসিবিএল) থেকে একজন করে প্রতিনিধি থাকতে পারে। তবে এটি চূড়ান্ত নয়। জনমত জরিপের পর বিস্তারিত প্রকাশ করবে বিএসইসি।
এ বিষয়ে এএফসি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব এইচ মজুমদার সানবিডিকে বলেন, নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে কাজ করছে। ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কারণ ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বিনিয়োগকারীরা।
তিনি আরও বলেন, বিএসইসি অবন্টিত লভ্যাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে, নিশ্চয়ই এটি অনেক ভালো খবর। তবে এই টাকা সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে পারলে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক ভালো কিছু হবে। কোনো কারণে সঠিকভাবে বিনিয়োগ না হলে কষ্টের সীমা থাকবে না।
এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ সানবিডিকে বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একটি ফান্ড গঠন করার কাজ করছে বিএসইসি। এই ফান্ডগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারে পড়ে আছে। এগুলোকে একত্র করে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলিস্টমেন্ট ফান্ড অব বিএসইসি’ নাম দেওয়া হবে। এই ফান্ড মার্কেট মেকারের ভূমিকা পালন করবে।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, সব কোম্পানিতেই বিতরণ না হওয়া লভ্যাংশের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিন যাবত কোম্পানিগুলোর আলাদা একটি হিসাব জমা রাখা আছে। সেগুলোকে একত্র করে পুঁজিবাজারে সার্পোট দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে।
নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে অবন্টিত লভ্যাংশের তথ্য চেয়ে একটি চিঠি ইস্যু করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। সেখানে প্রতিষ্ঠান তিনটিকে পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য চেয়ে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিতে বলা হয়। পরবর্তীতে ডিএসই কোম্পানিগুলোকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিষ্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ৭ দিন সময় বাড়িয়েছে বিএসইসি। এর পর ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. কাউসার আলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বছর শেষে আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। পরবর্তীতে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় পর্ষদের ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদন করেন শেয়ারহোল্ডাররা। অনুমোদনের ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে এই লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছাতে হয়। অনেক সময় শেয়ারহোল্ডারদের ব্যাংক হিসাব বা ঠিকানা ভুল থাকলে লভ্যাংশ যায় না। এই জন্য কোম্পানিগুলো আলাদা একটি হিসাব খুলে এগুলো জমা রাখে। যাতে করে পরবর্তীতে কোন শেয়ারহোল্ডার অভিযোগ করলে তা পূরণ করা যায়। এই পরিমাণ অনেক হয়েছে বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে এটি একটি কার্যকর অবস্থা তৈরি করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ১১ ধারার ২ উপ-ধারা অনুযায়ী বিএসইসি তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে যে কোন সময়, যে কোন তথ্য চাইতে পারে কমিশন।