এবার মানিকগঞ্জে ৪৩ হাজার টন গাজর উৎপাদনের টার্গেট
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০২-১৯ ১৫:০৭:৫৬
চলতি অর্থবছরে উপজেলার ১১৭৮ হেক্টর জমি থেকে গাজর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার টন।
অনুকূল আবহাওয়া আর পরিচর্যায় গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায়। পাইকারি বাজারে চাহিদা ও ভালো বাজারদর থাকায় চলতি মৌসুমে গাজর চাষাবাদে লাভবান সিংগাইর উপজেলার কয়েক’শ কৃষক।
অল্প খরচে অধিক মুনাফা হওয়াতে গাজর চাষে আগ্রহী উঠছেন উপজেলার কৃষকরা। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের বাড়তি নজরও রয়েছে সিংগাইরের গাজরের দিকে। ঢাকার কাঁচাবাজার থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এ অঞ্চলের গাজর রপ্তানি হচ্ছে বলে দাবি কিছু সবজি ব্যবসায়ীর।
সিংগাইর উপজেলার অধিকাংশ মাটি বেলে-দোঁআশ। এই মাটি গাজর চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত। এ চাষাবাদের জন্য আশ্বিন-কার্তিক মাসে জমিতে বীজ বপন শুরু করেন কৃষকেরা। পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যেই বিক্রয় উপযোগী হয়ে ওঠে গাজর। বিক্রয় উপযোগী হওয়ার আগেই জমি থেকে গাজর কিনে নেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
বাড়তি মুনাফার আশায় অনেক কৃষক আবার নিজ উদ্যোগেই রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে বিক্রি করেন উৎপাদিত গাজর। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত জমি থেকে গাজর সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করেন কৃষক ও কৃষি শ্রমিকেরা। এরপর নির্ধারিত জায়গায় গাজর থেকে মাটি বা ময়লা পরিষ্কার করে বস্তায় ভরে পাঠানো হয় রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।
গাজর উৎপাদনে কৃষকদের পাশাপাশি ভাগ্যবদল হয়েছে এলাকার কয়েক’শ কৃষি শ্রমিকেরও। প্রতিদিন সাড়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা মুজুরিতে কাজ করেন তারা।
সিংগাইর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকার সবজি ব্যবসায়ীদের পদচারণায় এখন মুখরিত সিংগাইর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। তারা সবাই গাজর কিনতেই আসেন।
সিংগাইর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এখানকার ১১০২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ৩৮ হাজার ৫৭১ টন গাজর। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১১০ হেক্টর জমি থেকে সংগ্রহ করা হয় ৪২ হাজার ১৮০ টন গাজর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১১৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ৪২ হাজার ৭২৫ টন। চলতি অর্থবছরে ১১৭৮ হেক্টর জমি থেকে গাজর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার টন।
চান্দহর ইউনিয়নের মানিকনগর এলাকার কৃষক আমজাদ আলী শেখ বলেন, ‘গাজরের বীজ বপনের পরপরই পাইকারি ক্রেতারা জমি থেকে গাজর ক্রয় করে দেখভাল করেন। কেউ কেউ পাইকারকে না দিয়ে নিজ উদ্যোগে গাজর বিক্রি করেন। এতে তুলনামূলকভাবে লাভ বেশি হয়।’
এক বিঘা জমিতে গাজর চাষাবাদে ১৯ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন ও বাজারদর স্বাভাবিক থাকলে ওই জমি থেকেই ৬৫-৭০ হাজার টাকার গাজর বিক্রি করা যায় অনায়াসে। তবে পাইকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করলে দাম আরেকটু কম পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।
জয়মন্টপ ইউনিয়নের পশ্চিম ভাকুম এলাকার কৃষক মেহের উদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে চাহিদা কিছুটা কম থাকলেও ঢাকার পাইকারদের কাছে সিংগাইরের গাজরের বেশ চাহিদা রয়েছে। এ কারণে স্থানীয় কৃষকরা এখন আগ্রহ নিয়েই গাজর চাষ করছেন।’
এছাড়া অল্প খরচেই, মাত্র আড়াই থেকে তিন মাস সময়ের মধ্যে অন্যান্য ফসলের তুলনায় গাজর চাষাবাদে মুনাফাও বেশি বলে জানান এই কৃষক।
মানিকনগর এলাকায় আলাপকালে ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান বলেন, ‘গাজর ক্রয়ের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সবজি ব্যবসায়ীরা ভিড় জমান সিংগাইর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। রাজধানীর সঙ্গে উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে সিংগাইরের গাজরের প্রতি পাইকারদের নজরও বেশি। এ পণ্য কম খরচে পরিবহণ করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া যায়।’
এখানকার গাজর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হয় বলে দাবি এই ব্যবসায়ীর।
গাজর পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক কাইয়ুম হোসেন বলেন, ‘সারা বছর অল্প টাকায় কৃষি শ্রমিকের কাজ করতে হয়। তবে গাজরের মৌসুমে শ্রমিকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মুজুরিও একটু বাড়ে। জমি থেকে গাজর উঠানো এবং পরিষ্কার করার জন্য বাড়তি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।’
গাজর উঠানো ও পরিষ্কারের কাজে কষ্ট একটু বেশি হলেও পারিশ্রমিক বেশি পাওয়ায় স্থানীয় কৃষি শ্রমিকেরাও গাজর মৌসুমে লাভবান বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. টিপু সুলতান স্বপন বলেন, ‘গাজর চাষাবাদের জন্য জাপানের অরেঞ্জ কিং জাতের বীজ নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করে বপন করেন স্থানীয় কৃষকেরা। এক বিঘা জমিতে স্বাভাবিকভাবে ১৫০ থেকে ১৬০ মণ গাজরের ফলন পাওয়া যায়। তবে ফলন ভালো হলে ২২০ থেকে ২৩০ মণ গাজর পাওয়া যায়।’
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গাজর রপ্তানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি তিনিও লোকমুখে শুনেছেন, তবে তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই।