বাণিজ্যিক পরিবর্তনে কৃষিতে ভরসা বেড়েছে পশ্চিমাঞ্চলে
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-০২-০৮ ১৫:২৮:৪৭
দেশের পশ্চিমাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন বাড়ছে। এ অঞ্চলে গত পাঁচ বছরে ধানের উৎপাদন ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে পেয়াজ, মটর, সরিষা উৎপাদন। এর মাধ্যমে আবার কৃষির ভরসা হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল।
বিভিন্ন জটিলতার কারণে আগে পশ্চিমের জেলাগুলোয় বছরে মাত্র দু-বার ধান চাষ কিংবা একবার আখ চাষ হতো। বাকি সময় জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। কিন্তু ধান ও আখ উৎপাদনে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকেরা বিকল্প হিসেবে পেয়াজ, সরিষা ও বিভিন্ন ডাল জাতীয় খাদ্য উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
ন্যায্যমূল্য না পাওয়াই হতাশ কৃষক ৩ দশমিক ৬ শতাংশ জমিতে ধানের চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এতে ধানের উৎপাদন কমেনি, বরং ২ শতাংশ বেড়েছে। আর আমন ধানের চাষ বেড়েছে প্রায় ৩০০ শতাংশ।
একই সঙ্গে গত চার বছরে পশ্চিমাঞ্চলের ৫টি জেলায় পেয়াজের উৎপাদন এলাকা ৩৮৬ শতাংশ, ডাল ৩২ শতাংশ, তেলজাতীয় শস্য ৩০ শতাংশ উৎপাদন এলাকা বেড়েছে। পাশাপাশি মাছের ঘেরের পাশে সবজি চাষ ও গৃহ পশু পালন করার প্রবণতাও পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে ব্যাপক হারে বাড়ছে।
সম্প্রতি পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাগুরা ও ফরিদপুরে কৃষির পরিবর্তন নিয়ে জরিপ চালায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দেশীয় কৃষি গবেষণা সংস্থা।
গত এক বছরে একাধিকবার পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় গিয়ে কৃষির এই বদল চোখেও পড়েছে। ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাগুরা ও কুষ্টিয়া জেলায় পেয়াজ ও ধান চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ বাড়তে দেখা গেছে। বিশেষ করে কমলা, বড়ই, আম, লিচু এবং সেই সাথে মাছের ঘের ও পুকুরপাড়ে সবজির আবাদ সহজেই নজর কাড়ছে।
পশ্চিমাঞ্চলের এই কয়েকটি জেলার বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, অনেকে বেকারত্বের চিন্তা বাদ দিয়ে ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন ভালো দাম পাওয়ার কারণে। সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকসহ দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে তাঁদের সহযোগিতা করছে।
কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কয়েক জন কর্মকর্তার সাথে এব্যাপারে কথা বলে জানা যায় তারা কৃষি উন্নয়নে মোট পাঁচটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। বেশ কয়েক প্রকার ধানের উদ্ভাবিত জাতগুলো আরও জনপ্রিয় করতে তারা সামনে কিছু উদ্যোগ নেবে। এই সকল এলাকায় ফসলের পাশাপাশি বিভিন্ন পুষ্টিকর ফল ও খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো তাদের মূল লক্ষ্য বলেও জানান তারা।
ইতিপূর্বে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েক বছর ধরে ধান ও বিভিন্ন তেল জাতীয় ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষক কিছুটা হতাশ ছিলেন। তবে তাঁরা বসে থাকেননি। ফসল চাষের ক্ষেত্রে জাত নির্বাচনে কৃষক যৌক্তিক ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন।
পশ্চিমাঞ্চলের কৃষক সবচেয়ে বেশি চাষ করতেন ধান ও আখ। কিন্তু গত পাঁচ বছরে ধানের দাম ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। ইউরিয়া সারের দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ। কৃষি-মজুরি বেড়েছে ২৪ শতাংশ। সেচের খরচ বেড়েছে ৯ শতাংশ। ফলে বোরো ধান বিক্রি করে কৃষকের মুনাফা কমে গেছে। পাঁচ বছর আগে যেখানে মোট চাষের জমির ৫১ শতাংশে আখ ও ধানের চাষ হতো, বর্তমানে তা ৩৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
তবে কৃষকের চিন্তাভাবনার অনেক পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন শুধু পরিবার কিংবা নির্দিষ্ট অর্থের জন্য নয় নিজেদের আর্থিক পরিবর্তন আনতে বাণিজ্যিক ভাবে কৃষিকে নিয়ে চিন্তা করছেন এবং অধিক লাভজনক বিভিন্ন ফসল ও ফলের চাষ করছেন।