আমিনুলের জন্য তিস্তার চর এখন আশির্বাদ

জেলা প্রতিনিধি আপডেট: ২০২১-০২-০২ ১৭:৪০:৪৫


বাবার রেখে যাওয়া ভিটেমাটিসহ নিজের সামান্য যা ছিল তাও তিস্তার গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে প্রায় ৩০ বার তাকে বাড়ির ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে। তবুও তিনি তিস্তা বুক থেকে দূরে কোথাও যাননি। সব হারিয়ে কামড় দিয়ে ধরে ছিলেন নদীর কোলে। সেই তিস্তা এখন আশির্বাদ হয়ে উঠেছে আমিনুলের জন্য।

দির্ঘ দিন পরে রংপুরের গংগাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলায় তিস্তা নদীতে ভিটে মাটি হারা চরাঞ্চলের শত শত মানুষ ঘুড়ে দাড়িয়ে আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখছে।

তিস্তা নদী বেষ্টিত লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারি ও সদর আর রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া পীরগাছা উপজেলার তিস্তার চরের মাটিতে কৃষকেরা ফলিয়েছে নানান ধরনের ফসল।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সরওয়ারুল আলম জানান, রংপুর-লালমমনিরহাটের তিস্তার চরগুলোতে এবার ১৪ হাজার ৯৫৩ হেক্টোর জমিতে ৩২ ধরনের ফসলের চাষ হয়েছে। চরে বসবাসরত কৃষকেরা সকাল থেকে সন্ধেবলা পর্যন্ত চরের জমিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, মিষ্টি আলু, মরিচ, গম, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, ডাল, সরিষা, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, শিম, পেঁপে, ধনে পাতা, লাল শাক, পুঁই শাক, মুলা শাকসসহ নানা ধরনের সবজিতে সাদা বালু চর সবুজ হয়ে উঠেছে।

তিস্তার ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে গংগাচড়া উজেলার বিজয়বাধে আশ্রয় নেওয়া আমিনুল ইসলাম জানান, আমার ভিটেবাড়ি ৩০ বার নদীতে ভেঙ্গেছে। এখন আমি চরের জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে পরিবার নিয়ে ভালোই আছি। সবজি বিক্রি করে বেশ কিছু টাকা লাভ হয়েছে। এবার সেই টাকা দিয়ে ১০ শতাংশ জমি কিনেছি। সেই জমিতে আগামী বছর বাড়ি করার ইচ্ছা আছে বলে জানান তিনি।

মহিপুর চরের কৃষক এনাম জানান, আগে এই চরে ছিলো বালু, এখন পলি জমে ছাষাবাদের উপযোগী হয়েছ। এবার, আলু ভুট্টা, তামাক লাগিয়েছি। আগাম আলু বিক্রি করে বেশ লাভোবান হয়েছি। বেশ ভালো ভাবে চলছে সংসার। নদীর চরে বছরের ছয় মাস পানিতে টইটুম্বুর থাকে। বাকি সময়টা উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে বাকি ছয় মাস চলতে আমাদের।

তিনি বলেন, আয় রোজগারের জন্য আগে অন্য কোথাও যেতে হতো। এখন নদীতে জেগে ওঠা চরে চাষাবাদ করি। যা উৎপাদন হয় তা দিয়েই চলে। এখন অন্য কোথাও রোজগারের জন্য যেতে হয় না।

গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষিটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, চর এক সময় ধুধু মরুভুমি ছিলো। সেই চরে কৃষকরা যেভাবে ফসল ফলাচ্ছেন তা বিষ্ময় তৈরি হয়েছে! চরাঞ্চলের কৃষকদের এটা বড় সাফল্য।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি কর্মকর্তা খোন্দকার মেসবাহুল ইসলাম জানান, চরে জেগে ওঠা জমিতে চাষ করে সেখানকার কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভোবার হয়েছে। আমরা চরাঞ্চলের কৃষকদের জন্য কাজ করছি। আমরা তাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা দিয়ে আসছি।